ফের একটি প্রকল্পের কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগ করেছে বিশ্বব্যাংক। এ জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ফেরত চাওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, সময় মতো এ অর্থ ফেরত না দিলে পরবর্তী সময়ে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পে অর্থায়ন আলোচনায় অনিশ্চয়তার কথাও বলেছে সংস্থাটি। সেই সঙ্গে সেকেন্ড লোকাল গভার্নেন্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-২) শীর্ষক প্রকল্পটিতে দুটি বিষয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর আগে আরও ১০টি প্রকল্পের কেনাকাটায় কিছু কিছু অংশে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ফেরত চাওয়া হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে ইআরডি’র দায়িত্বশীলদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করেননি। তবে সংস্থাটির একটি সূত্র জানায়, ইতিমধ্যেই এ টাকা বিশ্বব্যাংককে ফেরত দিতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের ২০১২-১৩ অর্থবছরে করা ইন্টিগ্রেটেড ফিডুকেয়ারি রিভিউ (আইএফআর)-এর মাধ্যমে এলজিএসপি-২ প্রকল্পে কিছু পর্যালোচনা তুলে ধরে। এগুলো হচ্ছে- স্থানীয় সরকার প্রশিক্ষণের জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হয় তার পর্যাপ্ত সার্পোটিং ডকুমেন্ট নেই। এ ছাড়া বেসিক ব্লক গ্রান্ট এবং পারফরমেন্স বেইজড গ্রান্টের ক্ষেত্রে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে কিছু কিছু স্কিমের পেমেন্ট দেয়া হয়েছে যেগুলো ইউপি ম্যানুয়ালের মাধ্যমে অনুমোদিত নয়।
এ জন্য ২৭ লাখ ৩২ হাজার ১০ টাকা বেআইনি ব্যয় হিসাবে ঘোষণা করা হয়। গত ৮ নভেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে এই টাকা ফেরত চাওয়া হয়েছিল।
চিঠিতে বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করে যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করা না হলে থার্ড লোকাল গভার্নেন্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি-৩) নেগোসিয়েশন বা আলাপ-আলোচনা নিশ্চিতকরণকে ব্যাহত করবে।
এর আগে প্রকল্পে কেনাকাটায় অনিয়ম প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেছিলেন, দুর্নীতির ক্ষেত্রে কম টাকা বা বেশি টাকা বড় কথা নয়। এরকম অভিযোগ পেলেই তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে প্রকৃত বিষয়টি উদঘাটন করা প্রয়োজন। আবার যারা অভিযোগ করে তাদেরও উচিত সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে করা। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ করে তা প্রমাণ করতে না পারায় আস্থার সংকটে রয়েছে। তাই উভয় দিক থেকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
সূত্র জানায়, কার্যকর এবং স্বচ্ছ আন্তঃসরকার অর্থ স্থানান্তর পদ্ধতি নিশ্চিত করে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জনগণের চাহিদামাফিক সেবা প্রদান করতে এলজিএসপি-২ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় জনগণকে চাহিদামাফিক সেবা প্রদান, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪ কোটি ৫৩ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ২৯ কোটি ডলার। বাকি ২৫ কোটি ৫৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার সরকারি তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, এর আগে বিভিন্ন সময় আরও দশটি প্রকল্পে কেনাকাটার অভিযোগ এনেছিল বিশ্বব্যাংক।
এগুলো হচ্ছে, ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম প্রজেক্ট-২ , ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রিপায়ের্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স ইত্যাদি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.