এখন থেকে সরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা চাকরি দুই বছর পূর্তি না হলে ঢাকা মহানগর এলাকায় বদলি হতে পারবেন না। আর সব বদলির আবেদন করতে হবে ই-মেইলে। নির্ধারিত সময়ে বছরে দু’বার আবেদন করা যাবে। তবে, নীতিমালার সাধারণ নিয়মের বাইরে সরকার ‘জনস্বার্থে’ যেকোনো কর্মকর্তাকে অন্যস্থানে বদলি করতে পারবে। এ রকম কিছু নির্দেশনা যুক্ত করে আজ রোববার সরকারি কলেজের শিক্ষক বদলি ও পদায়নের একটি নীতিমালা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এদিকে বদলির একচ্ছত্র ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের হাতে রাখায় এর অপপ্রয়োগ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু শিক্ষক।
তারা বলেছেন, ‘জনস্বার্থে’-র নামে রাজনৈতিকভাবে প্রভাশালীদের দৌরাত্ম বহাল থাকবে। এর ফলে বদলির জন্য সত্যিকার অর্থেই যোগ্য ও অতি জরুরি দাবি ও আবেদনগুলো বঞ্চিত হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বদলিতে অতিরিক্ত তদবির সামলাতে এই নীতিমালা করা হয়েছে। সারা দেশে ৩২৭টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে ১৪ হাজারের মতো শিক্ষক রয়েছেন। তারা নতুন শিক্ষবর্ষের শুরু থেকেই বদলির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদবির করছেন। মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছুদিন থেকেই কলেজ উইং-এ বদলি প্রত্যাশী কলেজ শিক্ষকদের ভীড় লেগেই রয়েছে। এ নিয়ে ওই শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্যের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, প্রভাষকরা প্রথম দফায় জানুয়ারি মাসে ও দ্বিতীয় দফায় জুলাই মাসে বদলির আবেদন করতে পারবেন। সহকারী অধ্যাপকরা প্রথম দফায় মার্চে ও দ্বিতীয় দফায় সেপ্টেম্বরে, সহযোগী অধ্যাপকেরা প্রথম দফায় মে মাসে ও দ্বিতীয় দফায় অক্টোবরে এবং অধ্যাপকেরা প্রথম দফায় জুনে ও দ্বিতীয় দফায় ডিসেম্বরে বদলির আবেদন করতে পারবেন। নির্ধারিত মাসের ১ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে অনুমোদিত ফরমে ই-মেইলে আবেদন জমা দিতে হবে। আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করা যাবে। ই-মেইল ছাড়া অন্য কোনোভাবে দেয়া আবেদন বিবেচনা করা হবে না।
নীতিমালা অনুযায়ী, অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে যাওয়ার এক বছর আগে কোনো শিক্ষক ও শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা তাঁর সুবিধামতো স্থানে বদলির জন্য আবেদন করলে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই আবেদন বিবেচনা করা হবে। স্বামী ও স্ত্রী দুজনই চাকরিজীবী হলে স্বামী বা স্ত্রীর নিকটতম কর্মস্থলে বদলি বা পদায়নের জন্য আবেদন করা যাবে। তবে যেহেতু এ ধরনের কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক, তাই বিষয়টি অধিকার হিসেবে গণ্য করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সুবিধা ও জনগণের সেবাপ্রাপ্তির বিষয় একসাথে বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
যেভাবে নিষ্পত্তি হবে আবেদন নীতিমালা অনুযায়ী যে মাসে আবেদন করা হবে, ওই মাসেই তা নিষ্পত্তি করা হবে। বদলির আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই এবং সুপারিশের জন্য ‘বাছাই কমিটি’ ও ‘সুপারিশ কমিটি’ নামে দুটি কমিটি থাকবে। বাছাই কমিটি আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ কমিটির কাছে পাঠাবে। এরপর সুপারিশ কমিটির প্রস্তাব যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন হওয়ার পর বদলি বা পদায়নের আদেশ জারি করা হবে। উপজেলা পর্যায়ের কলেজগুলোর শূন্য পদে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদায়ন করা হবে। তবে নীতিমালার সাধারণ নিয়মের বাইরে সরকার ‘জনস্বার্থে’ যেকোনো কর্মকর্তাকে যেকোনো স্থানে বদলি করতে পারবে।
বর্তমানেও সাধারণত চাকরি দুই বছর না হলে ঢাকায় বদলি করা হয় কলেজ শিক্ষকদের। এরপরও অনেক সময় এটি মানা হয় না। এখন কাগুজে নীতিমালা করে বদলিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হলো।
বদলির আদেশ জারির পর একাধিক সিনিয়র শিক্ষক নয়া দিগন্তকে বলেন, এ নীতিমালাটি অনেকাংশেই ‘আইওয়াশ’। সাধারণ নিয়মের বাইরে সরকার ‘জনস্বার্থে’ যেকোনো কর্মকর্তাকে যেকোনো স্থানে বদলি করতে পারবে বলে যে ধারা যুক্ত এখনও রয়েছে এটিই সবচেয়ে বড় ধরনের বৈষম্য ও স্বৈরাচারী ধারা। এ ধারার দোহাই দিয়ে মূলতঃ রাজনৈতিকভাবে প্রভাশালীদের দৌরাত্মকে সরকারি স্বীকৃতিই দেয়া হলো। এ ধারা অপপ্রয়োগ হতে বাধ্য। এর ফলে বদলির অতি জরুরি আবেদনগুলো বঞ্চিত হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.