১. দাঁত ব্রাশ অনেকক্ষণ এবং অতি জোরে জোরে ব্রাশ করা:
আপনি যদি অনেকক্ষণ ধরে ব্রাশটি দাঁঁতের উপর ঘষতে থাকেন তবে এই দাঁঁতের উপর শক্ত আবরণ এনামেল ক্ষয় হয়ে যাবে। কয়েক দিনের মধ্যে তখন আপনার দাঁঁত অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি বা গরম পানিতে শিরশির করবে, খেতে পারবেন না কোনো কিছু্। এর ফলে মাড়ি থেকে দাঁঁত সরে আসবে। সুতরাং বাজারের নরম ধরণের ব্রাশ দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উপর থেকে নিচে সকল দাঁঁতগুলো আস্তে আস্তে পরিষ্কার করতে হবে।
২. প্রতিদিন বেশী পরিমাণে এ্যাসিডিক ফুড খাওয়া:
প্রতিদিন সোডা, কমলার রস, মদ, খেলাধুলার সময় ব্যবহূত পানীয়, ক্যান্ডি এবং কমলা ইত্যাদি খাবারে থাকে প্রচুর এ্যসিড। একটি বরফের টুকরা যেমন পানিতে ছেড়ে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে গলে অদৃশ্য হয়ে যায় তেমনি আমাদের দাঁঁঁতের সবচেয়ে শক্ত এনামেলও কিন্তু এই ধরণের এ্যাসিডিক ফুডের কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। যদি এইসব খাদ্যগুলো খাওয়ার সাথে সাথে পানি বা চিজ জাতীয় খাদ্য খাওয়া না হয় তবে মুখের ভিতর লালার পিএইচ লেভেল কমে গিয়ে দাঁঁতের ক্ষয় শুরু হবে। যদি কমলা বা আনারস জুস খাওয়ার সময় স্ট্রো ব্যবহার করা যায় তবে কিছুটা রক্ষা হয়। তবে সবচেয়ে ভাল হয় এই জাতীয় ফলের রস খাওয়ার পর ভালভাবে কুলিকুচি ও সেই সাথে দাঁঁত ব্রাশ করা যায়।
৩. দাঁঁতকে অতিরিক্ত সাদা করার চেষ্টা করা:
আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে দাঁঁতের রং পরিবর্তন হয়, তখন এগুলো আর সাদা থাকে না। কিন্তু এই দাঁঁতগুলোকে সাদা করার জন্য যদি অতিরিক্ত ব্লিচিং করা হয় তবে দাঁঁতের এনামেল বা আবরণ এ্যাসিডের আক্রমণের শিকার হয় এবং এনামেলের আবরণ ফেটে একটু ফাঁকা হয়ে যায় ফলে দাঁঁত শিরশির করে।
৪. একসঙ্গে ঠাণ্ডা ও গরম খাবার খাওয়া:
৭. নিয়মিত দাঁঁত ব্রাশ ও ফ্লসিং না করা:
প্রতিদিন অন্তত: দুইবেলা সকালে নাস্তার পর ও রাতে ঘুমানোর আগে অন্তত:৩ থেকে ৪ মিনিট দাঁঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন। সেই সাথে দাঁঁতের ফাঁক থেকে ময়লা বা খাদ্যকনা বের করে আনার জন্য ডেন্টাল ফ্লস (এক ধরণের সিল্ক সূতা ) ব্যবহার করা ভালো । যদি আপনার কর্মস্থলে দাঁঁঁত ব্রাশ না থাকে তবে বাসার মতো করে সেখানেও একসেট টুথব্রাশ, পেস্ট ও ফ্লস রাখুন। কারণ অনেক সময়ে অফিসেই নাস্তা বা মধ্যাহ্ন ভোজন বা রাতের আহার সারতে হয়। তখন সেখানেও যাতে দাঁঁত ব্রাশ করতে পারেন সেই ব্যবস্থা রাখাটাও জরুরী। তবে ব্রাশের আগে অবশ্যই ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করবেন, পরে নয়। নিয়মিত দাঁঁত ব্রাশ ও ফ্লস না করলে সহজেই দাঁঁঁতের গর্ত বা ক্যাভিটি হয় এবং ব্যথা ও প্রদাহ থেকে আরও জটিলতা সৃষ্টি হয়। সুতরাং দাঁঁত ব্রাশ ও ফ্লস করা প্রয়োজন প্রতিদিন অন্তত ২ বার ।
৮. দাঁঁত পরীক্ষা না করা:
বিজ্ঞানসম্মতভাবে নিয়মিত বছরে অন্তত: একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনকে দিয়ে দাঁঁতের স্কেলিং করানো যেমন জরুরী, তেমনি দাঁঁতগুলো পরীক্ষা ও সেই সাথে মুখের বিভিন্ন অংশের পরীক্ষা করানোও জরুরী। তাতে মুখ ও দাঁঁতের সামান্য গর্তকে ফিলিং করিয়ে যেমন রক্ষা করা যাবে তেমনি একটি প্রি-ক্যান্সার ঘা বা প্রদাহকে ক্যান্সারের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যাবে। অতএব, Prevention is better than Cure. প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধই শ্রেয়, সস্তা ও নিরাপদ।
অনারারী সিনিয়র কনসালটেন্ট, ডিপার্টমেন্ট অব ডেন্টিস্ট্রি, বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.