ভোট নিয়ে শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া মেয়র প্রার্থীরা। সরকারদলীয় প্রার্থী ছাড়া অন্যরা বলছেন, ভোটারদের মধ্যেও তাঁরা ভয় ও শঙ্কা দেখছেন। অবশ্য নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রার্থীদের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশ্বাস দিয়েছে। প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার ব্যাপারে এখনই তাঁরা দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ দেখতে চান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা হওয়া অভিযোগগুলো সুরাহা করা। প্রার্থীরা আরও বলছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের তেমন তৎপরতা না থাকার কারণে তাঁদের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া, কালোটাকার ছড়াছড়ি, সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মকাণ্ড এবং তৃতীয় কোনো পক্ষের নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে তাঁদের মধ্যে।
সরকারদলীয় প্রার্থী হলেও সেলিনা হায়াৎ আইভীর আশঙ্কা তৃতীয় পক্ষ কোনো অঘটন ঘটাতে পারে। মতবিনিময় সভায় আইভী বলেন, ‘আপনিও (সাখাওয়াত) সহিংসতার আশ্রয় নেন না, আমিও কোনো সহিংসতার আশ্রয় নিই না, আমার কোনো বাহিনীও নাই। কিন্তু তৃতীয় পক্ষ এখানে কোনো ধরনের কারসাজি করতে পারে। ওই পক্ষ যেন কিছু না করতে পারে, সে জন্য সজাগ ও সতর্ক থাকতে আপনাদের (ইসি) কাছে অনুরোধ করছি।’ আইভী আরও বলেন, রাতে কালোটাকার ছড়াছড়ি হয় বলে কাউন্সিলরদের কাছ থেকে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। ১৯, ২০, ২১ তারিখ রাতেও মোবাইল টিম সক্রিয় রাখার আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া ২৭টি মোবাইল টিম এখন থেকে রাতে যাতে সক্রিয় থাকে, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আইভী বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন কমিশন যেন তা করে। সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান মতবিনিময় সভায় বলেন, গণসংযোগ করার সময় মানুষ প্রশ্ন করেন, তাঁরা নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কি না? পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন কি না? মানুষ এই নিশ্চয়তাটুকু চান। বিএনপির এই প্রার্থী দাবি করেন, এখন পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়নি। বিভিন্ন এলাকায় তাঁর কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তিনি কয়েকটি বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার বরাবর অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতিকার পাননি। অভিযোগের প্রতিকার করার উদ্যোগে ঘাটতি আছে বলেও জানান তিনি। মতবিনিময় সভায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাসুম বিল্লাহ, ইসলামী ঐক্যজোটের এজহারুল হক, কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস, এলডিপির কামাল প্রধান বক্তব্য দেন। তাঁরা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে করণীয় ও তাঁদের বিভিন্ন শঙ্কার কথা নির্বাচন কমিশনকে জানান। মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক, মো. আবু হাফিজ, মো. শাহনেওয়াজ, নির্বাচন কমিশন সচিব আবদুল্লাহ, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন, জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার মইনুল হক, বিজিবির ৩৯ ব্যাটালিয়নের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামীম ইফতেখার ও র্যা ব-১১-এর অধিনায়ক কামরুল আহসান বক্তব্য রাখেন। মতবিনিময়ের পর মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সিইসির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জের মানুষ আশ্বস্ত হতে পারেননি। কারণ, নারায়ণগঞ্জের মানুষ আশা করেছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ঘোষণা আসবে। সবাই আশঙ্কা করছেন, বলপ্রয়োগ অথবা কারচুপি হতে পারে। মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্বাচন কমিশন সব সময় নির্বাচনের আগে এ ধরনের আশ্বাস দেয়। এর আগে বহুবার সিইসি এই আশ্বাস দিয়েছেন। মানুষ কিন্তু তার প্রতিফলন দেখেনি। তারপরও তিনি আশা করছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। অবশ্য ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাসুম বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সিইসির বক্তব্যে তাঁর পূর্ণ আস্থা আছে। আইভী-সাখাওয়াতের গণসংযোগ গতকাল বিকেলে সেলিনা হায়াৎ আইভী ২৩ নম্বর ওয়ার্ড, বন্দরের নবীগঞ্জ, বাগে জান্নাত, কদমরসুল, কবিরের মোড়, হাটের ঘাট, ইস্পাহানি ও একরামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। অনেকেই এ সময় আইভীর হাতে ফুলের তৈরি নৌকা তুলে দেন। অন্যদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন সকালে নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সনাতন পাল লেন, পালপাড়া, নয়ামাটি এলাকায় এবং বিকেলে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেওভোগ, বাবুরাইল, পাক্কা রোডসহ বিভিন্ন জায়গায় গণসংযোগ করেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.