তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক তেলের উৎপাদন কমাতে সম্মত হওয়ার পর তেলের দাম আরও বেড়েছে। বুধবার এই সমঝোতায় পৌঁছায় সদস্য দেশগুলো। বিবিসির খবরে বলা হয়, প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ৪.৫% বেড়ে ৫৪.১৯ ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা এ বছরের সর্বোচ্চ। এর আগে বুধবার বেড়েছিল ৮.৮ শতাংশ। ৮ বছরে এ প্রথম তেলের উৎপাদন হ্রাসে সম্মত হয়েছে ওপেক। এ নিয়ে একটি চুক্তিতেও উপনীত হয়েছে সংগঠনটি। চুক্তির উদ্দেশ্য বিশ্বজুড়ে তেলের দাম হ্রাসের লাগাম টেনে ধরা। চুক্তি মোতাবেক, জানুয়ারি থেকে প্রতিদিন ১২ লাখ ব্যারেল কম উত্তোলন করা হবে। তবে কিছু বিশ্লেষক এই পদক্ষেপের সফল হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ইটিএক্স ক্যাপিটালের নেইল উইলসন বলেন, ‘এ চুক্তির মূল বিষয় হলো মেনে চলা। এ বিষয়টি এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য যে, উৎপাদন হ্রাসের চুক্তি মেনে চলার সুনাম ওপেক সদস্যদের খুব একটা নেই।’ মার্কিন অশোধিত তেলের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার পর গতকাল আরও এক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে তেলের দাম। ৪.৩ শতাংশ বেড়ে এখন প্রতি ব্যারেল বিক্রি হচ্ছে ৫১.৫৪ ডলারে। মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক জেফারিজের জ্যাসন গ্যামল বলেন, ‘একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছে ওপেক। এ কারণে আপাতত তেলের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে।’ তবে ওপেকের চুক্তি অনেকখানি নির্ভর করছে সৌদি আরবের উপর। দেশটি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ। নিজেদের উৎপাদন ৪.৫ শতাংশ হ্রাসে সম্মত হয়েছে সৌদি আরব। অর্থাৎ, প্রতিদিন ৫ লাখ ব্যারেল কম তেল উত্তোলন করবে দেশটি। আবার ওপেক-এর বাইরের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোকেও এখানে আমলে নিতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা উৎপাদন কমিয়ে প্রতিদিন ৬ লাখ ব্যারেল উত্তোলন করবে। এ দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া এখন পর্যন্ত প্রতিদিন ৩ লাখ ব্যারেল কম উত্তোলন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বর্তমানে দেশটি প্রতিদিন ১ কোটি ব্যারেলেরও বেশি তেল উত্তোলন করে। তবে রাশিয়া ছাড়া আর কোন দেশ তেল উৎপাদন কমাবে, তা নিশ্চিত নয়। তবে তেলের দাম বাড়লেও অনেক বাজার বিশ্লেষক এখনও সন্দিহান। তারা বলছেন, তেলের দাম সবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের পর্যায়ে পৌঁছেছে। উইলসন বলছেন, এই চুক্তির আওতায় যেসব দেশ নেই, সেসব দেশ এখন তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে দেবে। কারণ, তেলের দাম এখন বেড়েছে। এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে। ফলে অতি-উৎপাদন হ্রাসের প্রক্রিয়া হোঁচট খেতে পারে। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া বলেছে তারা প্রতিদিন ৩ লাখ ব্যারেল কম উত্তোলন করবে। কিন্তু আরও ৩ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমাতে হবে প্রতিদিন। আমরা জানি না অপেক-এর বাইরের কোন কোন দেশ এই উৎপাদন হ্রাস করবে।’ তার মতে, ‘ওপেক জানিয়েছে যে, উৎপাদন হ্রাসের ওপর চুক্তির স্থায়িত্ব নির্ভরশীল। তাই আমরা এখনও জানি না, যদি উৎপাদন হ্রাসে এ চুক্তি সফল না হয়, তাহলে কতদিন চুক্তি টিকবে।’ তবে ওপেক জানিয়েছে, ৯ই ডিসেম্বর থেকে বাইরের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে তারা। ২০১৭ সালের মে মাসে চুক্তির অগ্রগতি পর্যালোচনায় আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.