শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিজয় লাভের মাত্র দু’দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর এদেশের প্রতিথযশা বুদ্ধিজীবীদের একটি বিরাট অংশকে নৃশংসভাবে হত্যা করে পাকিস্তানী বাহিনী। এ কাজে সহায়তা করে তাদের এদেশীয় দোসররা। এই দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে একটি বেদনা বিধুর ও কলঙ্কের দিন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়ই পরিকল্পিতভাবে চলে এদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা। যুদ্ধের শেষ সময়ে ডিসেম্বর মাসে হানাদার বাহিনী বুঝতে পারে তাদের পরাজয় নিশ্চিত। তখন তারা নবগঠিত দেশকে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দুর্বল এবং পঙ্গু করে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। মেতে ওঠে বর্বর পৈশাচিকতায়।
জাতির পিতার নেতৃত্বে ’৭০-র নির্বাচন থেকে শুরু করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় অর্জন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করেন বুদ্ধিজীবীরা।এটি বুঝতে পেরেছিলো পাকিস্তানি অত্যাচারি শাসকগোষ্ঠী। তাই নতুন একটি দেশ যেনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে সেই লক্ষ্যে তাদের হত্যার পরিকল্পনা নেয় তারা।
পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর-রাজাকার-আল শামসদের সহায়তায় বাঙালি বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানি, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের হত্যা করতে শুরু করে। সে দিন কেবল ঢাকাতেই দেড় শতাধিক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাদের লাশ রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুরের বধ্যভূমিসহ কয়েকটি স্থানে পাওয়া যায়। অনেকের মরদেহ শনাক্তও করা যায়নি। পাওয়াও যায়নি বহু লাশ। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে সারাদেশে ১১১১ জন বুদ্ধিজীবী হত্যার কথা জানা যায়।
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বে দশ জনের একটি কমিটি বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশা তৈরি করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর গভর্নর হাউজে ফেলে যাওয়া রাও ফরমান আলীর ডায়েরির পাতায় বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা পাওয়া যায়, যাঁদের অধিকাংশই ১৪ ডিসেম্বরে নিহত হন। আল শামস ও আল বদর বাহিনীর সশস্ত্র ক্যাডাররা হানাদার বাহিনীর অস্ত্র সাহায্য নিয়ে তাদেরই ছত্রছায়ায় এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে, এটিও আজ প্রমাণিত হয়েছে।
উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর পঙক্তির চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতি আজ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছে।
দিবসটি পালনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি নিয়েছে। বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.