ছোট্ট একটা শিশু ঘন তুষার থেকে বাঁচতে তার শ্বেতভল্লুক মায়ের পেছনে একরকম ঝুলেই আছে- পাশের এ ছবিটি তুলেছেন সুইজারল্যান্ডের আলোকচিত্রী ডেইজি গিলার্ডিনি। কানাডার ম্যানিটোবার ওয়াপুস্ক ন্যাশনাল পার্কে তোলা এই ছবিটি মনোনীত হয়েছে পিপলস চয়েজ অ্যাওয়ার্ড-এর ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার’ প্রতিযোগিতার জন্য।
প্রতিযোগিতার জন্য বিশ্বের ৯৫টি দেশ থেকে জমা পড়া প্রায় ৫০ হাজার ছবি থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছে এই ছবিটি ছাড়াও আরও ২৪টি অসাধারণ ছবি। লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে প্রদর্শনীর জন্য ছবিগুলো রাখা হয়েছে।
চলুন দেখে নেই বন্যপ্রাণী নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন কোণ থেকে বাছাই করা বাকি ২৪টি মনোমুগ্ধকর আলোকচিত্র।
মায়ের হাত (A mother’s hand)
রেনোদিয়ের শীতকাল বেড়াতে গিয়েছিলেন জাপানের জিগোকুদানি স্নো মাংকি পার্কে। সেখানেই তিনি দেখতে পান একটি শিশু জাপানি মাকাকু বানর আরামে ঘুমাচ্ছে; আর তার মা সাবধানতা হিসেবে একটি হাত দিয়ে তার মাথাটা ঢেকে রেখেছে।
সুযোগ সন্ধানী কুমির (Opportunistic croc)
সাউথ আফ্রিকার জিমাঙ্গা প্রাইভেট গেম রিজার্ভে ৪ মিটার লম্বা এই কুমিরের ছবি নিরাপদ দূরত্ব থেকে তুলতে গিয়েও ভয়ে কেঁপে উঠেছিলেন ফটোগ্রাফার মেট।
মৃত্যুর সঙ্গে চোখাচোখি (The stare of death)
ক্লপারস এই নু-হরিণশাবককে জন্মের কিছুক্ষণ পরই দেখতে পেয়েছিলেন সাউথ আফ্রিকার কাগালাগাডি ট্রান্সফ্রন্টিয়ার পার্কে। তখন ভাবতেও পারেননি ওই দিনই শিশুটির মৃত্যুও দেখবেন তিনি। নু-হরিণের দলটি সিংহের একটি দলের সামনে দিয়ে পার হওয়ার সময় শাবকটিকে ধরে আনে এক সিংহি। পরে একটি সিংহ সেটিকে নিয়ে যায়।
বানরের জটলা (Monkey ball)
জাপানের শোদোশিমা দ্বীপে তীব্র শীতে মাঝে মাঝে বানরেরা দল বেঁধে জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একটু উত্তাপের আশায়। ফটোগ্রাফার কোকটা ছবিটি তোলার জন্য গাছে চড়েছিলেন।
ঝড়ের সঙ্গে লড়াই (Facing the storm)
সূর্যের আলোয় ছবি তুলতে অ্যান্টার্কটিকায় গিয়েছিলেন রিয়েলে। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই তীব্র তুষারঝড়ে পড়তে হয়। এর মাঝেই ঝড়ের সঙ্গে মিলেমিশে লড়তে থাকা তিন বাচ্চা এমপেরর পেঙ্গুইনের দেখা পেয়ে যান তিনি।
ভুতুড়ে তুষার হাঁস (Ghostly snow geese)
নিউ মেক্সিকোর বোস্ক দেল আপাচে ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ রেফিউজে ভোরের আলোর গোলাপি আভায় উড়ে উড়ে পানিতে নামতে থাকা তুষার হাঁসগুলো ইল্গের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে ভুতুড়ে চেহারা নিয়ে।
বোন (Sisters)
সাউথ আফ্রিকার কাগালাগাডি ট্রান্সফ্রন্টিয়ার পার্কে একটি গাছে দু’টো পুরুষ সিংহের রেখে যাওয়া গন্ধ শুঁকে কিছুক্ষণের জন্য একই ভঙ্গিমায় আনমনা হয়ে গিয়েছিল এই দুই সিংহী।
মারমুখি (Into the fray)
চীনের কিনলিং পর্বতমালায় জাউঝি নেচার রিজার্ভে ছবি তুলতে সপ্তাহখানেকের জন্য গিয়েছিলেন ফটোগ্রাফার বেলচার। সেখানেই তিনি দেখতে পান দু’টো গোল্ডেন স্নাব-নোজড প্রজাতির বানর লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে। আর তাদেরকে পেছন থেকে উৎসাহ দিচ্ছে বেশ কয়েকটা বানর।
মুখোমুখি (Head-on)
নরওয়ের ডোভরেফজেল-সান্ডালস্ফজেল ন্যাশনাল পার্কে এই দু’টি ষাড়কে কাইসলা পেয়েছিলেন নিজস্ব বাসভূমিতে। তাদের দু’মাথার ঠোকাঠুকির তীব্র শব্দে যেন আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠছিল – জানান এই ফটোগ্রাফার।
কলোরাডো রেড (Colorado red)
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর অ্যাস্পেনে তোলা ছবিটি। কলোরাডো রেড প্রজাতির এই শিয়ালটি ক্যাজের পাশের বাসা থেকে খাবার চুরি করছিল। হঠাৎ শিয়ালটি তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকলে ক্যামেরায় ক্লিক করেন ক্যাজ।
দম্পতি (The couple)
ইন্দোনেশিয়ার বালির তুলাম্বেন উপকূলের কাছে পানির নিচে রঙিন সামুদ্রিক প্রাণী ফায়ার আর্চিনের ওপর অনিন্দ্যসুন্দর এক জোড়া কোলম্যান চিংড়ি দেখে তার ঝকঝকে ছবি তোলেন সার্টা।
তারকাখচিত জেলি (Jelly starburst)
মোজাম্বিক উপকূলের কাছেই পানির গভীরে বেড়াচ্ছিলেন মার্শাল। এমন সময় তিনি দেখতে পান কয়েকশ’ বড় জেলিফিশ দল বেঁধে সাঁতরে যাচ্ছে। জেলিফিশের গতির সুযোগ নিয়ে নিরাপদে যাতায়াত করার উদ্দেশ্যে তাদের গায়ে লেগে রয়েছে ছোট ছোট তারামাছ। রঙিন জ্বলজ্বলে জেলিফিশের গায়ে তারকাখচিত দৃশ্য দেখেই ছবি তুলে ফেলেন তিনি।
থমকে থাকা দৃষ্টি (The stand-off)
প্রজনন মৌসুমে সঙ্গী খুঁজছিল টার্কিগুলো। এই টার্কিটি সম্ভবত নিজের প্রতিবিম্ব দেখেও দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিল, সামনে দাঁড়ানো টার্কিটা তার সঙ্গী হতে এসেছে কিনা!
রাতের আঁধারে (Into the night)
গ্রীষ্মে সন্তান জন্মদান ও তাদের বড় করার উদ্দেশ্যে ২ কোটিরও বেশি মেক্সিকান ফ্রি-টেইলড বাদুড় টেক্সাসের স্যান অ্যান্টনিওর ব্র্যাকেন কেভ-এ জমায়েত হয়। সন্ধ্যা হতে না হতেই প্রতিদিন এই ক্ষুধার্ত মায়েরা ঘূর্ণি আকারে গুহা থেকে বেরিয়ে আকাশে ছড়িয়ে যায়।
কাছ থেকে উইলো (Willow up close)
উইলো গাছের বাকল থেকে পাওয়া রাসায়নিক স্যালিসিনের স্ফটিকের ছবি খুব কাছ থেকে তুলেছেন মেইটল্যান্ড। এটি থেকেই অ্যাসপিরিন তৈরি হয়।
নীল পথ (The blue trail)
কৃত্রিম আলো ব্যবহার করে মাছ ধরতে পানিতে ঝাঁপ দেয়া মাছরাঙার এই ছবিটি তোলা হয়েছে।
নজর চোখের দিকে (Eye in focus)
পানির নিচে রঙিন প্যারট ফিশের চোখের ছবি তুলেছেন ম্যাকডাওয়েল।
কুণ্ডলী (Spiral)
ব্রিস্টল ওয়ার্ম এক ধরণের সামুদ্রিক ক্রিমি। কিন্তু এর আছে রঙিন, বড় বড় কর্ষিকা, পানির নিচে যা দেখতে একেবারে রঙিন সর্পিল কুণ্ডলীর েো মনে হয়।
চোখাচোখি (Eye contact)
গাই এডওয়ার্ডেস (যুক্তরাজ্য)
গ্রিসের লেক কার্কিনিতে তোলা হয়েছে ছবিটি। ডালমেশিয়ান পেলিকান পেলিকান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় প্রজাতি।
দ্বিধা (Confusion)
রুডি হালশফ (সাউথ আফ্রিকা)
সাউথ আফ্রিকার ওয়েলগেভনডেন গেম রিজার্ভে সাউদার্ন হোয়াইট প্রজাতির এই গণ্ডার দু’টির ছবি তুলেছেন ফটোগ্রাফার। শিকারীর কবলে পড়ে বিপন্ন এই প্রাণীর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর মধ্য দিয়ে তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি।
রুচিসম্মত খাবার (Tasty delicacy)
ক্রিস্টোবাল সেরানো (স্পেন)
হামিংবার্ড উড়ে উড়েই ফুল থেকে মধু খায়। কোস্টারিকার লস কুয়েটজেলস ন্যাশনাল পার্কে তোলা ছবিটি এমনই এক দৃশ্য।
নাস্তা (Breakfast time)
কেনিয়ার নাইরোবিতে জিরাফ ম্যানর নামের রেস্টুরেন্টে মাথা ঢুকিয়ে যেন নাস্তার খোঁজই করছে স্থানীয় বিপন্নপ্রায় প্রজাতি রথসচাইল্ড জিরাফ। রেস্টুরেন্টের অতিথিরা প্রায়ই তাদের মুখে খাবার তুলে দেন।
শুঁয়োপোকা (Caterpillar curl)
রেইনহোল্ড শ্র্যাংক (অস্ট্রেলিয়া)
গ্রিসের লেক কারকিনিতে পাখির ছবি তুলতে গিয়ে এই সুন্দর ছবিটা তুলে ফেলেন শ্র্যাংক।
ডানায় রংধনু (Rainbow wings)
বিশেষ প্রজাতির এই পাখিটির ডানা আর লেজের বাইরের অংশগুলো আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়। এতে সূর্যের সাদা আলোর বর্ণালি ভেঙ্গে সাত রঙে ভাগ হয়ে যায়। সঠিক সময়ে ক্লিক করে সেই রঙিন ডানাই ফ্রেমবন্দী করেছেন আলোকচিত্রী।
২০১৭-র ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছবিগুলোর প্রদর্শনী চলবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.