শিল্পে কল্যাণমূলক ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ঢাকা সামিট অন স্কিলস, এমপ্লয়াবিলিটি অ্যান্ড ডিসেন্ট ওয়ার্ক-২০১৬’ (দক্ষতা, নিয়োগযোগ্যতা এবং শোভন কাজ) শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় (এমওএলই), বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ), ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশন (এনসিসিডব্লিউই) যৌথভাবে তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শিল্প মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি শিল্পপতিদের স্ব স্ব কারখানায় কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, শ্রম অধিকার ও পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অধিকসংখ্যক নারী ও প্রতিবন্ধী শ্রমিক নিয়োগসহ শ্রমিকদের জন্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, উন্নয়ন সহযোগীগণ অতীতের মতো ভবিষ্যতেও দক্ষতা উন্নয়ন, নিয়োগযোগ্যতা বৃদ্ধি ও শোভন কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, শিল্পোদ্যোক্তাসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব ব্যতিত শুধু সরকারি উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নিয়ে আসতে পারবে না। তার সরকার পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি এবং বাজার সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে শুধু প্রণোদনাই যথেষ্ট নয়। আমাদের মূলধন ও প্রযুক্তিতে বেশি বিনিয়োগ এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন করতে হবে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকসহ আমাদের বেশির ভাগ পণ্য স্বল্প-মজুরি, নিম্নমান, স্বল্পমূল্য ইত্যাদির ফাঁদে আটকে আছে। আমাদের এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাগুলোকে উন্নততর উৎপাদনশীলতার উপর ভিত্তি করে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। একই সঙ্গে কী করে বর্তমান পণ্যসামগ্রীতে মূল্য সংযোজন করা যায় তা আমাদের শিখতে হবে। তিনি বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল কর্মবিশ্বে উদ্ভাবন শক্তি, সৃজনশীলতা এবং কাস্টমাইজড উৎপাদনের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তখনই কেবল বিশ্বব্যাপী পণ্য ও সেবার ‘সাপ্লাই চেইন’-এ আমরা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারবো। এই সত্যটি সামনে রেখে আমাদের শিক্ষার সঙ্গে দক্ষতাকে মিলিয়ে নিতে হবে। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষতা উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি এবং এনজিও পরিচালিত সকল ধরনের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডকে সু-সমন্বিত করে শ্রম বাজারের উপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি-২০১১ প্রণয়ন করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম-আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাচ্ছি, তা বাস্তবায়নের জন্য সকলক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। এমডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সামনে এখন এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ। দক্ষ জনশক্তির যোগান বৃদ্ধি এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে উপার্জন সক্ষমতা অর্জন ও আয়বৃদ্ধি দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক হবে। যা অন্যান্য সামাজিক সূচকগুলোকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নীত করবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সফল হবো- এ বিশ্বাস আমার আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ এবং শ্রম চাহিদার রূপান্তর জাতীয় অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনশক্তির কর্মোপযোগী দক্ষতা বৃদ্ধি অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মহাপরিচালক গাই রাইডার, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন্স অব এমপ্লয়ার্স (আইওই) মহাসচিব লিন্ডা ক্রোমজং, বিজেএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশে কানাডার হাইকমিশনার বেনোই-পিয়েরে লারামি, বিশ্বব্যাংকের পরিচালক অমিত দার, ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন সভাপতি সালাহ উদ্দীন কাসেম খান বক্তব্য দেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.