বছরটা কেমন গেল? ৮ ডিসেম্বর সিডনি উড়াল দেওয়ার আগে বিসিবি একাডেমির সামনে মোস্তাফিজুর রহমানকে ঝটপট পর্যালোচনা করতে বলা হলো ২০১৬ সাল। খানিকক্ষণ চুপ থেকে তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তর—‘বলতে পারছি না!’ প্রশ্নটা আরেকটু ঘুরিয়ে করা হয় তাঁকে, গত বছরের তুলনায় এই বছরটা কেমন গেল? ‘ভালো’—মোস্তাফিজের সংক্ষিপ্ত উত্তর। কিন্তু বছরটা কি আসলেই ‘ভালো’ গেছে তাঁর গত বছরের তুলনায়!
বছরজুড়েই চোটের সঙ্গে লড়তে হয়েছে মোস্তাফিজকে। জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ে সিরিজে চোট পেলেন বাঁ কাঁধে। মার্চে সেটি সারিয়ে খেললেন দেশের মাটিতে এশিয়া কাপ। কিন্তু আবারও চোটে থেমে গেল মোস্তাফিজের অগ্রযাত্রা। এবার চোটটা ডান পাঁজরে। এই চোট সারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফিরতে বেশ দেরি হয়ে গেল তাঁর। ‘ফিজ’কে পাওয়া গেল সুপার টেন পর্বে। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে সুপার টেনে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঝলক দেখা গেল মোস্তাফিজের। ২২ রানে নিলেন ৫ উইকেট, যেটি তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং।
মে মাসে গেলেন প্রথমবারের মতো আইপিএল খেলতে। সেখানেও বাজিমাত! সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করে ফিরলেন। ১৬ ম্যাচে ২৪.৭৬ গড়ে নিলেন ১৭ উইকেট, ইকোনমি মাত্র ৬.৯০। দুর্দান্ত বোলিংয়ে প্রথম বিদেশি হিসেবে ‘সেরা উদীয়মান’ খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতলেন ‘ফিজ’। ভারত থেকে শিরোপা জয়ের আনন্দ নিয়ে তো ফিরলেন, ফিরলেন হ্যামস্ট্রিং ও অ্যাঙ্কেলের ব্যথা নিয়েও। আবারও পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া শুরু হলো ২১ বছর বয়সী পেসারের।
ফিট হয়ে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে মোস্তাফিজ উড়াল দিলেন ইংল্যান্ডে। সাসেক্সের হয়ে ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্ল্যাস্টে শুরুটাও তাঁর হলো দুর্দান্ত, এসেক্সের বিপক্ষে পেলেন ২৩ রানে ৪ উইকেট। দুই ম্যাচ না খেলতেই চোট পেলেন বাঁ কাঁধে। চোট সারতে যেতে হলো শল্যবিদের ছুরির নিচে। অস্ত্রোপচার হলো লন্ডনের কেনসিংটনের বুপা ক্রমওয়েল হাসপাতালের শল্যবিদ অ্যান্ড্রু ওয়ালেসের অধীনে। হাসপাতাল, চিকিৎসক, ট্রেনার, ফিজিওদের সঙ্গেই বছরের বেশির ভাগ সময় কেটেছে মোস্তাফিজের। চোট সারিয়ে জাতীয় দলে ফিরেছেন কদিন আগে। অথচ মোস্তাফিজ বলছেন, বছরটা তাঁর ভালো গেছে!
মোস্তাফিজের কথার মর্মার্থ বোঝা গেল কদিন আগে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হয়েছেন তরুণ বাঁহাতি পেসার। বাংলাদেশের ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসির কোনো বর্ষসেরা পুরস্কার জয়ের ঘটনা এই প্রথম। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬—এই সময়সীমার পারফরম্যান্সই বিবেচনা করা হয়েছে আইসিসির বর্ষসেরা নির্বাচনে। এই ১২ মাসের মধ্যে মোস্তাফিজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন মাত্র চার মাস। নভেম্বর থেকে মার্চ। নির্ধারিত সময়ে মোস্তাফিজ তিন ওয়ানডে খেলে উইকেট নিয়েছেন ৮টি। গত বছরের শেষ থেকে এই বছরের শুরুতে বাংলাদেশ বেশি ব্যস্ত ছিল টি-টোয়েন্টিতে। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে মোস্তাফিজের পরিসংখ্যানটা তাই বেশি উজ্জ্বল, ১০ ম্যাচে তাঁর উইকেট ১৯টি।
চোটের সঙ্গে যুদ্ধ করে সাকল্যে খুব কম সময়ই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পেয়েছেন মোস্তাফিজ, তাতেই বর্ষসেরা! ২০১৭ সালটা যদি পুরো ছন্দে খেলতে পারেন, নিশ্চয়ই সাফল্যের খাতায় যোগ হবে আরও স্বীকৃতি।
আর এও তো সত্যি, বছরের সেরা হতে ‘ফিজে’র তিন-চার মাসই যথেষ্ট!
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.