বাংলাদেশ জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বী কোন্ দেশ হতে পারে? খুব বেশি চিন্তা করার প্রয়োজন হবে না। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ আফগানিস্তানই হতে পারে টাইগারদের জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বী। আফগান ক্রিকেটের অগ্রযাত্রা অন্তত তাই বলে। মাঠেও প্রমাণ রেখে তারা বাংলাদেশকে এরই মধ্যে ওয়ানডে ক্রিকেটে দুই বার হারিয়েছে। তাও এ দেশের মাটিতে। সেই আফগান ক্রিকেটাররা এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগেও (বিপিএল টি-২০) চমক দেখাচ্ছে। বিপিএলের শুরু থেকে রাজত্ব ছিল পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের। ধীরে ধীরে এ আসরে ডানা মেলতে শুরু করেছে আফগানরাও। এর মধ্যে এবার রংপুর রাইডার্সে খেলা মোহাম্মদ শাহজাদ ও চিটাগং ভাইকিংসের মোহাম্মদ নবির নাম অন্যতম। এই আসরে খেলছে আফগানিস্তানের লেগ স্পিনার রশিদ খানও। তিনি খেলছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে। এবার বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম ফিফটি হাঁকিয়েছেন শাহজাদ। এমনকি ম্যাচ সেরা হয়েছেন দলকে জেতানো ৮০ রানের ইনিংস খেলে। আর মোহাম্মদ নবিতো ব্যাটে-বলে ভাইকিংসকে জিতিয়ে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। বিদেশিদের মধ্যে ব্যাট হাতে শাহজাদ ও বল হাতে নবিই এখন সেরা পারফরমার। অন্যদিকে বিপিএলের সব চেয়ে বড় বিদেশি তারকা ক্রিকেটার গেইল আসেননি। তার চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে মাঠে নামার কথা রয়েছে। বিপিএলের প্রথম আসর থেকে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আধিপত্য ছিল নজরকাড়া। এবারও প্রতিটি দলে আছেন কয়েকজন পাকিস্তানি ক্রিকেটার। তবে দ্বিতীয় আসরে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের পিসিবি ছাড়পত্র না দেয়াতে কদর বাড়ে শ্রীলঙ্কান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে ও আফগান ক্রিকেটারদের। প্রতিবারই ছয় থেকে ৭ জনের মতো ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারের দেখা মেলে। কিন্তু তাদের মান নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট প্রশ্ন। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের তারকা মো. নবি বল হাতে নিয়েছেন ১১ উইকেট। ব্যাট হাতে করেছেন ১৪৬ রান। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ৮৭ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলে হারতে থাকা ভাইকিংসকে জয়ে ফেরান তিনি। এই পর্যন্ত তিনি চিটাগংয়ের জয় পাওয়া দুই ম্যাচেই নিয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। অন্যদিকে ব্যাট হাতে শাহজাদ ৫৬.৩৩ গড়ে ৫ ম্যাচে করেছেন ১৬৯ রান। হাঁকিয়েছেন ২টি ফিফটি। দলকে জিতিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন দুই বার। ব্যাট হাতে জায়গা করে নিয়েছেন মারলন স্যামুয়েলস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই তারকা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে মাত্র ১টি ফিফটিতে চার ম্যাচে করেছেন ১৫৩ রান। যদিও তার পারফরম্যান্সে খুশি নয় ভাইকিংসের মালিক পক্ষ। যে কারণে শেষ ম্যাচে তাকে রাখা হয়নি একাদশেও। ১৩৩ রান করে এই আসরে বরিশালের ইংলিশ ক্রিকেটার ডেভিড মালান আছেন চতুর্থ স্থানে। গত আসরে ব্যাট হাতে দারুণ করেছিলেন লঙ্কান ক্রিকেট লিজেন্ড কুমার সাঙ্গাকারা। তিনি ছিলেন শীর্ষে। এবারও তিনি ঢাকা ডায়নামাইটসে খেলতে এসেছেন। কিন্তু ওপেন করতে নেমে ঢাকার মেহেদী মারুফের দারুণ পারফরম্যান্সে ঢাকা পড়েছেন তিনি। এ পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ১৬.৬৬ গড়ে তার সংগ্রহ মাত্র ১০০ রান। শনিবার পর্যন্ত মাত্র ৫ জন বিদেশি ক্রিকেটার একশ’র উপর রান করতে সক্ষম হয়েছেন। আর বল হাতে বিদেশিদের মধ্যে মো. নবির পরই আছেন পাকিস্তানের তারকা ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন শহীদ আফ্রিদি। ব্যাট হাতে এবার তার রংপুর রাইডার্সের হয়ে ঝলক দেখানোর সুযোগ হয়নি। কিন্তু বল হাতে নিয়েছেন ৯ উইকেট। সেরা শিকার ১২ রানে ৪ উইকেট। তারপরই আছেন আরো দুই পাকিস্তানি খুলনা টাইটান্সের জুনায়েদ খান ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সোহেল তানভির। দু’জন নিয়েছেন ৮টি করে উইকেট। ৩ ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে ৫ম স্থানে আছেন ক্যারিবীয় আরেক তারকা কেভিন কুপার। ৬ ম্যাচ খেলে সমান উইকেট নিয়েছেন ক্যারিবীয় আরেক তারকা ব্রাভো। তিনি খেলছেন ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে। এবারের আসরে ৬৭ জন বিদেশী ক্রিকেটারকে ৭টি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলে টেনেছে। তবে এর মধ্যে অনেক ক্রিকেটারই এখন পর্যন্ত খেলতে আসেনি। চলে গেছেন বেশ কয়েকজনও। ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরে গেছেন ইংল্যান্ডের যশুয়া কব। তবে সুখের বিষয় এখন পর্যন্ত বিপিএলে বাংলাদেশের বোলার ও ব্যাটসম্যানরা দারুণ দাপট দেখাচ্ছেন। বল হাতে ঢাকার মোহাম্মদ শহীদ ও ব্যাট হাতে একই দলের মেহেদী মারুফ রয়েছেন শীর্ষে। এমনকি ব্যাট হাতে শীর্ষ পাঁচজনই বাংলাদেশি। আফগান তারকা শাহজাদ খানিকটা স্থুলকায় হলেও তিনি যে কতটা গতিশীল তার প্রমাণ দিয়েছেন। চিটাগং পর্বের প্রথম দিনের দ্বিতীয় খেলায় বরিশালের বিপক্ষে খেলায় ৪ উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখান। সেদিন তিনি তিনটি স্টাম্পিং করেন। দুটি ক্যাচ নেন। আর একটি রানআউটেও তার অবদান সরাসরি। বিপিএলের কোন ম্যাচে এক উইকেট কিপারের পাঁচ শিকারের একমাত্র নজিরটি তারই। বিদেশি সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান নাম ম্যাচ রান সর্বোচ্চ গড় ৫০/১০০ মো. শাহজাদ (রংপুর রাইডার্স) ৫ ১৬৯ ৮০* ৫৬.৩৩ ২/০ মারলন স্যামুয়েলস (কুমিল্লা ভি.) ৪ ১৫৩ ৫২ ৩৮.২৫ ১/০ মো. নবি (চিটাগং ভাইকিংস) ৬ ১৪৬ ৮৭* ৪৮.৬৬ ১/০ ডেভিড মালান (বরিশাল বুলস) ৪ ১৩৩ ৭৮* ৪৪.৩৩ ১/০ সাঙ্গাকারা (ঢাকা ডায়নামাইটস) ৬ ১০০ ৩০ ১৬.৬৬ ০/০ বিদেশি সেরা পাঁচ বোলার নাম ম্যাচ উই. গড় সেরা মোহাম্মদ নবি (চিটাগং ভাইকিংস) ৬ ১১ ১০.৪৫ ৪/২৪ শহীদ আফ্রিদি (রংপুর রাইডার্স) ৫ ৯ ১০.৫৫ ৪/১২ জুনায়েদ খান (খুলনা টাইটান্স) ৫ ৮ ১৩.২৫ ৪/২৩ সোহেল তানভির (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স) ৭ ৮ ১৫.৬২ ৪/১৮ কেভিন কুপার (খুলনা টাইটান্স) ৩ ৬ ১১.৩৩ ৩/৩৫
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.