মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে রাশিয়া নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে। শীর্ষস্থানীয় একাধিক সংবাদপত্রকে মার্কিন কর্মকর্তারা এ কথা বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) গোপন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতানোর জন্য রাশিয়া চেষ্টা করেছিল। প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট গত শুক্রবার এ খবর প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সহযোগীরা কড়া ভাষায় নিন্দা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মার্কিন রাজনৈতিক দল ও নেতাদের ওপর সাইবার হামলার তদন্ত করতে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্দেশের পরদিনই রাশিয়া সম্পর্কে গোয়েন্দাদের এ মূল্যায়নের খবর এল।
মার্কিন নির্বাচনে পরাজিত ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এবং তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী জন পোডেস্টার ই-মেইলে হ্যাকিং করা হয়। মার্কিন কর্মকর্তারা গত অক্টোবরেই ইঙ্গিত দেন, দেশটির নির্বাচনে রাশিয়া প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছিল। নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, এসব হ্যাকিংয়ে রাশিয়ার জড়িত থাকার ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ‘উচ্চমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী’।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগীরা সিআইএর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, এসব খবর যারা ছড়াচ্ছে, তারাই সাদ্দাম হোসেনের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে বলে খবর দিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়গুলোর একটি।
হ্যাকিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ রুশ কর্মকর্তারাও বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। তবে ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, মস্কোর সঙ্গে যোগসাজশ আছে এমন ব্যক্তিরাই হিলারির ডেমোক্রেটিক পার্টির ন্যাশনাল কমিটি, তাঁর প্রচারবিষয়ক প্রধান এবং অন্যদের ই-মেইল হ্যাক করে গোপনীয়তাবিরোধী ওয়েবসাইট উইকিলিকসকে সরবরাহ করেছে। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে উইকিলিকসের মাধ্যমে এসব ই-মেইল ফাঁস হয়ে যাওয়ায় হিলারির নির্বাচনী প্রচারে বিঘ্ন ঘটে। মার্কিন গোয়েন্দারা বলছেন, রুশদের চেষ্টা ছিল মার্কিন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ক্ষতি করার পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জয়ী হতে সাহায্য করা।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন অনুযায়ী রাশিয়ার লক্ষ্য ছিল ট্রাম্পের জয় যাতে সহজ হয় সে জন্য তাঁর অনুকূলে কাজ করা।
সিআইএর কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে কয়েকজন সিনেটরের সামনে তাঁদের গোপন প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ সময় তাঁরা বলেন, এটা ‘একেবারে স্পষ্ট’ যে ট্রাম্পকে জয়ী করাই রাশিয়ার লক্ষ্য ছিল। বিভিন্ন সূত্র থেকে এ ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ মিলেছে।
তবে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, সিআইএর ওই মূল্যায়ন নিয়ে কিছু প্রশ্ন অমীমাংসিত রয়ে গেছে। যেমন রাশিয়ার কর্মকর্তারা হ্যাক করা ই-মেইলগুলো উইকিলিকসের কাছে পৌঁছে দিতে সুনির্দিষ্ট কয়েকজনকে নির্দেশ দিয়েছেন—এমন তথ্যের পক্ষে সিআইএর গোয়েন্দাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই।
উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ইতিমধ্যে দাবি করেছেন, রাশিয়ার সরকারের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই।
নির্বাচনী প্রচারাভিযানের একপর্যায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যেই হিলারির বিতর্কিত ই-মেইলগুলো ‘খুঁজে বের করতে’ রাশিয়াকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য তিনি ওই বক্তব্যকে ‘মজা’ আখ্যা দেন। কিন্তু ডেমোক্রেটিক পার্টি দাবি করছে, হিলারির প্রচার কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতেই ওই হ্যাকিং চালানো হয়।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আপাত হৃদ্যতা অনেকের মধ্যেই বিস্ময়ের সঞ্চার করেছিল। একবার ট্রাম্প ওবামার নিন্দা করে এ-ও বলেন, এমনকি রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনও ওবামার চেয়ে ভালো নেতা।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র এরিক শুলজ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এসব হ্যাকিংয়ের তদন্ত চান। কারণ, তিনি বিষয়টিকে খুব ‘গুরুত্ব’ দিচ্ছেন। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রেসিডেন্ট ওবামা আগামী ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব ছাড়বেন। এর আগেই তিনি ওই তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।