বিপুলসংখ্যক মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যপ্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকায় টেলিযোগাযোগ খাতের তথ্য চুরিতে সাইবার অপরাধীদের নজর দিন দিন বাড়ছে। আর এ খাতের তথ্য চুরিতে টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত কর্মীদের কাজে লাগাচ্ছে হ্যাকাররা। এমন তথ্য উঠে এসেছে বহুজাতিক সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কি ল্যাবের ‘টেলিযোগাযোগ খাতের সাইবার ঝুঁকি’ শীর্ষক এক গবেষণায়। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে এখন যত উদ্দেশ্যমূলক সাইবার হামলা চালানো হচ্ছে, তার ৩৮ শতাংশ ক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ খাতে কর্মরত কর্মীরা জড়িত। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে যেসব সাইবার হামলা চালানো হয়, সেগুলোকে বলা হয় ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সার্ভিস (ডিডিওএস) অ্যাটাক। ডিডিওএস ছাড়া সার্বিকভাবে বিশ্বে এখন যত সাইবার হামলা হচ্ছে, তার ২৮ শতাংশেরও সঙ্গে টেলিযোগাযোগ খাতের কর্মীরাও জড়িত বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। সাইবার সন্ত্রাসী বা হ্যাকারদের সঙ্গে কেন টেলিযোগাযোগ খাতের কর্মীরা যুক্ত হচ্ছেন, সেটির কারণও তুলে ধরা হয়েছে গবেষণায়। তাঁদের মধ্যে একটি অংশ হ্যাকারদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে বা ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়ে তথ্য দিতে বাধ্য হচ্ছে। আরেকটি অংশ শুধু বেশি অর্থ পাওয়ার লোভে বিভিন্ন তথ্য চুরি করে হ্যাকারদের হাতে তুলে দিচ্ছে। কর্মীরা কীভাবে হ্যাকারদের ব্ল্যাকমেলের শিকার হচ্ছেন, সে বিষয়ে গবেষণায় বলা হয়েছে, আগে থেকে পাওয়া সাধারণ কিছু তথ্য ব্যবহার করে সুকৌশলে একজন কর্মীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখায় হ্যাকাররা। ওই প্রলোভনে কেউ রাজি হলে বা একবার হ্যাকারদের জালে ধরা পড়লে তখন নানাভাবে কর্মীদের কাছে তথ্য বের করতে থাকে হ্যাকাররা। তথ্য দিতে রাজি না হলে অনেক সময় ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার হুমকিও দেয় হ্যাকাররা। তবে যেসব কর্মী শুধু অর্থের জন্য হ্যাকারদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন, তাঁরা এ খাতের জন্য বেশি উদ্বেগের বলে উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণায়। এই গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে শুধু টেলিযোগাযোগ খাতে সাইবার হামলার সংখ্যা ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। এসব হামলার মাধ্যমে পাওয়া গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকাররা নানাভাবে ব্যবহার করে। বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটানোর ক্ষেত্রে এসব তথ্য খুবই সহায়ক। এ জন্যই টেলিযোগাযোগ খাতের তথ্য চুরিতে হ্যাকারদের আগ্রহ বাড়ছে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। গবেষণায় কর্মীদের এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার জন্য বেশ কিছু পরামর্শও তুলে ধরা হয়েছে। স্পর্শকাতর তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যেসব স্থান থেকে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি যাওয়ার আশঙ্কা আছে, সেখানে কর্মী নিয়োগে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়মিত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইটি) ব্যবস্থাপনার নিরীক্ষা করা, সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়ে কর্মীদের সতর্ক করার বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে গবেষণায়। টেলিযোগাযোগ খাতের সাইবার নিরাপত্তাঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের প্রধান করপোরেট অ্যাফেয়ার্স মাহমুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের একটি আলাদা বিভাগ রয়েছে, যারা সব সময় নিত্যনতুন ঝুঁকির বিষয় নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে কর্মীদের সচেতন করতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.