এমনিতে চপল-চঞ্চল বাকপ্রিয় মানুষ হিসেবেই পরিচিত লরা ট্রট। তবে রিও অলিম্পিকসের সাইক্লিংয়ের ভেলোড্রামে এবার কান্নাভেজা লরা ট্রটকে দেখতে পেলেন সবাই। আর তার এ কান্নাটা স্বামীকে ইতিহাসে গড়তে দেখে। অলিম্পিকে স্বামী-স্ত্রীর ‘চ্যাম্পিয়ন জুটি’র সংখ্যাটা নেহায়েত কম নয়। তবে এবার সব আলো জেসন কেনি-লরা ট্রট দম্পতির ওপর। অলিম্পিকের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দম্পতির চিত্রটা এ জুটির। এবারের অলিম্পিকে সাইক্লিংয়ের পৃথক পাঁচটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে সবক’টাতেই স্বর্ণ কুড়ালেন জেসন কেনি ও লরা ট্রট। এতে উভয়ে গড়লেন নতুন ইতিহাস। অলিম্পিকে বৃটিশদের সর্বাধিক ৬ স্বর্ণ জয়ের রেকর্ডটি ছিল কেবল সাইক্লিং কিংবদন্তি ক্রিস হয়ের। রিওতে সাফল্য নিয়ে হয়ের রেকর্ড ছুঁলেন জেসন কেনি। টানা তিন অলিম্পিকে অংশ নিয়ে কেনির সংগ্রহ ৬ স্বর্ণপদক। গতকাল রিওতে কেনি স্বর্ণ কুড়ান সাইক্লিংয়ের কিরিন ইভেন্টে। চলতি আসরে কেনি এর আগে জেতেন স্প্রিন্টের দলগত ও ব্যক্তিগত শিরোপা। রিওতে দুই ইভেন্টে স্বর্ণপদক কুড়িয়েছেন লরা ট্রটও। এতে পৃথক রেকর্ড গড়েছেন ট্রটও। প্রথম বৃটিশ নারী অ্যাথলেট হিসেবে চারটি স্বর্ণ পদকের গৌরব কুড়ালেন ২৪ বছরের ট্রট। লড়াকু লরা ট্রটের জীবনের একবারে শুরুটাতেও ভিন্ন সংগ্রামের গল্প। লরার পিতা অ্যাড্রিয়ান বলেন, সময়ের আগেই পৃথিবীতে চলে এসেছিল সে। এজন্য ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে থাকতে হয় তাকে। শৈশবে অ্যাজমার সমস্যা ছিল তার। আর ট্রটের আত্মবিশ্বাসী চেহারাটা দেখতে পেয়েছিলেন বৃটিশ সাইক্লিং কোচ লয়েড ডেভিস। তিনি বলেন তাকে খন দেখলাম তখন সে পুঁচকে একটা মেয়ে। আমি জানতে চাইলাম তার ইচ্ছাটা কী? সে বললো, বৃটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল অ্যাথলেট হতে চাই। জেসন কেনি ও লরা ট্রটের প্রেমের খবরটা প্রথমে নজরে আসে ২০১২ অলিম্পিকসের বিচ ভলিভল ভেন্যুর গ্যালারিতে। লন্ডনে বিচ ভলিবল ম্যাচের ভিআইপি গ্যালারিতে ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যামের পেছনের সারিতে পাশাপাশি আসনে বসে খেলা উপভোগ করতে দেখা যায় এ জুটিকে। আর কেনির মাতা লরাইন বলেন, আমি তাদের সম্পর্কের বিষয়টি টের পেলাম যখন সে তাকে আমাদের বাসায় নিয়ে এলো। কেনি আমাকে ফোন দিয়ে বললো, লরাকে কিছু জিনিস দেখাতে বাড়িতে নিয়ে আসছে সে। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, লরা কী তোমার প্রেমিকা? সে বললো, না কেবল বন্ধু। কেনির ক্রীড়া প্রতিভাটা জিনগত। এক সময় আমি ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলাম। তার বাবা মাইকেল একজন সুশৃঙ্খল মানুষ। শাশুড়ির কথার প্রতিধ্বনি এবার লরার কণ্ঠে। রিওতে কিরিন ইভেন্টে কেনির শিরোপা জয় শেষে টুইটার বার্তায় লরা লিখেন- ‘আজ আমি খুবই খুশি। আমাদের অনাগত সন্তান হয়তো তাদের জিনে কিছু একটা পাবে। তাই না?’ আর কেনি-লরা জুটি সম্পর্কে অ্যাড্রিয়ানের মন্তব্যটা মজার। লরার বাবা অ্যাডিয়ান বলেন, কেনি খবই স্বল্পভাষী মানুষ। আর লরা হলো বাকপ্রিয় ও চঞ্চল স্বভাবের। আমি মাঝে মাঝে ভাবি, তারা দু’জনই জেসনের মতো হলে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলতো কীভাবে? আবার ভাবি, বিধাতা নিশ্চয় লরার মতো দু’জনকে জুটিবদ্ধ করতে চাইবেন না! স্টেফি-আগাসি, ফ্রোডেনো-এমা, আনি-পোস্টমা দম্পতির মতো অলিম্পিক ইতিহাসে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ঝুলিতে পদকের নজির রয়েছে ২৩০ জুটির। এতে উভয়ের স্বর্ণ পদকের গৌরব রয়েছে ৬৬ দম্পতির। ১৯৮৮ সালে মহিলা একক টেনিসের অলিম্পিক শিরোপা কুড়ান জার্মান লিজেন্ড স্টেফি গ্রাফ। ১৯৯৬ আটলান্টা অলিম্পিকে পুরুষ এককের শিরোপা জেতেন স্বামী আন্দ্রে আগাসি। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকসে ট্রাইথলনের পৃথক স্বর্ণ জেতেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাথলেট দম্পতি ইয়ান ফ্রোডেনো-এমা স্নোসিল। স্পিড স্কেটিংয়ে তিনবারের অলিম্পিক শিরোপাজয়ী আনি ফ্রাইসিঙ্গারের স্বামী আইডস পোস্টমা স্বর্ণ পদক কুড়ান-১৯৮৮ সিউল অলিম্পিকসে। অলিম্পিক সাফল্যে স্বামী জেসন কেনি এগিয়ে রইলেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে লরা ট্রটের ছবিটা ঝকঝকে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে কেনির ৩ শিরোপার বিপরীতে লরা সোনালী সাফল্য দেখেছেন ৭ বার। ক্যারিয়ার লরা কেনি অলিম্পিক স্বর্ণ ৪ ৬ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ৭ ৩ ইউরোপিয়ান স্বর্ণ ১০ ১ কমনওয়েলথ স্বর্ণ ১ ০
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.