কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়েও হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না। জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় মগবাজার-তেজগাঁও সংযোগ সড়কটির কাজ এখনো শুরু হয়নি। একই অবস্থা হাতিরঝিলের পানি পরিষ্কার রাখতে নেওয়া প্রকল্পেরও। বাকি আছে মেরুল বাড্ডা অংশের ইউলুপ নির্মাণের কাজসহ নিকেতন অংশে হাতিরঝিল ব্যবস্থাপনা ভবনের নির্মাণকাজ। এদিকে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ১০ সদস্যের নতুন একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। একই উদ্দেশ্যে প্রায় চার বছর আগে প্রকল্পের কাজ পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ৩২ সদস্যবিশিষ্ট আলাদা দুটি কমিটি করলেও সেগুলো কার্যকর হয়নি। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। সরকারের কাছে আরও দেড় বছর সময় চেয়েছে রাজউক। এর আগে চতুর্থবার মেয়াদ বাড়ানোর সময় হাতিরঝিলের পানি পরিষ্কার রাখতে ‘সেপারেশন অব স্যুয়ার লাইন ফ্রম স্টর্ম ওয়াটার লাইন’ শীর্ষক প্রকল্প যুক্ত করা হয়। সে কাজ শুরুই হয়নি। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যদ্দুর জানি, প্রস্তাবটি এর মধ্যেই মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় এবার বাড়ছে না। প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর কাজী শাকিল হোসেনের ভাষ্য, মেরুল বাড্ডা অংশে দ্বিতীয় ইউলুপের নির্মাণকাজ এখনো ৭৫ শতাংশ বাকি। আর প্রাথমিক পরিকল্পনায় ব্যবস্থাপনা ভবনটি তিনতলা পর্যন্ত করার কথা থাকলেও পরে ১০ তলা পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সময় বেশি লাগছে।
মেজর শাকিলের দাবি, ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যেটুকু বাকি আছে তাতে বড়জোর ছয় মাস লাগবে। তবে সব কাজ শেষে প্রকল্প এলাকার অ্যাম্ফিথিয়েটার, ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস, চক্রাকার বাস সার্ভিস ও অন্যান্য খাত থেকে আয়কৃত অর্থের পরিমাণ এবং সেটা দিয়ে এর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটানো সম্ভব কি না, সবকিছু তাঁরা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে চান। এ কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও তাঁরা কিছু বাড়তি সময় চেয়েছেন ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও একটি কার্যকর কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য।
হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে, প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১০ সালের জুনে। প্রথম দফা সংশোধনীতে এক বছর সময় বাড়ার সঙ্গে ব্যয় বাড়ে ৮ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় দেড় বছর মেয়াদ বেড়ে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৭১ কোটি টাকায়। এ দফায় ব্যয় বাড়ে ৪৯০ কোটি টাকা। তৃতীয় দফায় আরও ২৬৫ কোটি টাকা যোগ হয়ে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয় ২০১৫ সালের জুন। ওই বছরই চতুর্থবার মেয়াদ বাড়ানো হলেও ব্যয় বাড়ানো হয়নি।
ব্যবস্থাপনায় নতুন কমিটি: হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ১০ সদস্যের নতুন একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সম্প্রতি মহানগর সেনা ক্যাম্পে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পের জনবলকাঠামো গঠন, নির্মিত স্থাপনা ও উন্নয়নকৃত জায়গার ব্যবহার’ বিষয়ে গঠিত কমিটির এক সভায় এই সুপারিশ করা হয়, যা বর্তমানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন ওই সভায় সভাপতিত্বকারী রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) আবদুর রহমান।
রাজউক কর্মকর্তা ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কমিটি ছোট হলে এর কার্যক্রম যেমন গঠনমূলক হয়, তেমনি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াও সহজ হয়ে আসে। বিপরীতে বড় কমিটির কর্মপ্রক্রিয়া হয় জটিল। নিয়মিত সভায় কোরাম-সংকটের কারণে কাজের অগ্রগতিও আশানুরূপ হয় না।
সুপারিশকৃত নতুন এই কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে রাখা হয়েছে রাজউক চেয়ারম্যানকে। সদস্যসচিব হিসেবে আছেন প্রকল্প পরিচালক (রাজউক)। এ ছাড়া রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন), সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন), প্রকল্প পরিচালক (সেনাবাহিনী), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের একজন প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের একজন প্রতিনিধিকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ অবস্থায় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে প্রকল্পটি বুঝে নেওয়ার আগেই এর ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নসহ প্রকল্পের আওতায় থাকা স্থাপনাগুলো ব্যবহার ও ইজারা প্রদানসংক্রান্ত বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.