৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলন। ইতিমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ৭০ জন নেতা তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। কিন্তু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। এ থেকে নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, এবারও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচন সম্ভব হবে না। সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচন করা হয়। এরপর থেকে শুধু পকেট কমিটি দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সাংগঠনিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের নভেম্বরে আব্দুল হান্নানকে সভাপতি ও লায়েব উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। তিন বছরের মাথায় ১৯৯৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর এই কমিটি সফলভাবে সম্মেলন করে। এ সময় সাধারণ সম্পাদক পদে একক প্রার্থী ছিলেন সাইফুজ্জামান শেখর। সভাপতি পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় ভোটাভুটির মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন সাইফুল ইসলাম। এরপর আর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। সাইফুল ইসলাম ও সাইফুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিন্তু তাঁরাও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচন করতে পারেননি। এমনকি সম্মেলনের পরে প্রায় এক বছর ধরে কোনো কমিটিই হয়নি। এক বছর পর কেন্দ্র থেকে সাখাওয়াত হোসেনকে সভাপতি ও আহসানুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। এই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের মধ্যে অন্তঃকলহে জড়িয়ে পড়েন। নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এমনকি সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকেরা স্বয়ং সভাপতিকেই মারধর করেন। পরে তাঁরা আর সম্মেলনও করতে পারেননি। এ অবস্থায় ২০০২ সালে সম্মেলন ছাড়াই কেন্দ্র থেকে কামরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি করে দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি লিয়াকত শিকদার রাজশাহীতে এসে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বর্তমান ও প্রাক্তন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকায় চলে যান। ঢাকা থেকে ইব্রাহিম হোসেনকে সভাপতি ও আয়েন উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি এই কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে দায়িত্ব হস্তান্তর করে। কিন্তু তখনো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। সেবার আওয়াল কবিরকে সভাপতি ও মাজেদুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি দেওয়া হয়। নিজেদের ভেতরে সংঘাত হলে কিছুদিন পরে এই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। পরে কেন্দ্র থেকে কমিটির অন্যান্য পদ ঠিক রেখে নতুন করে আহম্মদ আলীকে সভাপতি ও আবু হুসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তাঁদের নেতৃত্বাধীন কমিটি ২০১৩ সালের ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এবারও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়েই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ঢাকায় রওনা দেন। তাঁরা ঢাকার পথে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন। এই কমিটির সভাপতিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত ১৬ জানুয়ারি বহিষ্কার করা হয়। একই দিনে রাশিদুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। অবশ্য তার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তাকে মারধর করার অভিযোগে সাধারণ সম্পাদককে ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করে। তাঁর স্থলে খালিদ হাসানকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এবার ৮ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষে ২৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, আবু হুসাইন, অর্না জামান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নওশেদ উদ্দিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল হাসান রাজশাহীতে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নেন। এ সময় ৭০ জন নেতা তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু হুসাইন প্রথম আলোকে বলেন, অবস্থা বুঝে কেন্দ্রীয় নেতারা সিদ্ধান্ত নেবেন কীভাবে নেতা নির্বাচন করা যায়। তবে এখনো হল কমিটিগুলো করা হয়নি। সম্মেলনের আগে করা সম্ভবও হবে না। এসব দিক বিবেচনা করে বলা যায় ভোটাভুটির সম্ভাবনা কম।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.