হোলি হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের একটি অন্যতম উৎসব যা সাধারণত ‘হোলিকা’ নামে সুপরিচিত । চৈত্র মাসের শেষ পূর্ণিমাতে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের হলি খেলা অনুষ্ঠিত হয় । একে দোল পূর্ণিমাও বলা হয়ে থাকে । এই উৎসবের ইতিহাসও পৌরনিক এবং চমকপ্রদ । যুগ যুগ ধরে হিন্দু সম্প্রদায় পালন এর আসছে হোলি উৎসব। এই হোলি উৎসবে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা নানা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পালন করে থাকে। পৌরনিক কাহিনীগুলোর দিকে ফিরে তাকালে এই হলি উৎসবকে ঘিরে দুইটি উল্লেখযোগ্য কাহিনী বের হয়ে আসে । একটি প্রহ্লাদ ও হোলিকার কাহিনী এবং অন্যটি রাধা-কৃষ্ণের কাহিনী । হোলি মূলত বসন্তের উৎসব হলেও হোলিকে রংয়ের উৎসবও বলা হয়ে থাকে । ….প্রহ্লাদ ও হোলিকা কাহিনীঃ কথিত আছে পৌরনিক রাজা হিরায়ানকশিপু একদিন দাবী করে বসলেন যে এখন থেকে তাকে ঈশ্বর হিসেবে অর্চণা বা পুজো করতে হবে । তিনি নিজেকে বিশ্বব্রহ্মান্ডের প্রভু দাবী করেন। কিন্তু বাদ সেধে বসলো তার ছেলে রাজকুমার প্রহ্লাদ । সে মহান বিষ্ণু ছাড়া আর কাউকে ঈশ্বর মানতে নারাজ । রাজা তার ছেলেকে নানাভাবে চেষ্টা করলেন তার সামনে নতজানু করার কিন্তু প্রহ্লাদ তা প্রত্যাখান করে । ফলশ্রুতিতে রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে তার সৈন্য বাহিনীকে নির্দেশ দেয় প্রহ্লাদকে হত্যা করার। এভাবে নানাভাবে রাজা ছেলেকে হত্যার চেষ্টা করে কিন্তু প্রতিবার তার চেষ্টা বিফলে যায়। নিরুপায় হয়ে দুষ্টু রাজা রাজকুমারকে হত্যার উদ্দেশ্যে যজ্ঞের আগুনে নিক্ষেপের জন্য তার বোন হোলিকা ’কে নিযুক্ত করে । হোলিকা প্রতিজ্ঞা করে রাজকুমারকে হত্যার । সে ঈশ্বরের কাছ হতে বর পেয়েছিল এবং সেই বরের প্রেক্ষিতে সে জানতো কখনও আগুনে পুড়বে না । সে প্রহ্লাদকে ধরে অট্র হাসি দিয়ে আগুনে ঝাঁপ দেয় । প্রহ্লাদ এবারও বিষ্ণুকে ডাক দেয় এবং বিষ্ণু এবারও তাকে বাঁচায় । কিন্তু আগুনে ভস্ম হয়ে যায় হোলিকা । রাধা-কৃষ্ণ কাহিনীঃ এটাও বেশ প্রচলিত । হিন্দু অবতার শ্রীকৃষ্ণ একদিন বৃন্দাবনে রাধা এবং তার সখীদের সঙ্গে খেলা করছিলেন। সে সময় হঠাৎ শ্রী রাধা এক বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখী হয়ে লজ্জিত হন । শ্রীকৃষ্ণের মাথায় তখন একটি বুদ্ধি আসে। তিনি রাধার লজ্জা ঢাকতে এবং বিষয়টি তার সখীদের কাছ হতে শ্রী রাধা এবং তার সখীদের সাথে আবীর খেলা শুরু করেন । তাদের সবাইকে আবীর দিয়ে রাঙিয়ে দেন । শ্রীকৃষ্ণ-শ্রীরাধা এবং তার সখীদের এই আবীর খেলার স্মরণে হিন্দু সম্প্রদায় এই হোলি উৎসব পালন করে থাকে বলে প্রচলিত আছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.