বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করে আসছে। উপযুক্ত জমি, অবকাঠামো, জ্বালানি-বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সুযোগের ঘাটতি থাকায় এত দিন বিদেশি বিনিয়োগ আসার হার ছিল খুবই কম। গত কয়েক বছরের পরিকল্পিত উন্নয়নপ্রক্রিয়ার কারণে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তাই সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই আসার ক্ষেত্রেও কিছুটা গতির সঞ্চার হয়েছে। গত অর্থবছরে রেকর্ড বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে। এ অবস্থায় টাটাসহ ভারতের ১০টি শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল ঢাকায় এসেছে। তিন দিনের সফরকালে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা খতিয়ে দেখবে। আশা করা যায়, ভারতীয় প্রতিনিধিদলের এই সফর বাংলাদেশে শিল্পায়নের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
বাংলাদেশের ছোট্ট ভূখণ্ডে ১৬ কোটি মানুষ। কৃষিতে এত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। তাই প্রতিনিয়ত বেকারত্বের হার বাড়ছে। অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে মানুষ বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু শিল্পায়নের জন্য উন্নত অবকাঠামোসহ যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন, সেসব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আগে কোনো সরকারই তেমন মনোযোগ দেয়নি। ফলে বিদেশে দেন-দরবার, রোড শো করেও দেশে পর্যাপ্ত বিদেশি বিনিয়োগ আনা যায়নি। কয়েক বছর ধরে অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু, চার লেন সড়ক নির্মাণসহ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যমান দুই সমুদ্রবন্দর উন্নয়নের পাশাপাশি পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, বিদ্যুৎ উত্পাদন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাওয়া, ১০০টি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ এমন অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা শিল্পায়নের জন্য খুবই জরুরি। এই কারণে দেশীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বিদেশি উদ্যোক্তারাও আকৃষ্ট হচ্ছেন। তার পরও দ্রুত শিল্পায়নের পথে বাংলাদেশে এখনো অনেক বাধা রয়ে গেছে। নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় সময়ের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক যে সূচক রয়েছে তাতে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো তলানির কাছাকাছি। এর অন্যতম কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অদক্ষতা-অসহযোগিতা। অভিযোগ আছে, অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করতে এসেও ফিরে গেছে শুধু এসব কারণে। তাই শিল্পায়নের স্বার্থে দ্রুত দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। ভারতের শীর্ষস্থানীয় যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে শিল্পায়নের আগ্রহ নিয়ে এসেছে, তারা এ-জাতীয় কোনো জটিলতার মুখোমুখি হবে না, সে ব্যাপারে তাদের আশ্বস্ত করতে হবে।
শুধু ভারত নয়, সাম্প্রতিক সময়ে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দেশের ব্যবসায়ীরাই বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রদর্শন করেছেন। এই আগ্রহ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের শিল্পায়নে গতি ত্বরান্বিত করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে পরিকল্পিত, আন্তরিক ও গতিশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভারত কিংবা চীনের মতো দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। সেই ঘাটতি মোকাবিলায় এসব দেশের বিনিয়োগ ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.