স্বজনদের আহাজারি চলছে। কবর খোঁড়াও প্রায় শেষ। শুধু অপেক্ষা লাশের। পোস্ট মর্টেম শেষে লাশ আসতে দেরি হচ্ছে। এই সান্ত্বনা নিয়ে পথ চেয়ে সবাই বসে আছে। কিন্তু সন্ধ্যায় খবর এলো যার জন্য অপেক্ষা সে মরেনি। বেঁচে আছে। রোববার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের নলুপাড়ায় বড় বোনের বাসার সামনে থেকে কিশোর সুজন মিয়া (১৫)কে ডেকে পাশের বালুর মাঠে নিয়ে ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে ও ধারালো চাকু দিয়ে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় সুজনকে। সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায় বলে জানতে পারে সুজনের স্বজনরা। এদিকে মোবাইল ফোনের খবরে সোমবার সকাল থেকেই সুজনের পরিবারের লোকজনদের মধ্যে শোকের মাতম শুরু হয়। খবর দেয়া হয় পুলিশকেও। দুপুরের পর থেকে কবর খোঁড়ার প্রস্তুতিও চলে। কিন্তু লাশ কখন আসবে জানতে গিয়ে জানা গেল ‘মৃত’ খবরটি ছিল ভুল বোঝাবুঝি। সুজন আসলে মরেনি, সে বেঁচে আছে। অন্য একজনের মৃত্যুর খবর ভুলবশত তার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। পুলিশও ঘটনাস্থলে গিয়ে গণমাধ্যমকে সুজন নিহত হওয়ার খবরটি দেয়। রাতে পুলিশ মামলার প্রক্রিয়া করতে গিয়ে জানতে পারে মৃতের খবরটি ছিল ভুল বোঝাবুঝি। সুজন শহরের বাবুরাইল ঋষিপট্টি এলাকার সিরাজ মিয়ার ছেলে। সে শহরের নিতাইগঞ্জে পাটের পুরাতন ছালা মেরামতের কাজ করতো। সুজনের বড় বোন আখি আক্তার জানান, শহরের নলুয়াপাড়ায় তার ভাড়া বাসায় রোববার রাতে কাজ শেষে বেড়াতে আসে সুজন। রাত ১২টার দিকে স্থানীয় ডেনিম মিয়ার ছেলে সানি মিয়া তাকে রাস্তা থেকে ডেকে পাশের বালুরমাঠে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে ক্রিকেট খেলার ব্যাট ও ধারালো চাকু দিয়ে পেট, হাত ও পাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে রক্তাক্ত করে ফেলে রাখে। রাতেই প্রথম ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরে মে মারা যায়। আখির দেয়া তথ্যমতে বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান ও এস আই আজগর হোসেনও গণমাধ্যমেক জানান, তারা সুজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। আর ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা ক্রিকেট ব্যাট ও চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সোমবার সন্ধ্যার পর পুলিশ মামলা সংক্রান্ত অগ্রগতি করার সময়ে জানতে পারে সুজন আদৌ মারা যায়নি। ঘটনাস্থলে যাওয়া এস আই আজগর হোসেন জানান, সকালে আমরা মৃত্যুর খবর পেলেও সন্ধ্যার পর মামলা সংক্রান্ত কাজে অগ্রগতি করতে গিয়ে জানতে পারি সুজন মারা যায়নি। ওই খবরটি ছিল একেবারেই ভুল। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান জানান, সকালে সুজনের পরিবার আমাদের মৃত্যুর খবর দেয়। খবর পেয়ে আমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ খবর নেই ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলি। যেহেতু তখন সুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছিল সেহেতু লাশ আনার পর মামলার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সন্ধ্যায় জানতে পারি মারা যায়নি। সুজনের চাচাতো ভাই সুমন মিয়া জানান, সকালে আমরাও খবর পেয়েছিলাম সুজন মারা গেছে। এজন্য খবর খোঁড়াসহ সকল প্রস্তুতিও নেয়া হয়। কিন্তু বিকালেও সুজনের লাশ না আসায় আমরা আবারও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুজনের সঙ্গে থাকা ছোট বোন খুকু মনির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন সে জানায় সুজন মারা যায়নি। তার শরীরে অপারেশন (অস্ত্রোপচার) করা হবে। সোমবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে অপর একজন রোগী মারা যায়। তখন সঙ্গে থাকা পরিবারের লোকজন মনে করেছিল সুজন মারা গেছে। আসলে এটা ভুল বোঝাবুঝি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.