বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: বন্ধুত্বের ৪৫ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলেছেন, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ দুটির সম্পর্ক অতীতে নানা উত্থান-পতনের মধ্যদিয়ে গেলেও বর্তমানে এটি অনেক বিস্তৃত ও গভীর। এ সম্পর্ককে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি করতে হলে দুই দেশের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়- এমন কৌশলেই এগিয়ে যাওয়া উচিত । গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ বিলিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা দুই দেশের সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় করতে পারস্পরিক সম্মান ও আস্থা জরুরি বলে মত দেন। সেখানে তারা বন্ধুত্ব এগিয়ে নিতে ‘নতুন মানসিকতা’ ও ‘চিন্তা’র সমন্বয় সাধনের পরামর্শ দেন। মুক্ত আলোচনায় অভিন্ন নদীর পানির সমস্যা সমাধান, ভিসা জটিলতা নিরসন, বাণিজ্য-ঘাটতি কমিয়ে আনা, ভারতে বাংলাদেশের চ্যানেল দেখা না যাওয়াসহ নানা সমস্যার কথা উঠে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্তন প্রফেসর আকমল হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর আমেনা মহসিন, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)’র জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মোহাম্মদ ইউনুস নির্ধারিত বিষয়ে পৃথক ৩টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রফেসর আমেনা মহসিন তার উপস্থাপনায় বলেন, যে কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে আস্থা ও বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ। কূটনীতিতে সেটি অপরিহার্য। ভারত-চীন, ভারত-পাকিস্তান, পাকিস্তান-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক এ অঞ্চলের কূটনৈতিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতির কথা বিবেচনায় রেখে কীভাবে এসবের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা হয়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে আবেগ, বাস্তবতা দুটোই আছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা কোনোভাবেই ভোলার নয়। একাত্তরে ভারতীয়রাও রক্ত দিয়েছেন। এটাই আমাদের সম্পর্কের আবেগগত ভিত্তি। অন্যদিকে বাস্তবতা হলো, ৪৫ বছরে দুই দেশের সম্পর্ক ওঠানামা করেছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে এতে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য এসেছে। স্থলসীমান্ত চুক্তি ও সমুদ্রসীমা চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসান হয়েছে। তিনি বলেন, সীমান্ত সমস্যা সমাধানে দুই দেশকে আরও কৌশলী হতে হবে। বাণিজ্য-ঘাটতি কমানো, ভিসা সমস্যা সহজীকরণসহ নানা সমস্যা সমাধানে এখন গুরুত্ব দিতে হবে। তার মতে, বাংলাদেশ এখন শুধু নিরাপত্তাগ্রহীতা নয়, নিরাপত্তাদাতাও। উত্তর-পূর্ব ভারত এবং ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশ নিরাপত্তা দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন জ্যেষ্ঠ ওই কূটনীতিক। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর আকমল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক পরিচালিত হয় দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ের ওপর। এ ক্ষেত্রে দুই দেশই অন্যের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিলে সম্পর্ক উন্নয়ন সহজ হয়। আলোচনা বিভিন্ন সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এহসানুল হক, একই বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমীন, সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান, হুমায়ুন এ কামাল, মুহসীন আলী খানসহ অংশগ্রহণকারী কূটনীতিক, সম্পর্ক বিশ্লেষক, গবেষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.