এক-দুবার হলেও না হয় কথা ছিল। এ যে এক রকম নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবারও সার্জিও রামোস, আবারও শেষ মুহূর্তের ভেলকি। দেপোর্তিভো লা করুনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ হতে যাচ্ছিল অমীমাংসিতভাবেই। এবারও একদম শেষ মুহূর্তে রামোসের গোল রিয়ালকে এনে দিল ৩-২ গোলের জয়। বার্সেলোনার সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান ছয়েই রাখল রিয়াল। ব্যবধানটা তিনেও নেমে আসার শঙ্কা জেগেছিল রিয়ালের জন্য। এক সময় তো রিয়াল পিছিয়ে ছিল ২-১ গোলে। সেখান থেকে ২-২-এ সমতা ফেরানো রিয়ালের জন্য যথেষ্ট স্বস্তির হতো না। নিজেদের মাঠে দুই পয়েন্টই বা কে হারাতে চায়। ম্যাচের ঘড়িতে ৯২ মিনিট হয়ে গিয়েও জিনেদিন জিদান হয়তো আশা ছাড়েননি। কেন, রামোস তো আছেনই! ২০১৪ সালের পর এই প্রথম বিবিসির একজনও দলে নেই। বেলের চোট আর বেনজেমা-রোনালদোকে বিশ্রাম। আক্রমণত্রয়ীর তিনজনকে ছাড়াই খেলতে নেমে গোলের দেখা পেতে ৫০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো রিয়ালকে। আলভারো মোরাতার গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ৬২ মিনিট পর্যন্ত লিডটা ধরে রেখেছিল রিয়াল। কিন্তু হোসেলু দুই মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল করে দেপোর্তিভোকে এগিয়ে নেন ২-১ গোলে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে তখন নেমে এসেছে রাজ্যের হতাশা। প্রতিযোগিতামূলক ৩৪টি ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর সংখ্যাটিকে ৩৫-এ নিতে না পারার আফসোসটা তখন স্টেডিয়ামময়। তবে গত শনিবার ন্যু ক্যাম্পে বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচটির কথা মনে করে আশার দেউটিই জ্বলছিল সমর্থকদের। খেলা শেষ হওয়ার ৬ মিনিট আগে রিয়ালের ‘নেভার সে ডাই’ চরিত্রটি আবারও জেগে উঠল। ৮৪ মিনিটে ২-২ করলেন দিয়াজ। যাক, রিয়াল অন্তত হারছে না! কিন্তু তাতেও কি তৃপ্তি মেলে। বার্সার সঙ্গে ব্যবধান চারে নেমে আসবে যে। বার্সেলোনার বিপক্ষে এক সপ্তাহ আগেই ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে গোল করে রিয়ালকে বাঁচিয়েছিলেন নিশ্চিত হারের হাত থেকে। ম্যাচ শেষে বলেছিলেন, একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাওয়াটা রিয়ালের ডিএনএর মধ্যেই আছে। রিয়ালের সেই ডিএনএর পরিচয়টা কাল আবারও সবার সামনে তুলে ধরলেন রামোস। যোগ করা সময়ে গোল করে রিয়ালকে এনে দিলেন ৩-২ গোলের মনে রাখার মতো এক জয়। বারবার শেষ মুহূর্তে ম্যাচে পাশার দান পাল্টে দেওয়ার রহস্যটা কাল জানিয়েছেন রামোস, ‘এ জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যেতে হবে। শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যেতে পারলে এমনটা হতেই পারে। আমরা আজ দারুণ খেলেছি। আমরা কিছু ভুল করেছি, যে ভুলগুলোর মাশুল আমাদের দিতে হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেই ম্যাচটাকে নিজেদের করে নিতে পেরেছি।’ ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে ডাচ কোচ লিও বেনহ্যাকারের অধীনে সব প্রতিযোগিতা মিলে টানা ৩৪ ম্যাচ জিতেছিল রিয়াল। সেটাই ছিল ক্লাবটির সেরা অপরাজেয় যাত্রা। কাল দেপোর্তিভোর বিপক্ষে জয়ে বেনহ্যাকারের রেকর্ডটি ছাড়িয়ে গেলেন ফরাসি কিংবদন্তি জিদান। এমন কৃতিত্বের পর জিদানের শুধু বললেন, ‘এই ৩৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড রিয়ালকে শক্তি জোগাবে।’ জিদান শেষ মূহূর্তের ভেলকির নায়ক রামোসকে বলেছেন দলের ‘প্রাণভোমরা।’২০১৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল, উয়েভা সুপার কাপ, এল ক্লাসিকোর পর কালকের রাত; রামোসের বসার ঘরের দেয়ালে আরেকটা ছবি যুক্ত হলো।