একেএস বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) রংপুর রাইডার্সের রঙিন যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয়বারের দেখাতেও খুলনা টাইটান্সকে হারিয়ে নাঈম ইসলামের দল উঠে এসেছে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থানে। গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে সময় নেননি খুলনার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। যেন একটাই লক্ষ্য, রংপুরের বিপক্ষে ৪৪ রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জা উড়িয়ে দিতে হবে ব্যাট হাতে। অথচ আগের দিন এ মাঠেই ১৮২ ও ১৮৩ রান করেও জিততে পারেনি ঢাকা ও কুমিল্লা। খুলনার ব্যাটসম্যানরা সে রকম রানও করতে পারেনি। রাইডার্স বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে মাত্র ১২৬ রানের লক্ষ্য দিতে সক্ষম হয়। রংপুরের সেরা দুই ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদ ও মোহাম্মদ মিঠুন মিলে ৭ উইকেটের বড় জয় উপহার দেন। আফগান ক্রিকেটার শাহজাদ ৩৭ রানে আউট হলেও শেষ পর্যন্ত ৪৯ রানে অপরাজিত থেকে মাঠে ছাড়েন মিঠুন। কিন্তু ম্যাচসেরা হয়েছেন শহীদ আফ্রিদি। বল হাতে ৩০ রানে ২ উইকেট নেয়ার পর ব্যাট হাতে ২০ বলে ২৬ রান করেছিলেন পাকিস্তানের এই তারকা ক্রিকেটার। ৬ ম্যাচে ৫ জয়ে শীর্ষে উঠে এল রংপুর রাইডার্স। খুলনার দু’টি হারই রংপুরের বিপক্ষে। রংপুরের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বাজে ব্যাটিংয়ের লজ্জা এড়াতে পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে হার এড়াতে পারেনি খুলনা। খুলনার মতোই ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারিয়েছিল রংপুর রাইডার্স। ১৩ বলে ৩ রান করে আরও একবার ব্যর্থ সৌম্য সরকার। জাতীয় দলের এই তরুণ তারকার উপর রংপুরের ভরসার মূল্য তিনি কোন ম্যাচেই রাখতে পারেননি। ৬ ম্যাচে তার অবদান মাত্র ৭৬ রান। কিন্তু খুলনাকে আর কোনো সুযোগ দেননি শাহজাদ ও মিঠুন। উইকেটে একটু মুভমেন্ট থাকায় বেশ সাবধানী ছিলেন শাহজাদ। ৩৭ রানের ইনিংস খেলতে ব্যয় করেন ৩৮ বল। মাহমুদুল্লাহর বলে অলককে ক্যাচ দেয়ার আগে হাঁকান ৪টি চার ও একটি ৬ এর মার। দ্বিতীয় উইকেটে ১০ ওভার স্থায়ী মিঠুন-শাহজাদ জুটিতে আসে ৭৪ রান। ১৩.২ ওভারে ৮৭ রানে ২ উইকেট হারায় রংপুর। এরপর মিঠুনের সঙ্গে যোগ দেন বুম বুম আফ্রিদি। ব্যাটে ঝড় তুলে ২টি ছয় ও ১টি চারের মারে ২৬ রান তুলে দলকে আরও জয়ের কাছে নিয়ে যান। দলের জয় থেকে মাত্র ৪ রান দূরে আফ্রিদি আউট হলেও মিঠুন জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। মাত্র ১ রানের জন্য তিনি এই আসরে দ্বিতীয় ফিফটি হাত ছাড়া করেন। তার ৪১ বলের ইনিংসটি সাজানো ছিল ১ চার ও ৩টি ছয়ের মারে। এর আগে ব্যাট করতে নেমে ১৩ রানেই ওপেনার আবদুল মজিদকে হারিয়ে প্রথম ধাক্কা খায় খুলনা। তৃতীয় ম্যাচেও মজিদ দলের জন্য বড় কোন অবদান রাখতে পারলেন না। আরাফাত সানির বলে বোল্ড হন ১০ রান করে। এরপর স্কোর বোর্ডে ৭ রান যোগ হতেই আরেক ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচারও ৮ রান করে আরাফাত সানির দ্বিতীয় শিকার। খুলনার ভক্তদের মনে তখন হয়তো সেই ৪৪ রানে অলআউট হওয়ার শঙ্কা ও ভয় উঁকি-ঝুঁকি মারছিল। এই শঙ্কাটি আরও বড় হয় দলের ভরসা অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ মাত্র ১১ রানে আউট হলে। মাহমুদুল্লাহর বিদায়ে দলের হাল ধরেন রিকি ওয়েসেলস ও তাইয়েবুর রহমান পারভেজ। চতুর্থ উইকেটে গড়ে তোলেন ৫৬ রানের জুটি। তবে এই জুটি ৯.১ ওভার খেলে দলের বিপর্যয় কিছুটা কাটিয়ে তোলেন। কিন্তু ৩৩ বল খেলে ২৭ রান করা ওয়েসেলস রানের গতি বাড়তে গিয়ে আউট হন। ৯৬ রানে চার উইকেট হারানোর পর ফের বিপর্যয়। মাত্র দু’টি রান যোগ হতেই ৩২ রান করা পারভেজও হাল ছাড়েন। টি-টোয়েন্টি চার ছক্কার খেলা কিন্তু খুলনার ইনিংসে মাত্র ৯টি চার ও ৪টি ছ’য়ের মার। ২টি ছয় আরিফুল হক। শেষ মুহূর্তে তার করা ১৩ বলে ২২ রানে ভর করে খুলনার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১২৫ রান। যদিও হাতে তিনটি উইকেট অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু ততোক্ষণে শেষ হয়ে গিয়েছিল নির্ধারিত ওভার। আফ্রিদি ছাড়াও রংপুরের পক্ষে দু’টি করে উইকেট নেন আরাফাত সানি ও রুবেল হোসেন। সংক্ষিপ্ত স্কোর খুলনা টাইটান্স-রংপুর রাইডার্স টস: খুলনা (ব্যাট) খুলনা টাইটান্স: ২০ ওভারে ১২৫/৭ (তাইয়েবুর ৩২, ওয়েসেলস ২৭, আরিফুর ২২, আরাফাত সানি ২/১৬, রুবেল হোসেন ২/১৯, শহীদ আফ্রিদি ২/৩০) রংপুর রাইডার্স: ১৯ ওভারে ১২৯/৩ (মো. মিঠুন ৪৯, শাহজাদ ৩৭, আফ্রিদি ২৬, জুনায়েদ খান ১/২৩, মাহমুদুল্লাহ ১/১৪) ফল: রংপুর রাইডার্স ৭ উইকেটে জয়। ম্যাচসেরা: শহীদ আফ্রিদি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.