নাফিয়া হক আজিমপুরে থাকেন। সংসারের প্রয়োজনে রাজধানীর নিউমার্কেটে যেতে হয়। তবে এই যাওয়াটা সব সময় সুখকর হয় না। বাজে মন্তব্য থেকে শুরু করে নানা ধরনের হেনস্তার শিকার হন। গতকাল শুক্রবার নিউমার্কেট, চাঁদনী চক ও গাউছিয়া ঘুরে অন্তত ছয়জন নারীর সঙ্গে কথা হয়। কেনাকাটা করতে গিয়ে তাঁরা সবাই কমবেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ করলে বিচার পাবেন না মনে করছেন এবং ঠিক কোথায় করতে হবে সে সম্পর্কেও তেমন জানা নেই। গত মাসে নিউমার্কেট এলাকায় ভাইয়ের বিয়ের জন্য কেনাকাটা করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ও তাঁর মা একটি দোকানে লাঞ্ছনার শিকার হন। পরে এক সমাজকর্মীর সহায়তায় ওই মেয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে বিচার পান। নিউমার্কেট, চাঁদনী চক ও গাউছিয়া এলাকায় দোকানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে হকার। বেশ কয়েকজন নারী বলেন, এঁরা প্রায়ই নানা ধরনের মন্তব্য করেন। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থী পুষ্পা মজুমদার বলেন, ‘হকাররা তো সব সময় ডাকতেই থাকে। যদি একটু দাঁড়িয়ে না কিনে দেখি তাহলেই আজেবাজে কথা শোনায়। আজকেও এমন হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, মার্কেটের ভেতরের দোকানিরাও দামে বনিবনা না হলে কথা শুনিয়ে দেন। মার্কেটগুলোয় সব সময়ই ভিড় বেশি থাকে। এ সুযোগে অনেকে শরীরে হাত দেয় বলেও অভিযোগ করেন নারীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাঁদনী চকে কেনাকাটা করতে আসা এক নারী বলেন, ‘সুযোগ পাইলেই গায়ে হাত দেয়। কিছু জিজ্ঞেস করলেই উল্টো বলে, ভিড়ের মধ্যে আইছেন, ঠেলা-গুঁতা তো খাইবেনই। আর ওভারব্রিজে উঠলেই দেখবেন কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে থাকে। টিজ করে।’ বনশ্রী থেকে মিলি রহমান এসেছেন বান্ধবীর বিয়ের কেনাকাটা করতে। তিনি নিউমার্কেটে কম আসেন। মৌচাক থেকেই কেনেন। মিলি বলেন, মধ্যবিত্তের মার্কেটগুলোর অবস্থা সবখানেই এক। খারাপ ব্যবহার, বাজে মন্তব্য শুনেও তাঁদের এখানে আসতে হয়। এ ব্যাপারে কোথাও অভিযোগ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘কার কাছে করব সেটা ঠিক জানি না।’ থানায় অভিযোগ করা হলে সেটা পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে নেবে কি না, তা নিয়ে মিলির সংশয় আছে। গত মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী লাঞ্ছিত হলে ফেসবুকে নিজের অভিজ্ঞতার লিখে সহায়তা চান। তখন সমাজকর্মী আবদুল্লাহ আল ইমরানের নজরে এলে তিনি নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার নাজমুন নাহারের কাছে যান। পরে ওই দোকানিকে চিহ্নিত করে কোর্টে পাঠানো হয়। আবদুল্লাহ বলেন, ‘ওই ঘটনার পর অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছি। এর বিরুদ্ধে আমাদের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে।’ নাজমুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে আসতে হবে। ভয়েস রেইজ করতে হবে। আমরা দোকানের সমিতির মিটিংয়ে বলেছি, তাদের সেলসম্যানদের কাস্টমারের সঙ্গে ব্যবহারের বিষয়ে ট্রেনিং দিতে।’ গত ১৬ অক্টোবর নাজমুন নাহার অভিযোগটি পান। তিনি বলেন, মেয়েটি বিচার চেয়েছিল বলেই সম্ভব হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.