সম্প্রতি হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে পানি সম্মেলন ২০১৬-এর উদ্বোধনী অধিবেশনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পানি ব্যবস্থাপনায় সর্বজনীন বৈশ্বিক উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। অধিবেশনে ৭ দফা এজেন্ডা উত্থাপন করে তিনি বিশ্বনেতাদের তাদের দেশের পলিসিতে পানি সম্পর্কিত বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। একাধিক দেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য বণ্টন একটি জটিল বিষয়। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, উজানের দেশ ভাটির দেশের সঙ্গে আলোচনা না করেই অভিন্ন নদীতে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে অথবা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে। আমরাও এর ভুক্তভোগী। এ প্রেক্ষাপটে পানির ন্যায্য বণ্টনের গুরুত্বটি স্পষ্ট হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেছেন, দুষ্প্রাপ্যতা সব সময় পানি সংকটের প্রধান কারণ নয়। বরং এ সমস্যা ন্যায্য বণ্টনের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত। এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে যথাযথ নীতিমালা প্রণয়নে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে উদারতার পরিচয় দিলে অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক অনেক জটিলতা দূর হতে পারে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ের যে কোনো উন্নয়ন প্রচেষ্টায় পানির ভূমিকা বহুল আলোচিত। কাজেই কোনো জনগোষ্ঠী পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে টেকসই উন্নয়ন কতভাবে ব্যাহত হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। বর্তমানে বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং স্যানিটেশন সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যা মোকাবেলা করছে। জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকির মুখোমুখি দেশগুলো বিশুদ্ধ পানি সম্পর্কিত নানা রকম সমস্যা মোকাবেলা করছে। এসব সমস্যা এককভাবে কোনো দেশের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। সমস্যাগুলোর সমাধানে শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্য অনেক কারণে বিভিন্ন দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে সীমিত পানির ব্যবহারে যাতে শস্য উৎপাদন করা যায়- এমন নতুন নতুন জাত আবিষ্কারও জরুরি হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে গবেষকরা অনেকদিন ধরে কাজ করে এলেও এক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে নামেমাত্র। বিভিন্ন দেশের যৌথ গবেষণা ছাড়া এসব খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনে যে অনিশ্চয়তা রয়েছে তাও বহুল আলোচিত। পানির সংকটে উল্লিখিত সমস্যাগুলো তীব্র আকার ধারণ করে। এ সংকট দীর্ঘদিন চলতে থাকলে দেশে দেশে টেকসই উন্নয়ন ব্যাহত হবে। এসব সমস্যার সমাধানে করণীয় নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর হাঙ্গেরি সফরকালে ঢাকা ও বুদাপেস্টের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর ফলে দু’দেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ হবে এটা আশা করা যায়। বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে তা খুঁজে বের করতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় হাঙ্গেরির উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। কাজেই দেশটির প্রযুক্তির ব্যবহারে যৌথ উদ্যোগ নিয়ে উভয় রাষ্ট্রই লাভবান হতে পারে। হাঙ্গেরির বাজারে বাংলাদেশের কী কী পণ্য রফতানি করা যায়, তা খতিয়ে দেখা দরকার। পর্যটন ক্ষেত্রেও দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলা সম্ভব। আগামীতে এসব ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে, এটাই কাম্য।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.