গত পর্বে লিখেছিলাম পর্তুগালের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিয়ে’।’আজ লিখব এখানকার বাংলাদেশিদের নিয়ে’।’যতদুর জানাযায় ১৯৯০ সালের দিকে এখানে বাংলাদেশিদের আগমন’।’৯০ সালে এখানে সর্বসাকুল্যে ৫ জন বাংলাদেশির বসবাস ছিল’।’স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে বাংলাদেশি ইমিগ্রান্টের সংখ্যা কমছিল মূল থেকেই’।’বর্তমানে সারা পর্তুগালে প্রায় দেড় হাজারের মত বাংলাদেশির বসবাস রয়েছে বলে অনুমান করা হয়’।’নিচে ধারাবাহিকভাবে বিস্তারিত বর্ননা দেওয়া হচ্ছে। >>>যেসব শহরে বাঙ্গালিদের বসবাস – পর্তুগালে বেশ কয়েকটি বড়বড় শহর রয়েছে তারমধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে- ১’।’ লিসবোয়া (LISBOA) – পর্তুগিজরা রাজধানী লিসবনকে লিসবোয়া বলে ডাকে’।’আটলান্টিকের তীরবর্তি এই রাজধানী শহরেই সর্বাধিক বাংলাদেশির বসবাস’।’এখানে মারতিম মনিজ নামক জায়গাকে বলা যায় একখন্ড ছোট্র বাংলাদেশ। ২’।’ পর্তু (PORTO) – একসময়ের রাজধানী এবং এখনকার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হচ্ছে এই পর্তু সিটি’।’এখানে লিসবনের পরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংগালিদের বসবাস। ৩’।’ আলগারবে (AL GARBE) -গতপর্বে বলেছিলাম পর্তুগালকে মুসলমানরা দীর্ঘ দিন শাসন করেছে।প্রায় সাড়ে চারশত বছর শাসনের ফলে এখানকার অনেক নামই আরবি রয়েগেছে’।’আল গারব শহরটি তেমনি এক শহর’।’এটা ভ্রমন পিয়াসীদের জন্য অন্যতম আকর্ষনিয় শহর’।’এখানে ও অল্পসংখ্যক বাংলাদেশিদের বসবাস রয়েছে। ৪’।’ আসুস -পর্তুগালে আসুস ও মাদেইরা নামক দুইটি দ্বিপ রয়েছে যা স্বায়ত্ব-শাসিত এবং পর্তুগালের মূল ভূখন্ড থেকে অনেক দূরে অবস্থিত’।’ বিমানে প্রায় আড়াই ঘন্টা সময় লাগে এই দ্বিপ শহরে পৌছতে’।’এখানে ও একসময় অনেক বাঙ্গালির আবাস ছিল’।’বর্তমানে ও অনেক বাংলাদেশির বসবাস রয়েছে। >>>যেসব কারনে ইমিগ্রান্টরা পর্তুগালে – একসময়ের পর্তুগিজ কলোনি ব্রাজিল,মুজাম্বিক,কাবু-ভেরদে,গিনে-ভিসাও,পুর্ব তিমুর,মেকাও,ইন্ডিয়ার গোয়া প্রমুখ জায়গার অনেক লোক ই এখানে বসবাস করছে অনেক দিন ধরে এমনকি কারো কারো দুই পুরুষ ধরে এখানে বসবাস করছে’।’এক সময় পর্তুগিজ কলোনি হওয়ার কারনে এদের ভাষা ও পর্তুগিজ হওয়ায় এরা অনেকেই এখানে বসবাস করতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে’।’তার বাইরে ও এখানে বাংলাদেশ,ভারত,পাকিস্থান,নেপাল সহ আরো অনেক দেশের লোক বাস কর’।’তবে সবচেয়ে বেশি ইমিগ্রান্ট হচ্ছে চীনের’।’বলতে গেলে এখানকার সব বড়বড় ব্যাবসা-বানিজ্যের নিয়্নত্রক হচ্ছে এই নাকবোচা এবং নিরীহ টাইপ মানুষগুলো। যেহেতু পর্তুগাল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ সমুহের অন্যতম কাজেই এখান কার নাগরিকরা ইউরোপিয়ান আইন অনুযায়ি সহজেই ইউরোপের অন্যান্য দেশ সমুহে চাকুরি/ব্যবসা-বানিজ্য করতে পারে’।’পর্তুগালের ইমিগ্র্যেশন আইন অনুযায়ি যেকেউ যদি বৈধভাবে ইউরোপের যেকোন দেশে প্রবেশ করে এবং পর্তুগালে ছয়মাস অবস্থান করে সরকার নির্ধারিত ট্যাক্স পরিশোধ করে তাহলে সে এখানকার রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করতে পারে’।’কেউ যদি ছয় বছর এই রেসিডেন্সি নিয়ে বসবাস করে এবং তার বিরুদ্বে কোন ক্রাইমে জড়িত থাকার প্রমান না থাকে তাহলে সে পর্তুগিজ ন্যাশনালিটি পেতে পারে’।’ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেমন ইতালি,গ্রিস,ফ্রান্স,স্পেন সহ অন্যান্য দেশে যেহেতু নাগরিকত্ব পাওয়াটা অনেক জটিল এবং অনেক লংপ্রসেস কাজেই যারা ইউরোপে স্থায়িভাবে বসবাস করতে চায় তারা সাধারনত পর্তুগালকেই বেছে নেয়’।’পর্তুগিজ পার্সপোর্ট ধারী বাঙ্গালিদের সংখ্যা অনেক যারা এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে ইউ/কে সুইজারল্যন্ড/নরওয়ে/সুইডেন সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন তাছাড়া ব্যবসা-বানিজ্য করাটা ও এখানে অনেক সহজ বিধায় বাংলাদেশিরা এখানে সহজেই নাগরিকত্ব পাওয়ার আগ পর্যন্ত থাকতে পারে আর এই কারনে ই মূলত এখানে বাংলাদেশিরা অভিবাসি হয়। >>>বাঙ্গালিদের জীবন-মান – রাজধানি লিসবনে প্রায় ৮০০/১০০০ বাংলাদেশির বসবাস আছে’।’সেন্ট্রাল লিসবনের মারতিম মনিজ নামক স্থানেই মূলত বাঙ্গালিদের মূল আবাস’।’তাছাড়া আরিয়স নামক স্থানে ও অনেকের বসবাস রয়েছে’।’কাজের জায়গার সংকট,স্বল্প বেতন,ভাষাগত জটিলতা ইত্যাদি কারনে মূলত এখানকার বেশিরভাগ বাংলাদেশি ব্যবসা-বানিজ্যের সাথে জড়িত’।’তাছাড়া ব্যবসা করাটা এখানে অনেক সহজ’।’অনেক বড়বড় বাংগালি হোল-সেলার রয়েছেন এখানে যারা বিশাল বিশাল বড়বড় শো-রুমের মালিক’।’এখানকার বাঙ্গালিরা মূলত কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা,কসমেটিক্স,গ্রোসারি শপ,কাবাব শপ এবং ট্যুরিস্ট দোকানের ব্যবসার সাথে জড়িত’।’তাছাড়া স্বল্পসংখ্যক রেষ্টুরেন্ট,ইন্টারনেটের দোকান এবং বিভিন্ন মেলায় খেলনা/প্রয়োজনিয় দ্রব্যাদির স্টলের ব্যবসা ও রয়েছে অনেকের’।’তাছাড়া বাংগালি অধ্যুষিত এলাকায় বেশ কয়েকটি বাঙ্গালি মাছ-মাংসের ও অন্যান্য দেশি দ্রব্যাদির দোকান ও রয়েছে। >>>সামাজিক কার্যক্রম – >বাংলাদেশ কমিউনিটি অফ পর্তুগালঃ২০১১ সালের শুরুতে এখানে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিদের নিয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি অফ পর্তুগালের’ নতুন কমিঠি গঠিত হয় নির্বাচনের মাধ্যমে’।’কমিউনিটির সিনিয়র ব্যক্তিত্বদের সমন্বয়ে গঠন করা হয় নির্বাচন কমিঠি’।’নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি এক প্যনেল এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত এক প্যনেল এই দুই প্যনেলে নির্বাচন অনুষ্টিত হয় বিপুল উদ্দিপনায়’।’প্রায় ১৪শত ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যনেলকে নির্বাচিত করে অনেক আশা-ভরসা নিয়ে’।’দুর্ভাগ্যক্রমে নির্বাচনের অল্পদিন পরেই সভাপতি সহ কমিঠির অনেকে ই সপরিবারে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছেন’।’ >খুববেশি মানুষ না হওয়ায় এখানে সকলেই প্রায় একজন আরেকজনের পরিচিত’।’ব্যবসা-বানিজ্য/কাজের ফাকে ও এখানে বাংগালিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবস,ধর্মীয় দিবস সমুহ পালন করে থাকে।প্রায় সব অনুষ্টানের শেষেই খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন থাকে’।’বিভিন্ন রাজনৈতিক দল/জেলা ভিত্তিক সংগঠন সমুহ এসব অনুষ্টানের আয়োজন করে থাকে’।’ এই উপলক্ষ্যে বিভিন্ন হল/রেস্টুরেন্ট ভাড়া ও করা হয়। >বিচার/শালিসঃভাষা এবং আইনি জটিলতা থাকার কারনে এখানকার বাঙ্গালিদের নিজেদের মধ্যে সংগঠিত আর্থিক/সামাজিক যেকোন সমস্যা সমাধানকল্পে পুলিশের আশ্রয়ে না গিয়ে প্রথমে চেষ্টা করে সিনিয়র মুরব্বিদের দ্বারা সমাধান করার জন্যে’।’বাংলাদেশের গ্রাম্য শালিসের মত এখানে ও প্রায় একই ভাবে শালিস-বিচার হয়’।’যেকোন রবিবারে হয় কোন হল ভাড়া করে অথবা কারো বাসায় এসব শালিস অনুষ্টিত হয় এবং অধিকাংশক্ষেত্রেই বিচারপ্রার্থী সঠিক বিচার পান’।’ >>>রাজনৈতিক কার্যক্রম – এখানে মুলত আওয়ামীলিগ, বিএনপি এবং ইসলামিক ফোরামের নামে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে’।’বিভিন্ন দলীয় এবং জাতীয় দিবস সমুহ পালন করার মধ্যেই সীমাবদ্ব এদের কার্যক্রম’।’বিএনপির ঐক্যব্দ্ব কমিঠি থাকলে ও বহুধাবিভক্ত আওয়ামীলিগের অবস্থান এখানে আর সুসংঠিত থাকায় জামায়াত এখানে ভালই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে’।’গতবছর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রি ডা,দিপু মনি,বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক এখানে এসে দলীয় প্রোগ্রাম করে গেছেন’।’ >>>ধর্মীয় কার্যক্রম – লিসবন শহরে বাঙ্গালিদের দুইটি মসজিদ রয়েছে’।’একটার নাম বায়তুল মোকাররাম জামে মসজিদ অন্যটা মারতিম মনিজ জামে মসজিদ হিসেবে পরিচিত’।’পাচ ওয়াক্ত নামাজ সহ জুমার নামাজে মসজিদ দুটোয় মুসাল্লির উপস্থিতি থাকে অনেক’।’তাছাড়া রমজানে দুই মসজিদেই ইফতারের ব্যবস্থা থাকে এবং বলা যায় প্রায় সকল বাঙ্গালিরাই মসজিদে ইফতারিতে অংশ নেয়’।’দুই মসজিদ মিলিয়ে প্রায় ৫/৬শত মানুষ ইফতারিতে অংশ নেয়’।’দুই ঈদের নামাজ মারতিম মনিজ পার্কে বিশাল বড় আকারে অনুষ্টিত হয় যেখানে বাঙালি ছাড়া ও অন্যান্য দেশের মুসল্লিরা অংশ নিয়ে থাকে’।’তাছাড়া অনেকে কুরবানি ও দিয়ে থাকেন। পর্তু (PORTO) শহরে ও বাঙ্গালিদের দ্বারা প্রতিষ্টিত একটি জামে মসজিদ রয়েছে। >>>একটু দুঃখ এবং…… >এখানে অবস্থানরত কিছু অসাধু সুবিধাভোগি ব্যক্তির কারনে অনেককেই অনেক সময় নানা ধরনের হয়রানির স্বীকার হতে হয় এমনকি অনেকে স্বর্বস্ব ও খোইয়েছেন বিভিন্ন সময়ে’।’তবে আশার বিষয় ইদানিং এই সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। >দুই জন বাংলাদেশি এখানে স্বদেশীয় দুর্বৃত্তদের হাতে ইতিপূর্বে নিহত হয়েছেন’।’যা এই বিদেশ বিভুইয়ে আমাদের মাথাকে হেট করে দেয়। >অফিসিলায়াল প্রয়োজনে/ইমিগ্র্যশন পারপাসে যেকোন সময় ই বাঙ্গালিদের জন্য দরকার একটি স্বদেশীয় দুতাবাস’।’দুতাবাস না থাকলে ও আগে এখানে একটি কনস্যুলার ছিল যা দিয়ে আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে নিতাম’।’বাংলাদেশের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রি ডা,দিপু মনি এখানে এসে যাওয়ার সময় আমাদের এই আশার মোমটুকু ও নিয়ে গেলেন নিছক রাজনৈতিক কারনে’।’ফলে আজ আমাদের একটু কাজের জন্য হয় প্যরিস অথবা স্পেনে দৌড়াতে হয়। >>>পরিশিষ্ট —- সকলের কাছেই আমাদের কামনা, দোয়া করবেন যাতে আমরা যারা এখানে বসবাস করছি সকলেই যাতে ভাল থাকি এই প্রত্যাশায়……………।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.