শহীদ মিনারের আদলে ইট-সিমেন্টে নির্মিত হয়েছে বগুড়া শহরের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের বেদি। স্তম্ভের ওপরে শহীদদের নামফলক মুছে গেছে অনেক আগেই। বেদির ওপর দিয়ে ফাঁকা সুড়ঙ্গপথ। সেই পথে সামনে পা বাড়ালেই একাত্তরের শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমি। সুড়ঙ্গপথটি তৈরি হয়েছে স্থানীয় রেলবস্তির লোকজনের চলাচলের জন্য। বধ্যভূমির বেদি ঘেঁষে চটের তৈরি শৌচাগার বানিয়েছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। এদিকে বধ্যভূমির মাত্র ২০ গজ দূরেই শহরের ব্যস্ততম স্টেশন সড়ক। সেই রাস্তার প্রায় পুরোটাই দখল করে গড়ে উঠেছে ভাঙারির দোকান, রিকশা-টেম্পো গ্যারেজ। ৬ ডিসেম্বর সরেজমিনে গিয়ে বগুড়া শহরের বধ্যভূমির এমন অযত্ন-অবহেলা আর বেদখলের চিত্র পাওয়া গেছে। একাত্তর সালের ৩০ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের নীরব সাক্ষী এই বধ্যভূমিতে ঘুমিয়ে আছেন তৎকালীন মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের পরিদর্শক আবদুস সাত্তার, আবদুল কাদের, আবদুস সালাম, সমবায় অধিদপ্তরের জেলা পরিদর্শক আবদুল গনি, আবদুল মতিন সুজা, মোহর আলী শেখ এবং অজ্ঞাত একজন শহীদ। তাঁরা সবাই চকসূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, বগুড়া রেলস্টেশন সড়কের ফলবাজার পেরিয়েই দক্ষিণে কাঁচা রাস্তা। সেই কাঁচা রাস্তার সিংহভাগ দখল করে গড়ে উঠেছে ভাঙারির দোকান। কাঁচা রাস্তা ধরে ২০ গজ সামনে একাত্তরের শহীদ বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ। স্মৃতিস্তম্ভের সামনের চত্বরে রেলের জায়গায় গড়ে উঠেছে রিকশার গ্যারেজ। গ্যারেজের সামনে ৭০-৮০টি রিকশা রাখতে দেখা গেছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, সন্ধ্যার পর বধ্যভূমিতে মাদকসেবী ও বখাটেদের আড্ডা বসে। আর দিনে স্মৃতিস্তম্ভের বেদিতে তাস খেলেন রিকশাচালকেরা। স্মৃতিস্তম্ভঘেঁষা অস্থায়ী শৌচাগার ব্যবহার করতে আসা লাকড়ির দোকানি আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আশপাশে বস্তি আর দোকানপাট গড়ে উঠেছে। কোথাও শৌচাগার নেই। এ কারণে সবাই মিলে এখানে অস্থায়ী শৌচাগার তৈরি করেছেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বগুড়া সদর উপজেলা কমান্ডার আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং গণকবরটি সংরক্ষণের জন্য নানা জায়গায় ধরনা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। বগুড়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সালাহ্উদ্দিন আহমদ বলেন, দুই বছর আগে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তর একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। তবে ওই প্রকল্প তালিকায় বগুড়ার কোনো বধ্যভূমি ছিল না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.