কীভাবে বদলে যায় ছবিটা! টেস্ট ক্রিকেটের আসল রূপরসগন্ধ তো এটাই। মুম্বাইয়ে প্রথম দুই দিন ইংল্যান্ডের দাপট দেখে মনে হচ্ছিল, ‘ভারতের খবর আছে।’ সেই ভারত ম্যাচটা জিতে নিল কী অনায়াসে। আজ শেষ দিনে মাত্র ৮ ওভার টিকতে পারল ইংল্যান্ড। আগের রাতের সঙ্গে ১৩ রান যোগ করতেই শেষ! ম্যাচ হারল ইনিংস ও ৩৬ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড অলআউট ১৯৫ করতেই।
আসলে ৮ ওভার বা ১৩ রানেও নয়; ইংল্যান্ড শেষ হয়ে গেল রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ৪ ওভারে। আগের দিন মাত্র দুটি উইকেট ছিল তাঁর নামের পাশে। ইংল্যান্ডের পড়ে গিয়েছিল ৬ উইকেট। অশ্বিনের নামের পাশে ইনিংসে ৫ উইকেট থাকবে না, তা কী করে হয়। মুম্বাইয়ের শেষ দিনটা শুধু তাঁর জন্যই ছিল চ্যালেঞ্জের। অশ্বিন কি পারবেন?
চার ওভার বোলিং করে চারটা উইকেটই তুলে নিলেন অশ্বিন। অশ্বিন বোলিংয়ে আসেন, আর একটা করে উইকেট পড়ে। এভাবেই আগের রাতে ফিফটি করে অপরাজিত বেয়ারস্টো থেকে শুরু করে বাকিরা আত্মসমর্পন করল। ইংল্যান্ডের যে এর চেয়ে বেশি কিছু করারই ছিল না।
ম্যাচে ১২ উইকেট। সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারে সপ্তমবারের মতো ম্যাচে ১০ উইকেটের কীর্তিতে অনিল কুম্বলকের একদম কাছে চলে গেলেন অশ্বিন। এটি তাঁর সপ্তম কীর্তি। আর ড্রেসিংরুমে বসেই মুড়িমুড়কির মতো অশ্বিনকে উইকেট নিতে দেখা কুম্বলে এই কীর্তি করে দেখিয়েছিলেন আটবার।
এই ম্যাচে দলীয়ভাবে ইংল্যান্ডে কিছু প্রাপ্তি নেই। তবে ব্যক্তিগত কিছু প্রাপ্তি তো আছেই। এর মধ্যে আরও একটি সান্ত্বনাপুরস্কার হিসেবে বেয়ারস্টো এক বর্ষপঞ্জিতে মাত্র দ্বিতীয় ইংলিশ হিসেবে ১৪ শ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। আগে যে কীতি ছিল মাইকেল ভনের। আর স্পিনারদের হয়ে থাকা এই সিরিজে আদিল রশিদ নিয়েছেন ১৯ উইকেট। এক সিরিজে কোনো ইংলিশ লেগস্পিনারের এর চেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার একটাই কীর্তি আছে। সেটি ১৯২৯ সালে করে দেখিয়েছিলেন টিচ ফ্রিম্যান। আদিলের জন্য শেষ টেস্টটা প্রায় এক শ বছর পুরোনো এই রেকর্ড ভাঙার সুযোগ।
এসব ব্যক্তিগত প্রাপ্তিতেই সান্ত্বনা খুঁজলেন কুক। সিরিজ যে ৩-০তে হেরে যাওয়া নিশ্চিত হলো। কী একটা উপমহাদেশীয় সফর যাচ্ছে বেচারার। বাংলাদেশে গিয়ে টেস্ট হেরেছেন, সিরিজটা বাঁচিয়েছেন কোনো মতে। আর এক টেস্ট বাকি থাকতে ভারতেও সিরিজ হার নিশ্চিত। ইংলিশদের আজ যতটা ক্লান্ত দেখাল, এই সিরিজের ফল চেন্নাইয়ে ৪-০ও হয়ে যেতে পারে।
কুক সান্ত্বনা না খুঁজেই বা কী করবেন। প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান করেও ইনিংস ব্যবধানে হারতে হবে, কে ভেবেছিল! ইতিহাসেই এই ঘটনা ঘটল মাত্র তৃতীয়বারের মতো। এর আগে অবশ্য ইংল্যান্ডেরই এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। অন্য দলটি ছিল শ্রীলঙ্কা।
এত কিছুর মধ্যেও এটি কিন্তু বিরাট কোহলির টেস্ট হয়ে থাকবে। কোহলির ২৩৫ রানের ইনিংসটার জন্যই যে স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই টেস্ট। ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা তাই ভারত অধিনায়কই পেলেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.