যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার বিরোধ বেশ পুরোনো। সেই সুবাদে দেশ দুটির রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা লক্ষণীয়।
রাশিয়া বা দেশটির প্রেসিডেন্টের প্রশংসাকারীকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অনেকটা বাঁকা চোখে দেখার চল আছে। অথচ খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এখন প্রকাশ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের গুণগান চলে।
পুতিনের প্রশংসাকারী কোনো সাদামাটা মার্কিন নাগরিক নন। তিনি স্বয়ং দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট।
রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকে পুতিনের প্রতি তাঁর অনুরাগ খোলামেলাভাবে প্রকাশ করেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে ট্রাম্পকে একজন ‘মেধাবী মানুষ’ বলে আখ্যা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট। পুতিনের দেওয়া এই অভিধাকে ‘বিরাট সম্মান’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার পর আরও জোরেশোরে পুতিনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন ট্রাম্প।
নির্বাচনী প্রচারের একপর্যায়ে ট্রাম্প বলেন, পুতিন অনেক বড় নেতা। শক্তিশালী নেতা। নিজ দেশের ওপর তাঁর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তাঁর পক্ষে ৮২ শতাংশ জনসমর্থন আছে। তিনি দারুণ করছেন। রাশিয়া পুনর্গঠন করছেন।
পুতিনের গুণগান করতে গিয়ে নিজ দেশের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে নিচে নামাতেও দ্বিধা করেননি ট্রাম্প। গত সেপ্টেম্বরে এনবিসি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, ওবামার চেয়ে পুতিন অনেক বড় নেতা, শক্তিমান নেতা।
ট্রাম্পের এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির হিলারি ক্লিনটন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্য শুধু দেশপ্রেমবর্জিতই নয়, ভয়ংকরও।
সমালোচনা সত্ত্বেও পুতিনের ব্যাপারে ট্রাম্প তাঁর ইতিবাচক মনোভাব বদলাননি।
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন পুতিন। ট্রাম্পকে তিনি অভিনন্দন জানান। এই ফোনালাপে দুই নেতা ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে একমত হন। ট্রাম্প বলেন, তিনি রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক চান।
পুতিনের প্রতি ট্রাম্পের এই অনুরাগ নিয়ে নানাজন নানা কথা বলছেন। বিশ্লেষকেরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা দাঁড় করাচ্ছেন।
সাংবাদিক ও বিশ্লেষক জামেলি বাউইর ভাষ্য, কর্তৃত্বপরায়ণ শাসকদের প্রতি ট্রাম্পের পক্ষপাত রয়েছে। তাঁর চিন্তা ও কথায় বিষয়টি স্পষ্ট। তাঁকে সাদ্দাম হোসেন, মুয়াম্মার গাদ্দাফি, কিম জং উনের মতো শাসকদের প্রশংসা করতে দেখা গেছে। তবে সবার চেয়ে পুতিনের প্রতি তাঁর অনুরাগ একটু বেশিই। পুতিনকে ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে শ্রদ্ধা করেন ট্রাম্প।
মার্কিন কলাম লেখক ইউজিন রবিনসনের মতে, পুতিনের কেতাদুরস্ত ভঙ্গির ভক্ত হতে পারেন ট্রাম্প। আবার রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক স্বার্থও থাকতে পারে।
পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের চারিত্রিক মিল রয়েছে বলে মত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ স্কুলের আন্তর্জাতিক অধ্যয়নের অধ্যাপক নিনা ক্রুশ্চেভা। রুশ বংশোদ্ভূত এই মার্কিনের ভাষ্য, পুতিনের মতো শক্তিশালী নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যাঙ্গেলা ই. স্টেনট বলেন, পুতিন তাঁর চাওয়া অনুযায়ী সব কাজ করেন। এ কারণে ট্রাম্প সত্যিকার অর্থেই পুতিনের প্রশংসা করেন।
পুতিনের প্রতি ট্রাম্প এতটা গদগদ কেন, তার সুনিশ্চিত উত্তর আপাতত নেই।
আলোচক-সমালোচকদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের বাইরে ট্রাম্পের নিজের কথাও তো শোনা দরকার।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসের দপ্তরে পত্রিকাটির সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে পারলে আমার খুব ভালো লাগবে। আমার মনে হয়, তারাও আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে পারলে খুশি হবে। এটা উভয়ের স্বার্থে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণার সময় যখন লোকে বলত, ট্রাম্প পুতিনকে ভালোবাসেন, পুতিনও ট্রাম্পকে ভালোবাসেন। হাজার হাজার মানুষের সামনে বলতে চাই, আমি পুতিনকে ভালোবাসি। রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি হলে ব্যাপারটা কি ভালো হবে না? আমরা যদি একসঙ্গে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করি, তাহলে কি ব্যাপারটা ভালো হবে না?’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.