চলমান দশম জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ অধিবেশন গতকাল বিকালে শুরু হয়েছে। এ অধিবেশন চলবে ১২ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ অধিকাংশ মন্ত্রী এমপিরা উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশনে কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোসহ সদ্য প্রয়াত দেশি-বিদেশি রাজনীতিক ও গুণীজনদের শ্রদ্ধা জানিয়ে আনা শোক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। অধিবেশন শুরুর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিদিন বিকাল ৪টায় অধিবেশন শুরু হবে। ১২ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ত্রয়োদশ অধিবেশন চলবে। এই বৈঠকে কমিটির সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বি মিয়া, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, রাশেদ খান মেনন, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অংশগ্রহণ করেন। সভাপতিম-লীর সদস্য মনোনয়ন: অধিবেশনের শুরুতেই সভাপতিম-লীর সদস্য মনোনয়ন দেয়া হয়। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করবেন মীর শওকত আলী বাদশা, সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি, মাহবুব আলী, ফখরুল ইমাম ও নজরুল ইসলাম চৌধুরী। শোক প্রস্তাব গ্রহণ: সংসদ অধিবেশনে কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোসহ সম্প্রতি কয়েকজন রাজনীতিক, সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। স্পিকার অধিবেশনে এ শোক প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। শোক প্রস্তাবে ফিদেল কাস্ত্রোকে ‘বাংলাদেশের বিশাল হৃদয়ের বন্ধু’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ফিদেল কাস্ত্রো ছাড়াও বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহ, জিয়াউল হক জিয়া, মোজাহার হোসেন, মাহবুবুর রব সাদী, মোকলেসুর রহমান ও ডেপুটি সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের নামে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এছাড়া সদ্য প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, বাংলাদেশে শিশু চিকিৎসার পথিকৃত ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খানের মৃত্যুতেও শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। থাইল্যান্ডের রাজা ভুমিবল আদুলাদেজ, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ অজয় রায়, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন, কনসার্ট ফর বাংলাদেশের শিল্পী লিওন রাসেল, ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুরে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ব্রাজিলের ফুটবলারসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর নামে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন ছিল ফিদেল কাস্ত্রোর। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম দেশগুলোর একটি কিউবা। ১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে (ন্যাম) চতুর্থ সম্মেলনে ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎ হয়। সে সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন ‘আমি হিমালয় দেখিনি। তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি (বঙ্গবন্ধু) হিমালয়ের সমান। এভাবে আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতাই লাভ করলাম।’ প্রস্তাবে আরো বলা হয়, এরপর থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ফিদেল কাস্ত্রোর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ফিদেল কাস্ত্রো দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারালো তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে’।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.