ফারুক হোসেন। পেশায় সরকারি কর্মকর্তা। সপরিবারে থাকেন বড় মগবাজার এলাকায়। তিনি তার স্ত্রী ও এক মাত্র মেয়ের বায়না অনুযায়ী হাতিরঝিলে এসেছিলেন ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়তে। ফারুক হোসেনের মতো এমন অনেক পরিবার ওই ওয়াটার ট্যাক্সিতে ভ্রমণ করার জন্য গতকাল হাতিরঝিলে এসেছিলেন। ওই ওয়াটার বাস যান্ত্রিক শহর এই ঢাকার মধ্যে বসবাসকারীদের আনন্দময় ভ্রমণের সুযোগ এনে দিয়েছে। নৌপথে ওই সার্ভিস চালুর জন্য ভ্রমণকারীরা কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করেছেন। বিজয় দিবসের উপহার হিসাবে শুক্রবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল হাতিরঝিলে ৪টি ওয়াটার বাস উদ্বোধন করেন। ওই ৪টি ওয়াটার বাস এফডিসি থেকে গুলশান ১ এবং মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত যাতায়াত করবে। গতকাল সকালে হাতিরঝিলের এফডিসির মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, হাতিরঝিলের দুই পাশে চলাচলকারী টুরিস্ট বাসের স্টপেজের পাশেই তৈরি করা হয়েছে ওয়াটার ট্যাক্সি সুসজ্জিত স্টেশন। পাশেই রয়েছে কাঁচঘেরা টিকিট কাউন্টার। ভ্রমণ ইচ্ছুকদের লাইন ধরে টিকিট কাটতে দেখা গেছে। সেখানকার সবকিছুতেই কর্তৃপক্ষের মধ্যে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। ভ্রমণকারী শহিদুল ইসলাম নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, শুক্রবার রাতে টেলিভিশনে খবর পেয়েছি যে হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হয়েছে। ব্যক্তিগত কোনো কাজ না থাকায় পুরো পরিবারকে নিয়ে চলে এসেছি। তিনি আরো জানান, যান্ত্রিক এই নগরীতে সবাই কর্মব্যস্ত থাকে। পেছনে ফিরে তাকাবার কোনো সুযোগ নেই। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র এমন একটি সার্ভিস চালু হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আরো ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হলে ঢাকার সবাই বিনোদনের জন্য এই হাতিরঝিলে ছুটে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। শফিক আহমেদ নামে অপর এক ব্যবসায়ী জানান, প্রায় সময় পরিবারকে নিয়ে হাতিরঝিলে আসা হয়। কর্মব্যস্ত থাকার কারণে পরিবারকে সময় দেয়া হয় না। টুরিস্ট বাসে উঠে দেখলাম পানি পথে ওয়াটার বাস যাচ্ছে। দেখতে দৃষ্টিনন্দন মনে হয়েছে। ওয়াটার ট্যাক্সি ভ্রমণ করতেও ইচ্ছা হলো। পরে টিকিট কেটে ওয়াটার ট্যাক্সি ভ্রমণ করলাম। মীর নেসার আলী নামে এক সরকারি কর্মকর্তা তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন ওয়াটার ট্যাক্সি ভ্রমণ করার জন্য। তিনি জানান, ঢাকার মধ্যে থেকে নৌ ভ্রমণ এই প্রথম পেলাম। শীত হওয়ার কারণে হাতিরঝিলের পানি তুলনামূলকভাবে সুন্দর রয়েছে। চারদিকে উঁচু দালান কোঠার মধ্যে নৌপথে ভ্রমণ রোমাঞ্চকর মনে হয়েছে। মনে হচ্ছে ঢাকা এক আন্তর্জাতিক নগরী। নগরবাসীকে এমন সেবা দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনেক ধন্যবাদ জানাতেই হয়। তবে তিনি ওয়াটার ট্যাক্সি ভাড়া কিছুটা কম রাখার জন্য কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। ওয়াটার ট্যাক্সির ইনচার্জ প্রিন্স মাহমুদ মানবজমিনকে জানান, খুব দ্রুত গতিতে নয় আবার খুব আস্তে আস্তেও নয়। স্বাভাবিক গতিতে এফডিসি থেকে মেরুল বাড্ডা যেতে মাত্র ১২ থেকে ১৩ মিনিট লাগছে। তিনি আরো জানান, নতুন সার্ভিস চালু হওয়ার কারণে অনেকেই টুরিস্ট বাস ব্যবহার না করে ওয়াটার বাসে চড়ছেন। এতে কিছুটা ভিড় বাড়ছে। তবে আমরা সব কিছু শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার চেষ্টা করছি। প্রথম হওয়ার কারণে আমাদের সব কিছু গুছিয়ে নিতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। তবে আমরা এই সার্ভিসকে আরো উন্নত মানের করতে চাই। টিকিট বিক্রেতা সোহেল রানা জানান, দুই রুটে ওই ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস চালু হয়েছে। এফডিসি থেকে গুলশান ১ এর ভাড়া ২৫ টাকা। এফডিসি থেকে মেরুল বাড্ডার ভাড়া হচ্ছে ৩০ টাকা। প্রত্যেক রুটে দুইটি করে ট্যাক্সি করে মোট ৪টি ট্যাক্সি ওয়াটার বাস রাখা রয়েছে। ওয়াটার ট্যাক্সি চালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, নৌপথ হওয়ার কারণে ট্যাক্সির মধ্যে অনেক আনন্দ প্রকাশ করে সেলফি তুলে। অনেকেই পানি ছুঁয়ে উল্লাস প্রকাশ করে। যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে এজন্য ওয়াটার বাসে দুইজন করে হেলপার রাখা হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.