চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ইউপি মেম্বারের ভয়ে ও লোক লজ্জায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে আরজু আক্তার (১৩) নামের এক মাদরাসা শিক্ষার্থী। গত ১৭ই অক্টোবর শনিবার সকালে উপজেলার পদুয়া ফরিয়াদিকুল তাজুর বাপের পাড়ায় এ ঘটনাটি ঘটে। সে ওই এলাকার মমতাজ উদ্দীন ও মমতাজ বেগমের মেয়ে এবং পদুয়া সুফিহ ফতেহ্ আলী ওয়াইসী মহিলা মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আরজু আক্তারের মা-বাবা দুজনই দিনমজুর। এ ঘটনায় মাহবুবুর রহমান (২২) নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আরজু আক্তারের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া এলাকার নুরুল ইসলামের পুত্র মাহবুবুর রহমানের মোবাইলে রং নাম্বারে পরিচয় হয়। সেখান থেকে দুজনের প্রণয় হয়। সে সূত্র ধরে গত ১৬ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আরজুর বাড়িতে মাহাবুব মেহমান হয়ে বেড়াতে আসে। এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে বাড়ি ঘিরে তাকে আটক করে রাত ১১টায় পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে। এ সময় আরজুর বাবা-মা তাকে আপ্যায়ন করেন। নিত্যান্ত গরিব ঘরে সন্ধ্যায় অচেনা যুবককে দেখে এলাকার সরদার আবদুল আলম সিকদারের মনে সন্দেহ হয়। সে সঙ্গে সঙ্গে এলাকার মানুষ জোগাড় করে যুবকটিকে বেঁধে সালিশি বৈঠকের জন্য স্থানীয় মেম্বার-চৌকিদারকে খবর দেয়। মেম্বার ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার পাঠিয়ে রাত ১১টায় পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যুবকটিকে বেঁধে রাখে। পরদিন শনিবার সকালে প্রতিদিনের ন্যায় আরজুর বাবা-মা মানুষের বাড়িতে কাজ করতে চলে যায়। ওই সময় প্রতিবেশী সাইফুল ইসলামের স্ত্রী নিশাত তাসমিন প্রতিদিনকার মতো বাচ্চা কোলে নিয়ে আরজুদের বাড়ির দিকে সকাল ৯টার দিকে ঘুরতে যায়। ওই সময় বাড়ির পাশে আরজুদের গোয়াল ঘরে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় আরজুর ঝুলন্ত লাশ দেখে সে চিৎকার দিয়ে ওঠে। এ ঘটনায় আরজুর বাবাকে জিজ্ঞেস করা হলে হতবাক দিনমজুর বাবা সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেননি। তবে তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য স্থানীয় সরদার আবদুল আলম সিকদার ও শামসু জড়িত রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। মা মমতাজ বেগমের কাছে গেলে তিনিও আত্মহত্যার কথাটি স্বীকার না করে শুধু বলেন, মাদরাসা যাওয়ার পথে আমার মেয়েটিকে দেখে ছেলেটি পছন্দ করেছিল। তাই সে বিষয়টি আমাদের বলতে বাড়িতে এসেছিল। আমরাও তাকে আমাদের সাধ্যমতো মেহেমানদারি করছিলাম। ঠিক ওই সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলাকার মানুষ এসে মাহাবুবকে বেঁধে নিয়ে যায়। কী দরকার ছিল নিরীহ ছেলেটিকে বেঁধে নিয়ে যাওয়ার। সে তো নাস্তা করেই চলে যেত। এদিকে, কারা, কখন, কীভাবে আমার মেয়ের আরজুর ঝুলন্ত লাশ প্রথমে উদ্ধার করেছে; সে ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেননি। আশপাশের সবাই দিনমজুর। ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে একজন আরেকজনের দিকে শুধু চেয়ে থাকে। সবার চোখে-মুখে অজানা আতঙ্ক লক্ষ্য করা গেছে। স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোবাইল ফোনে বলেন, ঘটনার দিন যখন ছেলেটাকে বেঁধে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন আরজু ও তার বাবা-মাকে মেম্বার এই বলে শাসিয়ে যায় যে, আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে তোমরা মেয়েকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে হাজির না হলে তোমাদের বেঁধে নিয়ে যাওয়া হবে এবং চরম শাস্তি ভোগ করতে হবে। তার ধারণা, ওই ভয়ে ও অপমানে আরজু আত্মহত্যা করেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জহির উদ্দীন বলেন, এ ঘটনা ওই পাড়ার সরদার আবদুল আলম সিকদার সবকিছু জানেন। সরদার আবদুল আলম সিকদারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ঘটনায় জড়িত নন বলে জানান। এদিকে লোহাগাড়া থানা পুলিশ দুপুরে লাশ থানায় নিয়ে আসে ও পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদে আটক থাকা ছেলেটিকেও উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। অপরদিকে, স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এ ব্যাপারে লোহাগাড়া এসআই আবদুল আউয়াল জানান, গতকাল এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে। আটক মাহাবুবকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.