সনজিদা, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলিম নারী। দেশটির সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে গেছে তার স্বামী শামসুল আলমকে। প্রাণভয়ে তিনি বাকি ৩ সন্তানকে নিয়ে গোপনে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন। এখানে এসে আশ্রয় মিলেছে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে। প্রাণ না হারানোর স্বস্তি এলেও মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে সনজিদাকে। না পাচ্ছেন খাবার, না চিকিৎসা। স্বামীর জন্য ব্যাকুল সনজিদা কথা বলতে গিয়ে আড়ষ্ট হয়ে পড়েন।শুধু সনজিদা নন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অমানবিক নির্যাতনে নিজ ভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে আসা অসংখ্য রোহিঙ্গা মানবেতর দিন যাপন করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১২ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। শুধু গত দু’দিনেই এসেছে ৩ হাজারের মতো। এদের মধ্যে রয়েছে দুগ্ধপোষ্য শিশু থেকে বৃদ্ধরাও।
সরেজমিনে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা পল্লী এলাকায় দেখা যায়, এখানকার বাসিন্দার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। অনিবন্ধিত ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা।
এখানেই খাতুন নামে পঞ্চাষোর্ধ এক নারী জানান, তিনি মংডুর খিয়ারীপাড়া থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন সইতে না পেরে দু’দিন আগে বাংলাদেশে এসেছেন। তার সঙ্গে আরও ১২ জন এসেছেন। সবাই কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের ই-ব্লকে আশ্রয় নিয়েছেন।
খাতুন জানান, সেনাবাহিনী তার যুবক জামাতা জাহেদ হোসেনকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে।
খদিজা বেগম চার সদস্য নিয়ে এসেছেন। পরিবারের আরও তিনজন রয়ে গেছে রাখাইনে। তাদের জন্য মন কাঁদলেও ঠিক জানেন না কী হয়েছে ওই তিনজনের ভাগ্যে।
জীবনের মায়ায় রাজিউল্লাহ নামের এক যুবক স্ত্রীকে নিয়ে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে এসেছেন। ঠাঁই মিলেছে বি-ব্লকে। অত্যাচারের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন।
একইভাবে হাফেজ আহমদ (৫৫), রাজিয়া খাতুন (৫৫), ফাতেমা খাতুন (৩৩), ছেনুয়ারা (১৪), কুলসুমা বেগম (৩৩) ছেলে-মেয়েসহ অত্যাচার সইতে না পেরে নিজ ভূমি ছেড়ে এসেছেন বাংলাদেশে।
স্থানীয়রা জানায়, ক্যাম্পগুলোতে হঠাৎ লোক বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যপণ্য ও চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, উখিয়ার কুতুপালং ও লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬ হাজার ৭৬২ পরিবারে মোট ৩৫ হাজার ৫৬৫ জন বসবাস করছে।
এ ছাড়া কক্সবাজার এলাকায় প্রায় ৪৮ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছে। ধারণা করা হয়, অন্তত ২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছেন।
উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের ইনচার্জ আরমান শাকিব জানান, অনিবন্ধিত শিবিরে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের কথা তিনি শুনেছেন। তবে নিবন্ধিতদের এলাকাতে একজনও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নেই বলে জানান তিনি।
আরমান শাকিব আরও জানান, কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ১৩ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছেন। আর শিবিরের তিন দিক ঘিরে অনিবন্ধিত ক্যাম্পে রোহিঙ্গা রয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.