ঢাকার ছবিতে এটিএম শামসুজ্জামান, আহমেদ শরীফ, হুমায়ূন ফরীদি, রাজীবসহ আরও অনেকেই ভিলেন থেকে ইতিবাচক চরিত্রে এসে নতুন করে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। ক্যারিয়ারের একটা মুহূর্তে এসে পরিবর্তন করেছেন নিজের অভিনয়ের ধারাকে এবং সফলতাও পেয়েছেন। তেমনই একজন মিশা সওদাগর। বর্তমান সময়ে ঢালিউডের শীর্ষ অ্যান্টিহিরো। জনপ্রিয় এই অভিনেতা এখন পর্যন্ত অভিনয় করেছেন আটশ’রও বেশি ছবিতে। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। ২৫ বছরের ক্যারিয়ারের মধ্যে খলনায়ক হিসেবে তার পথচলা ২৩ বছরের। ঢাকার ছবির খল চরিত্রের অন্যতম সফল এ অভিনেতা এবার শিল্পী সমিতির আসন্ন নির্বাচনে সভাপতির পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার প্যানেলে আরও থাকছেন জায়েদ খান। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিশা সওদাগর মানবজমিনকে বলেন, আমি এক রকম আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম। কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হতাম না। কিন্তু চলচ্চিত্র পরিবারের জন্য আমি এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। এর আগে আমি চার বছর টানা সেক্রেটারী জেনারেল এবং তারও আগে পাঁচ বছর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। সেসময়গুলোতে নির্বাচনে আমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন সুচরিতা ম্যাডাম, প্রবীর মিত্র, শর্মিলী আপা। তখন আমি সর্বোচ্চ ভোটে জিতেছিলাম। এজন্য শ্রদ্ধেয় আহমেদ শরীফ, মিজু ভাইসহ অনেকের কাছেই আমি কৃতজ্ঞ। শিল্পী সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ছয়শ’র বেশি। এদের মধ্য থেকে এবার জায়েদ খানকে প্যানেলে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন মিশা সওদাগর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিল্পীদের মধ্যে বিভিন্ন গোত্রের লোক আছে যাদের অনেকেই চান আমি নির্বাচনে অংশ নেই এবং তাদের সকলেরই চাওয়া এক্ষেত্রে জায়েদ খান যেন আমার সঙ্গে থাকে। কারণ সকলেই দেখেছেন যে, জায়েদ চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য সবসময় কাজ করছেন। শিল্পীদের কোনো কিছু হলে বা চলচ্চিত্র পাইরেসি নিয়েও অনেক কাজ করেছেন তিনি। তাই এবার জায়েদকে নিয়ে নির্বাচন করছি। এদিকে অভিনেতা ওমর সানির অনেক কাছের বন্ধু মিশা সওদাগর। তিনিও শিল্পী সমিতির সভাপতি পদে লড়বেন। এ প্রসঙ্গে মিশার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, সানি প্রেসিডেন্ট হওয়া মানেই আমি হওয়া। কারণ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি একটি অলাভজনক এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। শিল্পীরা আমাকে না দিলেও আমার বন্ধুকে ভোট দিক এটাই চাওয়া থাকবে। এটা কোনো বিষয় না। দুই বন্ধু আমরা এখন সিনিয়র হয়েছি, শিল্পীরা ফুলের মালা যাকেই দিক না কেনো আলহামদুলিল্লাহ্ বলব। আর এটা তো সংসদ নির্বাচন না। কেউ না কেউ তো নির্বাচন করবে এটাই স্বাভাবিক। মিশা আরও বলেন, আমি স্পষ্টবাদী, প্রতিবাদী মানুষ। যৌথ প্রযোজনার অনেক ছবিতে প্রস্তাব পাবার পরও কাজ করিনি। অনেকে করলেও আমি এখন পর্যন্ত অনেক কাজ ছেড়ে দিয়েছি। আমার টাকার প্রতি লোভ নেই। আমি উপযুক্ত সম্মান নিয়ে চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিতে চাই। এখন আর ফাজলামি করার সময় নেই। নির্বাচনের কথা শেষে বছরজুড়ে যেসব ছবি মুক্তি পেয়েছে সেসব নিয়েও কথা বললেন তিনি। এ বছরটা চলচ্চিত্রের জন্য কেমন গেলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, একেবারেই দূরাশার কথা বলব না। প্রথমেই বলতে চাই ‘শিকারি’ আমাদের দেশের ছবি না। তাই এটা হিসেবে ধরব না। কারণ শাকিব খান ফ্যাক্টর না। লুক টুক বলে কোনো বিষয় আমি বিশ্বাস করি না। গল্পের মধ্যে লুক না থাকলে কোনো ছবি চলবে না। এ বছরের মধ্যে ‘স¤্রাট’, ‘বসগিরি’, ‘শ্যুটার’, ‘আয়নাবাজি’ ছবিগুলো মানুষ দেখেছে। যে ছবি পরিবারের লোক এসে দেখবে এবং ছবি দেখার পর প্রশংসা করবে সেটাই হবে হিট ছবি। ‘আয়নাবাজি’ হতে পারে এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বর্তমানে মিশা সওদাগর সৈকত নাসিরের ‘পাষাণ’ ও অনন্য মামুনের ‘আমি তোমার হতে চাই’ ছবির কাজ শেষ করছেন। এছাড়া বদিউল আলম খোকনের ‘হারজিৎ’ ছবিরও কাজ করছেন তিনি। সামনে তার এ ছবিগুলো মুক্তি পাবে। ছবিগুলো নিয়ে মিশা সওদাগর বলেন, আসলে চলচ্চিত্রের কথা কি আর বলব! ভালো স্ক্রিপ্ট কোথায়, আমাদের ভালো চরিত্র বা চরিত্রের রিপ্লেসমেন্ট কোথায়! আমি তো আট-নয়শ ছবি করে ফেলেছি। এখন কাজের সংখ্যা অনেক কমিয়ে দিয়েছি। আমার টাকার দরকার নেই, মানুষ হিসেবে সম্মানটা আমার এখন বেশি দরকার। তাই বুঝে শুনে অল্প কিছু ছবিতে কাজ করছি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.