ভোটারদের মন জয় করতে বিরামহীন গণসংযোগ ও প্রচারে ব্যস্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরা। মেয়র পদপ্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। আর কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা নিজ নিজ ওয়ার্ডের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ভোট চাইছেন। মেয়র পদে প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জকে একটি সবুজ শহর (গ্রিন সিটি) করতে চান। আর বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস, গুম, খুনমুক্ত নগরে পরিণত করতে চান। সাখাওয়াত গতকাল বুধবার দুপুরে ৫৭টি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ নজরদারি চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন। ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। প্রার্থীদের দিন-রাত গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে রাস্তাঘাট, অলিগলি। নৌকা ও ধানের শীষের পোস্টারই বেশি। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মেয়র পদপ্রার্থী মাহবুবুর রহমানের কোদাল প্রতীকের পোস্টারও আছে। সকাল নয়টা থেকেই প্রচারণায় আইভী: সকাল নয়টা থেকে আইভী ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী পুল, কদমতলী মধ্যপাড়া, উত্তর কদমতলী, দক্ষিণ কদমতলী, কলেজপাড়া, নয়াপাড়া, গ্যাসফিল্ড, কাশেমপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান। অনেক মানুষ বাড়ির বাইরে বেরিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিটি এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ফুল ছিটিয়ে তাঁকে বরণ করেন। ভোটারদের কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, জানতে চাইলে আইভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচিত হলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে সবুজায়ন ও পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। পরিকল্পিত নগরায়ণ বলতে সিটি করপোরেশনের জলাশয়, পুকুর, খাল-বিল সংরক্ষণ করব।’ টানা ১৩ বছর ধরে নির্বাচিত পৌর মেয়র ও সিটি মেয়র আইভী বলেন, এরই মধ্যে তিনি সিটি করপোরেশনে কী কী সমস্যা আছে, সেগুলো চিহ্নিত করেছেন। এসব সমস্যা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাধান করবেন। তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব পালনকালে যে অসমাপ্ত কাজগুলো আছে সেগুলো সমাপ্ত করতে চাই। অনেক কাজ চলমান। এরই মধ্যে বেশির ভাগ কাজই শেষ করেছি। তাই জনগণের প্রতি আহ্বান, উন্নয়নের জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট দিন।’ মানুষ পরিবর্তন চায়—সাখাওয়াত: বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন সকালে পাইকপাড়া বড় কবরস্থান, ছোট কবরস্থান, আমলাপাড়া, কালীর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। তিনি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুশল বিনিময় করেন, ভোট চান। তাঁর সঙ্গে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ১৩ বছর ধরে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে দায়িত্ব পালন করে নারায়ণগঞ্জ থেকে গুম, খুন, অপহরণ, সন্ত্রাস নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মানুষ যদি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, তবে ধানের শীষ বিজয়ী হবে। কারণ, মানুষ পরিবর্তন চায়। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে সন্ত্রাস, গুম, খুনমুক্ত করবেন। নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী: নির্বাচনী পরিবেশ দেখতে গতকাল নারায়ণগঞ্জে এসে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত অনেক ভালো আছে। তিনি বলেন, পুলিশের কাছে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত এমন অনেক প্রার্থী নির্বাচন করছেন। তাঁরা যেন নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতে না পারেন, সেদিকে পুলিশের বিশেষ নজরদারি আছে। সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে বিএনপির প্রার্থীর দাবির বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে জাবেদ আলী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কেউ আবেদন করেনি, আমিও শুনিনি।’ সকালে নারায়ণগঞ্জে পৌঁছে জাবেদ আলী সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও জেলা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার, জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া, পুলিশ সুপার মঈনুল হকসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.