সিরিয়ার সরকারি বাহিনী যুদ্ধ স্থগিত করার পর বিধ্বস্ত পূর্ব আলেপ্পো থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সরে যাচ্ছে হাজারো বাসিন্দা। তাদের মূল গন্তব্য সরকারি বাহিনীনিয়ন্ত্রিত এলাকা। এদিকে পূর্ব আলেপ্পো ছাড়ার পর সরকারনিয়ন্ত্রিত এলাকায় আশ্রয় নিতে যাওয়া বেশ কয়েক শ মানুষ নিখোঁজ হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তাদের গুম করা হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রুশ সমর্থনপুষ্ট সিরীয় সরকারি বাহিনী বেশ কিছুদিন ধরে বিদ্রোহীদের দখলে থাকা পূর্ব আলেপ্পোর বেশির ভাগ পুনর্দখল করার পর গত বৃহস্পতিবার যুদ্ধ স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। এরপর গতকাল শুক্রবার যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে কমপক্ষে আট হাজার মানুষ সরে পড়ে। এর মধ্যে তিন হাজার শিশু। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থার মুখপাত্র রুপার্ট কোলভিল বলেন, এখনো পূর্ব আলেপ্পোতে ১০ হাজারের বেশি লোক আটকা পড়ে আছে। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ নিজস্ব পর্যবেক্ষণে জানতে পেরেছে, পূর্ব আলেপ্পো থেকে সরকারনিয়ন্ত্রিত এলাকায় আশ্রয়ের জন্য যাওয়ার পথে কয়েক শ লোক উধাও হয়ে গেছে। দেশটিতে জবরদস্তিমূলক আটক, নির্যাতন ও গুমের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’ জাতিসংঘ কর্মকর্তা রুপার্ট কোলভিল আরও বলেন, বিদ্রোহীরা বেসামরিক লোকজনকে পূর্ব আলেপ্পো থেকে বেরিয়ে যেতে বাধা দিচ্ছে। তারা আটকে পড়া বাসিন্দাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। চার বছর ধরে বিদ্রোহীদের দখলে থাকা পূর্ব আলেপ্পোর প্রায় ৭৫ শতাংশ এখন সরকারি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে। এদিকে বিবিসির একজন সাংবাদিক জানান, সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোয় যুদ্ধ পুরোপুরি থেমে যাওয়ার কোনো আভাস নেই। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা এলেও এখনো স্থল অভিযান চলছে। বৃহস্পতিবার রাতের বেলায় রকেট হামলা চালানো হয়েছিল। সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং মার্কিন বিশেষজ্ঞরা আজ শনিবার জেনেভায় বৈঠকে বসবেন। নিউইয়র্কে সিরিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের দূত জানাচ্ছেন, লড়াই বন্ধ হলে নতুন করে শান্তি আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর পর আলেপ্পো শহরটি ২০১২ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট বাশারবিরোধীদের শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়। তবে সরকারি বাহিনীর সাম্প্রতিক জোরদার অভিযানের মুখে সেখানে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে বিদ্রোহীরা। গত কয়েক সপ্তাহের তীব্র আক্রমণে আরও নাজুক অবস্থায় পড়ে শহরটিতে অবিলম্বে পাঁচ দিনের মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। কিন্তু তখন বাশার সরকার বলে দিয়েছিল এত দীর্ঘ যুদ্ধবিরতিতে সায় নেই তাদের। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ স্থগিত করার সরকারি ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলছে, ‘ইতিবাচক কিছু ঘটতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং বাস্তবে এই ঘোষণার প্রতিফলন ঘটে কি না, তা দেখতে হবে।’ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জশ আনের্স্ট বলেন, এই পরিস্থিতিতে কাজ হচ্ছে রাশিয়া কী বলছে তা সতর্কতার সঙ্গে শোনা আর তারা কী করে, তা খুঁটিয়ে দেখা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.