ডোনাল্ড ট্রাম্প
গত সোমবার রাতে আড়াই মিনিটের এক ভিডিও বার্তায় নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। শপথ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যেসব সিদ্ধান্ত তিনি নিতে যাচ্ছেন, ওই বার্তায় তার শিরোনাম তিনি জানিয়ে দিলেন। তবে যে কারণে এই ঘোষণা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, প্রথম ১০০ দিনে তিনি আপাতত কী কী করছেন না।
যে পাঁচটি বিষয় ট্রাম্প তালিকাভুক্ত করেছেন তার সর্বাগ্রে রয়েছে আন্তপ্রশান্ত মহাসাগরীয় সহযোগিতা চুক্তি বা টিটিপি বাতিল। এক নির্বাহী ঘোষণার মাধ্যমে এই চুক্তি বাতিলের ইচ্ছা তিনি প্রথম দিনই জানিয়ে দেবেন। বহুজাতিক এই চুক্তির স্থলে তিনি আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা হয় এমন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন করবেন। জ্বালানি উৎপাদন ক্ষেত্রে বর্তমান যে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, প্রথম দিনেই তা প্রত্যাহার করে কয়লা ও গ্যাস-তেল উৎপাদনের সুযোগ সম্প্রসারিত হবে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, ব্যবসায়-বাণিজ্য ক্ষেত্রে যে নিয়ন্ত্রণ বা বিধিনিষেধ রয়েছে, তা শিথিল করা হবে। এই লক্ষ্যে পরবর্তী সময়ে নতুন কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হলে বর্তমানে চালু রয়েছে এমন দুটো চলতি বিধিনিষেধ বাতিল করা হবে। এ ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক নতুন পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তাঁর প্রশাসনের সদস্যদের লবিং করা নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত করে নতুন নৈতিক নীতিমালা ঘোষণা করার কথাও জানান ট্রাম্প।
লক্ষণীয় যে এই তালিকায় মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়াল তোলা অথবা ১ কোটি ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারের কোনো কথা নেই। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর ভবিষ্যৎ প্রশাসনের কোনো কোনো সদস্য ও উপদেষ্টা ইঙ্গিত করেছেন, ট্রাম্প মুসলিমদের তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি রেজিস্ট্রি বা ডেটাবেইস চালু করবেন। সে বিষয়েও কোনো কথা বলেননি ট্রাম্প। ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসকে নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর অগ্রাধিকার তালিকায় সে বিষয়টিও বাদ গেছে। ওবামা কেয়ার নামে পরিচিত স্বাস্থ্যবিমা কর্মসূচি বাতিলের যে কথা নির্বাচনী প্রচারকালে হরহামেশা তিনি বলতেন, এই ভিডিও বার্তায় সে বিষয়টিও নেই। ট্রাম্প জানান, তাঁর কর্মসূচির ভিত্তি হবে ‘সর্বাগ্রে আমেরিকা’ এই নীতি। তিনি বলেছেন, ‘লোহা উৎপাদন, গাড়ি উৎপাদন বা ব্যাধি নির্মূল, আমি চাই পরবর্তী সব নতুন আবিষ্কার বা নবপ্রবর্তন হবে আমাদের মহান দেশ, আমেরিকায়।’ ট্রাম্পের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রথম ১০০ দিনের যে কর্মসূচি ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, আগামী দিনগুলোতে সে কর্মসূচি আরও সম্প্রসারিত হতে পারে। বর্তমান অগ্রাধিকার তালিকায় নেই এমন বিষয় পরবর্তী সময়ে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, সে কথা অবশ্য মুখপাত্রটি জানাতে সম্মত হননি। এদিকে সোমবার নিউইয়র্কে তাঁর বাসভবন ট্রাম্প টাওয়ারে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কয়েকটি টেলিভিশন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ করেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প তথ্যমাধ্যমকে অসৎ ও মিথ্যাবাদী বলে সমালোচনা করেছিলেন। কোনো কোনো সাংবাদিককে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকিও দিয়েছিলেন। সোমবারের ওই ‘ব্যক্তিগত’ সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প তথ্যমাধ্যমের বিরুদ্ধে তাঁর সেই সমালোচনা অব্যাহত রাখেন। নাম না প্রকাশের শর্তে সাক্ষাৎকারে উপস্থিত এমন একাধিক সংবাদমাধ্যম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁদের এই প্রথম বৈঠকটি খুব একটা ভালো হয়নি। ট্রাম্প সিএনএন ও এনবিসি টিভির সাংবাদিকদের সরাসরি একপেশে ও অসৎ সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ উত্থাপন করেন। তিনি অভিযোগ করেন, যে লাখ লাখ মার্কিন তাঁর পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে দেশের প্রধান পত্রপত্রিকা ও টিভি নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্ক টাইমস-এর সঙ্গে একটি এবং একাধিক দৈনিক পত্রিকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আরেকটি মুখোমুখি সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে। এদিকে অজ্ঞাতনামা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এমএনবিসি টিভি গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল অথবা ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে নতুন কোনো অনুসন্ধান চালাবে না। ট্রাম্পের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ট্রাম্প মনে করেন এই প্রশ্নে ইতিমধ্যে যথেষ্ট তদন্ত হয়েছে, নতুন কোনো তদন্তের আর প্রয়োজন নেই। এর আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া মাত্রই তিনি হিলারির ব্যাপারে তদন্তের জন্য একজন বিশেষ তদন্তকারী নিয়োগ দেবেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.