সন্তানকে দেওয়া বাবা-মায়ের সবেচেয়ে বড় উপহার হলো তাকে আত্নবিশ্বাসী করে গড়ে তোলা। আর সেটাই তার সারাজীবনের জন্য উপকারী। কারণ একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষই পারে সাফল্যের শীর্ষচূড়া ছুঁতে।
ছোট থেকেই সন্তানকে কিছু কিছু কাজ করতে দিলে ধীরে ধীরে ওর মনে আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। জেনে নিন সন্তানের আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে বাবা-মা হিসেবে কি কি করতে পারেন।
চার্ল পিকহার্ড নামের মার্কিন এক মনোবিজ্ঞানী সন্তান লালন-পালন বিষয়ে ১৫টি বই লিখেছেন। তার মতে, শিশু যদি আত্মবিশ্বাসী না হয় তাহলে সে কোনো চ্যালেঞ্জ নিতে গেলে ব্যর্থ হওয়ার বা হতাশ হওয়ার ভয় পায়। আর তার ফলেই জীবনে সাফল্যের পথটা তার জন্য হয়ে উঠে খুবই দুর্গম। এর মূল কারণ তার মনে জমে থাকা অনুৎসাহ এবং ভয়। তাই পিকহার্ড মনে করেন বাবা-মা হিসেবে আপনার উচিত তাকে সাহস ও সমর্থন দেওয়া।
জেনে নিন সন্তান লালন পালনের পিকহার্ডের বাতলে দেওয়া কিছু ছোট ছোট ট্রিকস যেসব তাকে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবে।
* সে হারুক বা জিতুক তার প্রচেষ্টাটাকে সমর্থন করুন। গন্তব্যে পৌঁছাতে পারার চেয়ে সে যে চেষ্টাটা করেছে সেটা বেশি জরুরি। তাহলে শিশু কখনো কোনো কিছু করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও বিব্রত হবে না।
* প্র্যাকটিস করতে উদ্বুদ্ধ করুন। তবে সেজন্য তাকে খুব বেশি মানসিক চাপ প্রয়োগ করবেন না। নিজের মতো করে করতে করতেই দেখবেন সে ঠিক ব্যাপারটা আয়ত্ব করে ফেলবে।
* কোনো বিষয়ে মূল সমস্যাটা তাকেই খুঁজে বের করতে দিন। তা না হলে আপনার কঠোর পরিশ্রম পুরাই বৃথা যাবে। সব সমস্যার সমাধান আপনি করে দিয়ে তাকে ‘এ’ দেওয়ার থেকে বরং ও নিজে চেষ্টা করে ‘বি’ বা ‘সি’ গ্রেড পেলেও ভালো। এতে সে নিজে নিজেই সমস্যার সমাধান করা শিখবে।
* শিশু কখনো বড়দের মতো আচরণ করবে না সেটাই স্বাভাবিক। ওর কাছে বড়দের মতো আচরণ প্রত্যাশা করলে দেখবেন ওর সঠিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আর তাকে ক্রমাগত বড় হওয়ার তাড়া দিতে থাকলে দেখবেন একসময় তার আত্মবিশ্বাস পুরো শূণ্যের কোঠায় নেমে আসবে। তাকে তার মতো করেই বড় হতে দিন।
* বুঝলাম, মাঝে মাঝে ও এত বেশি প্রশ্ন করে যে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু ওকে কখনোই অবদমিত করা ঠিক নয়। কারণ ওর প্রশ্নগুলোই তার উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি কাজে আসবে। প্রশ্নগুলো থেকেই বোঝা যায় যে ও উপলব্ধি করেছে যে এমন কিছু বিষয় আছে যা সে জানেনা, বা এমন কোনো পৃথিবী আছে যেখানে সে ভ্রমণ করেনি। যতটা পারেন উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন।
* তাকে নতুন চ্যালেঞ্জ দিন। হতে পারে সেটা ছোট ছোট কোনো বিষয় নিয়ে কিন্তু পূরণ করতে পারলে খুব বেশি উৎসাহ দিন। দেখবেন সে কতটা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে একটু একটু করে। পিকহার্ডের মতে, সন্তানকে সবসময় বিশেষ সুযোগ দিলে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা যাবে। তাকে অন্যদের মতোই সুযোগ সুবিধা দিন। এটা তার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে আরো সহযোগী হবে।
* শিশুর যে কোনো কাজের নেতিবাচক সমালোচনা তার জন্য যতটা ক্ষতিকর ততটা অন্য কিছুই নয়। তাই কোনো কাজ ভুল করলে আপনি তাকে ভালো কিছু করার পরামর্শ দিতে পারেন কিন্তু কখনোই তাকে বলবেন না যে সে খারাপ কাজ করছে। যদি আপনার সন্তান ব্যর্থ হতে ভয় পায় তাহলে বুঝতে হবে সে মূলত আপনার রাগ বা হতাশাকে ভয় পাচ্ছে।
* আপনি সবসময় তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাকে এমনটা বোঝানোরও কোনো দরকার নেই। সেটা তার আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানবে প্রবলভাবে।
* শিশুকে কোনো সমস্যা সমাধানে সহায়তা করুন কিন্তু তাকে এত বেশি সহায়তা করবেন না যে সে আপনার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তাকে নিজেই নিজেকে সাহায্য করতে দিন। দেখবেন সে সমস্যা সমাধানে আরো বেশি পারদর্শী হয়ে উঠছে।
* তার শেখার প্রচেষ্টা উৎযাপন করুন। কোনো নতুন কিছু করলে আপনি খুশি হলে দেখবেন সে আরো নতুন কিছু করার এবং শেখার উৎসাহ পাবে। সেটাই তো আপনি চান নিশ্চয়ই।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.