কোচের কাছে কিশোর ফুটবলারদের যৌন নির্যাতনের ঘটনায় তোলপাড় ইংল্যান্ড। ঘটনা অনেক আগের। প্রায় ৪ দশক আগে একজন কিশোরকামী ফুটবল কোচের কলঙ্কিত কাহিনী ফাঁস হলো এখন। ৪৩ বছর বয়সী অ্যান্ডি উডওয়ার্ড। ১৯৯২ থেকে ২০০২ পর্যন্ত তিনি খেলেন পেশাদার ক্লাব ফুটবল। শুরু করেন ক্রু আলেকজান্দ্রায়। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত ক্লাবটিতে খেলেন তিনি। তখন তার বয়স ১২’র মতো। সম্প্রতি তিনি ওই সময়ের কিছু বাজে স্মৃতির কথা ফাঁস করলেন। ১৬ নভেম্বর ‘দ্য গার্ডিয়ান’কে এক সাক্ষৎকার দেন তিনি। উডওয়ার্ড জানান, ১২ বছর বয়সে আলেকজান্দ্রায় খেলাকালে তখনকার কোচ ব্যারি বেনেলের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। একাধিকবার তিনি ওই কোচের লালসার শিকার হয়েছিলেন। শুধু একা নন, দলের অনেক কিশোর ছেলের সঙ্গে বেনেল এই কুকর্ম করতেন বলে ফাঁস করে দেন উডওয়ার্ড। এমন কি এই কুকর্মে কোচকে সঙ্গ না দিলে তাকে দলে রাখা হতো না বলে জানান। উডওয়ার্ড এমন ঘটনা ফাঁস করার পর অনেক সাবেক ফুটবলার নড়েচড়ে বসেন। ওই ঘটনা প্রকাশের সপ্তাহখানের মধ্যে আরও ৫-৬ জন সাবেক খেলোয়াড় নিজেদের কৈশরে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্তার কথা প্রকাশ করেছেন। এমন কি গতকাল একটি টেলিভিশনে হাজির হয়ে সরাসরি এ বিষয়টি প্রকাশ করলেন সাবেক ফুটবলার ক্রিস সোর্থ, স্টিভ ওয়ালটার্স, জেসন ডানফোর্ড ও অ্যান্ডি উডওয়ার্ড। ওই অনুষ্ঠান চলাকালে আরও কয়েকজন সাবেক ফুটবলার নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। এর মধ্যে অধিকাংশই বেনেলের শিকার ছিলেন। কয়েকজন সাবেক খেলোয়াড় যৌন হেনস্তার কথা স্বীকার করলেও কোচের নাম প্রকাশ করেননি। কিশোর ফুটবলারদের ওপর এমন অনাচারের প্রতিকার চেয়েছেন তারা। এমন কি শুধু এই কুকর্মের জন্য অনেক কিশোর ফুটবল ছেড়ে দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তারা। ক্রিস অনসোর্থ কিশোর বয়সে বেনেলের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ১৬ বছর বয়সেই ফুটবল ছাড়েন বলে জানান। তিনিও পরে ‘দ্য গার্ডিয়ান’কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ভালো ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ম্যানচেস্টার সিটির যুব দলে খেলতেন। পরে যোগ দেন ক্রু আলেকজান্দ্রায়। আর সেখানে গিয়েই তিনি বেনেলের লালসার শিকার হন। এতে বাধ্য হয়ে ফুটবল ছেড়ে গলফ খেলায় মনোযোগী হন তিনি। পরে পেশাদার গলফার হয়ে ওঠেন। স্পষ্ট করে তিনি বলেন, ‘এখন বিষয়টি সবাইকে জানানো দরকার বলে আমি মনে করছি। এতে সবাই সাহায্য পাবে। ১৯৮০ সালের দিকে আমার বয়স ছিল ১২ বছর। আমাকে মাঝে-মধ্যে কোচ বেনেলের ঘরে থাকতে হতো। বেনেলের বিছানায় কখনো কখনো একসঙ্গে দুই-তিনজন ছেলে থাকতো। তাদের সবাইকে সে যৌন নির্যাতন করতো। আমরা কিশোররা কেউ এ বিষয় নিয়ে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতাম না। এভাবে বেনেল আমাকে কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ বার ধর্ষণ করে। তখন আমি ফুটবলার হতে চাইতাম। জানতাম- আমার সঙ্গে যা হচ্ছে তা অন্যায়। কিন্তু কিছু করার ছিল না। তখন আমার বাবা-মা কেউ বেঁচে ছিলেন না। আমি অনেক কষ্টে ছিলাম। কাউকে বিষয়টি বলতে পারতাম না। কাউকে বললে আমাকেই উল্টো দোষ দিবে বলে ভয় পেতাম।’ ৬২ বছর বয়সী কুখ্যাত ব্যারি বেনেল ক্রু আলেকজান্দ্রা ও ম্যানচেস্টার সিটিসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবের যুব দলের কোচ ছিলেন। শিশু যৌনতার অভিযোগে দুইবার জেল খেটেছেন তিনি। ১৯৯৮ সালে তার বয়স ছিল ৪৪ বছর। তখন শিশুদের যৌন অত্যাচারের দায়ে তার ৯ বছরের জেল হয়। ১২ বছরের এক কিশোরকে ফুটবল মাঠে যৌন অত্যাচার করার দায়ে ২০১৫ সালে দুই বছরের জেল হয় তার। ওই ঘটনার পর সব ধরনের ফুটবলে আজীবন নিষিদ্ধ হন তিনি। টটেনহ্যাম, লিভারপুল ও ম্যানটেস্টার সিটির সাবেক ইংলিশ ফুটবরার পল স্টুয়ার্টও কৈশরে কোচের যৌন হেনস্তার শিকার হন বলে প্রকাশ করেছেন। টানা চার বছর তার ওপর এক কোচ যৌন নির্যাতন চালায় বলে জানালেন তিনি। তবে তিনি কোচের নাম প্রকাশ করেননি। স্টিভ ওয়ালটার নামে ইংল্যান্ডের আরেক ফুটবলার জানান, ১৯৮৮ সালের দিকে ১৩-১৪ বছর বয়সে বেনেল তার ওপর যৌন অত্যাচার চালান। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ ও রাগান্বিত ছিলাম। মনে হতো আমার কাঁধের ওপর শত টনের বোঝা চেপে বসেছে। আমার ক্যারিয়ার সে ধ্বংস করে দিয়েছিল। আমার অবস্থা দেখে মানুষ জিজ্ঞেস করতো, তোমার কী হয়েছে স্টিভ? তার অত্যাচারে অনেক তরুণ ফুটবলার তখন দল ছাড়ে।’ জেসন ডানফোর্ড নামের সাবেক এক ফুটবলারও টেলিভিশনে সরাসরি নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনিও বেনেলের শিকার। বলেন, ‘আমি তাকে (বেনেল) বিরত থাকতে বলতাম। এমন কি আমি ছোট হয়েও তাকে তখন আঘাত করেছিলাম। সে আমাকে শেষ করে দিয়েছিল। আমাকে দলে রাখতো না। দলের অন্য দুই খেলোয়াড়সহ আমাকে রাতে তার ঘরে রাখতো। আমাদের সঙ্গে একই বিছানায় থাকতো সে। রাতে ঘুমের মধ্যে তার হাতের স্পর্শ অনুভব করতাম। আমি তার হাত দূরে ঠেলে দিতাম। আমি ঘুম থেকে জেগে উঠতাম। দেখতাম- আরেক কিশোর খেলোয়াড়কে সে স্পর্শ করছে। তার কারণে আমাদের অনেকে ভালো ফুটবলার হতে পারেনি।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.