পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কর্তা শিক্ষক হতে পারেন। কর্ত্রীও একই পেশায় যেতে পারেন। কিন্তু অন্য সদস্য তথা ছেলেমেয়ে কিংবা আত্মীয়স্বজনদের ভিন্ন পেশাতেই সম্পৃক্ত হতে দেখা যায় বাংলাদেশের পরিবারগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে। বাবা-মা শিক্ষক হলে সন্তানরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা অন্য কোনো পেশায় নাম লেখান। বাবার পেশার পথে সন্তানরাও হাঁটেন। আর ছেলেমেয়েদের স্ত্রী-জামাতারাও সেই পথেই হাঁটছেন। এমন দৃষ্টান্ত বিরল। তবে এমনই এক চিত্র দেখা যায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ফরিদ উদ্দিন সরকারের পরিবারে। যিনি পেশাগত জীবনে ছিলেন শিক্ষক। তার পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে সবাই শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। শুধু তাই নয়, ছেলেদের স্ত্রী ও মেয়ের জামাইরাও রয়েছেন একই পেশায়। এখানেই শেষ নয়। যে পরিবারগুলোর সঙ্গে আত্মীয়তা করেছেন ফরিদ উদ্দিন সরকার তারাও শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত। রূপকথার গল্পের মতো হলেও এটাই বাস্তব সত্যি। আর সেই অবাক করা বাস্তব সত্যের ছবি নান্দনিকভাবে তুলে ধরেছেন বরেণ্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও নন্দিত উপস্থাপক হানিফ সংকেত। শুক্রবার রাত আটটার বাংলা সংবাদের পর বাংলাদেশ টেলিভিশনে যারা শেকড় সন্ধানী জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ দেখেছেন বিষয়টি নিশ্চয়ই তারা উপলব্ধি করেছেন। অনুষ্ঠানটি দেখা শেষে অনেক দর্শককে এবারের পর্বে উঠে আসা এই শিক্ষক পরিবারের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় মেতে থাকতে দেখা গেছে। কেউ কেউ এ-ও বলেছেন, এক পরিবারের সবাই শিক্ষক। আবার তার স্বজনরাও! এ কী করে সম্ভব! মূলত ফরিদ উদ্দিন সরকারের পরিবারের প্রত্যেকেই নিজেরা শিক্ষা গ্রহণ করে অন্যকেও শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার ব্রত নিয়েছেন। এ প্রতিবেদনটির মাধ্যমে নিজে শিক্ষিত হয়ে অন্যের শিক্ষার দায়িত্ব নেয়া ও সমাজকে আলোকিত করার বার্তাই উঠে এসেছে। এদিকে এটির পাশাপাশি এবারের ইত্যাদিতে অন্য পর্বগুলোও ছিল দারুণ উপভোগ্য। এবারের আয়োজনটি ধারণ করা হয়েছিল দেশের সবচেয়ে প্রচীন যশোর কালেক্টর ভবনের সামনে। অনুষ্ঠানের শুরুর দিকেই দেখানো হয় যশোরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন। সে সঙ্গে জেলার গদখালীর ফুল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিয়ে প্রতিবেদনটি ছিল মনোমুগ্ধকর। যেখানে এমনও তথ্য মিলেছে, দেশের ফুল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ ৭৫ শতাংশই হয় গদখালী থেকে। ইত্যাদির এই পর্বের আরেকটি আকর্ষণীয় প্রতিবেদন ছিল ফ্রান্সের প্যালেস অব ভার্সাইর উপর করা প্রতিবেদনটি। একসময় যেখানে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত অবস্থান করেছেন। এটি অনেক দর্শকের কাছে ছিল নজরকাড়া ও ভালোলাগার পর্ব। এবারের ইত্যাদিতে পরিবেশিত যশোরের সন্তান কবি ড. মনিরুজ্জামানের লেখা ও কিংবদন্তি শিল্পী আবদুল জব্বারের কণ্ঠে গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছো কভু’ গানটি হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। এছাড়াও ২০০৩ সালে ইত্যাদিরই মাধ্যমে উঠে আসা শিল্পী আকবরের ‘হাতপাখার বাতাসে’ গানটিও ছিল উপভোগ্য। অন্যদিকে অনুষ্ঠানের আরেকটি উপভোগ্য বিষয় ছিল, যশোরকে নিয়ে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের লেখা ও আলী আকবর রূপুর সুর করা দলীয় সংগীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন, যা করেছেন যশোরের অর্ধশতাধিক স্থানীয় নৃত্যশিল্পী। শুধু তাই নয়, বরাবরের মতো এবারের ইত্যাদিতে ছিল মনোজ্ঞ দর্শকপর্ব। যশোরকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে হাজার হাজার দর্শকের মাঝ থেকে ৪ জন নির্বাচন করা হয়। এবারের দর্শক পর্বের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন যশোরেরই কৃতী সন্তান খ্যাতিমান গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। তারই লেখা ৪টি জনপ্রিয় গানের উপরে সাজানো ছিল দ্বিতীয় পর্ব। যা ছিল বেশ উপভোগ্য। ইত্যাদির নিয়মিত পর্ব হিসেবে এবারও আকর্ষণীয় ছিল যথারীতি মামা-ভাগ্নে, নানী-নাতি ও চিঠিপত্র বিভাগ। বিশেষত বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস ও তীক্ষ্ন নাট্যাংশ- খাদ্য যন্ত্রণা, সুন্দর মন-সুন্দর দেশ, বর্তমান নাটকের হালচাল, কথার বিড়ম্বনা, প্রার্থীর প্রার্থনা ও নিয়োগকর্তার বিস্ময়, বিক্রি বাড়ানোর ডিজিটাল পন্থা, মেরুদণ্ডহীন শিক্ষিত সমাজসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নাট্যাংশ দর্শক উপভোগ করেছেন। বরাবরের মতো এবারও চমৎকার একটি ‘ইত্যাদি’ উপহার দেয়ার জন্য এর জনক হানিফ সংকেত ব্যাপক ধন্যবাদের দাবিদার। আর দীর্ঘ বছর ধরে অনুষ্ঠানটিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাওয়ার জন্য অভিনন্দন কেয়া কস্মেটিকস্ লিমিটেডকে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.