মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় খাসিয়াদের বিরুদ্ধে শাহবাজপুর চা-বাগানের জমিতে ঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। তবে খাসিয়ারা বলছে, বাগানের নয়, তারা নিরূপায় হয়ে সরকারি খাসজমিতে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ওই জমিতে যৌথ পাহারার ব্যবস্থা করে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। স্থানীয়, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর খাসিয়া লোকজন শাহবাজপুর বাগানের পাল্লা ডিভিশন এলাকায় জঙ্গল পরিষ্কার করে ২৫টি কাঁচা বাড়িঘর নির্মাণ করে। বাগানের শ্রমিকেরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে বাগান কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুলিশকে জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়। বিরোধ মীমাংসার জন্য ৩ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠক হয়। এতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, ইউএনও এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন, উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সমীর বিশ্বাস, বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুর রহমান, শাহবাজপুর চা-বাগানের মহাব্যবস্থাপক আলী আহমেদ ও খাসিয়াদের পক্ষে লুকাস বাহাদুর উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিরোধপূর্ণ জমি ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরিপ, জমিতে কোনো কাজ না করা ও বিরোধপূর্ণ এলাকা পাহারায় বাগানের পক্ষ থেকে একজন, খাসিয়াদের পক্ষ থেকে দুজন ও স্থানীয় আরও একজন লোক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। খাসিয়াদের পক্ষে লুকাস বাহাদুর বলেন, তাঁরা পার্শ্ববর্তী পাল্লাতল পুঞ্জিতে (খাসিয়াদের গ্রাম) থাকতেন। পুঞ্জির ভেতরে ভারতের বেশ কিছু জায়গা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অপদখলে ছিল। সম্প্রতি জরিপে ওই জায়গা ভারতের কাছে চলে গেছে। এ অবস্থায় সেখান থেকে কয়েকটি খাসিয়া পরিবার শাহবাজপুর বাগানের কাছে সরকারি খাসজমিতে আশ্রয় নিয়েছে। বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে তাঁরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। বাগানের ইজারাভুক্ত কোনো জমি তাঁরা দখল করেননি বলে দাবি করেন। জানতে চাইলে স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠান শাহবাজপুর বাগানের মহাব্যবস্থাপক আলী আহমেদ বলেন, খাসিয়ারা যে জমি দখল করেছে তা বাগানের ইজারাভুক্ত। খাসিয়ারা বাগানের সীমানা খুঁটি ও বেড়া উপড়ে ফেলেছে। ইতিমধ্যেই তারা ৪০-৫০ একর জায়গা দখল করে নিয়েছে। ওই জমিতে নতুন করে আরও তিনটি বসতঘর ও একটি গির্জা স্থাপন করা হয়েছে। জমিটি রক্ষা করা না গেলে চা-চাষ ব্যাহত হবে। বড়লেখার ইউএনও এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে জমিটি জরিপের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভূমি রেকর্ড জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে এখন চা-বাগান ও খাসিয়া—উভয় পক্ষ শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.