কাক্সিক্ষত উন্নয়নের প্রধান শর্ত হচ্ছে শিল্পায়ন। আর মাঝারি বা বৃহৎ যে কোনো শিল্প কারখানা চালুর মূল রসদ হচ্ছে গ্যাস। কিন্তু বর্তমানে গ্যাস সংযোগের অভাবে সবকিছু সম্পন্ন করেও কারখানা চালু করতে পারছেন না অনেক শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। গ্যাস সরবরাহ এবং গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উত্তোলন প্রক্রিয়ায় সরকারের এক ধরনের উদাসীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোথাও বড় ধরনের কোনো গলদ আছে কিনা সেটা ভাবার বিষয়। আমাদের প্রধান খনিজসম্পদটি নিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব নতুন নয়, বেশ পুরনো। ফলে গ্যাসের চাহিদা ও মজুদের সম্ভাব্য পরিমাণ এবং কোন কোন ব্লকে কেমন মজুদ থাকতে পারে- তা স্পষ্ট হওয়া দরকার। কারণ দেশী-বিদেশী শিল্পগোষ্ঠীগুলো বড় ধরনের শিল্প স্থাপনের আগে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের সরবরাহ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। সরকার শিল্প খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং গ্যাসেরও ব্যবস্থা করবে- এই বিশ্বাস সবার রয়েছে। কিন্তু কবে নাগাদ তা করা হবে সে অনিশ্চয়তা দূর করা দরকার। কেননা শিল্প-কারখানা স্থাপনের পর কেবল গ্যাসের অভাবে উৎপাদনে যেতে না পারা বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের ক্ষতির কারণ। শিল্প খাতগুলোর সিংহভাগই বেসরকারি খাতের। বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহে বিঘœ ঘটলে সামগ্রিকভাবে তা দেশের অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলতে বাধ্য। শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু করা যাচ্ছে না অথচ গুনতে হচ্ছে ব্যাংক ঋণের কিস্তি ও শ্রমিকের বেতন। যুগান্তরের খবরে বলা হয়, সিলেটের বিসিক শিল্পনগরীর কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গ্যাসের অভাবে চালু হচ্ছে না। সেগুলো চালু হলে আড়াই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান অনায়াসেই হতে পারত। এছাড়া গাজীপুরসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের তীব্র সংকটের খবর এর আগে এসেছে। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা, উন্নয়নের প্রাধিকার শর্তের ভিত্তিতে শিল্প-কারখানার গ্যাস সংকট দ্রুত নিরসন করা হবে। নতুন নতুন কারখানায় গ্যাসের সংযোগ দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরেকটি বিষয়, গ্যাস নিয়ে আমাদের স্পষ্ট একটি নীতিমালা থাকা দরকার। কারণ এক্ষেত্রে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান। যেখানে অগ্রাধিকার খাত শিল্প-কারখানা গ্যাস পাচ্ছে না। সেখানে বাসাবাড়িতে কাঁথা-কাপড় শুকানোর কাজও অনেকে গ্যাস দিয়ে করছেন। একটি ম্যাচের কাঠি বাঁচানোর জন্য অবলীলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বালিয়ে রাখছেন গ্যাসের চুলা। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আরও মারাত্মক বিষয় হচ্ছে, বৈধভাবে আবেদন করে যেখানে বছরের পর বছর গ্যাস মিলছে না, সেখানে অসাধু লাইনম্যানদের ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে দিব্যি গ্যাস ব্যবহারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব এলাকায় গ্যাসকূপ অবস্থিত, ওইসব এলাকার মানুষও যেন গ্যাস পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
এর বাইরে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা যেন ওয়ানস্টপ সার্ভিস বা একই দফতর থেকে পরিবেশ ও নিরাপত্তা ছাড়পত্রসহ সব কাগজ নিতে পারেন সে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তবে সবার আগে গ্যাস সংকটের সমাধান করতে হবে। শিল্পায়ন তথা উন্নয়নের স্বার্থে, প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে, এটাই কাম্য।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.