দেশের সার্বিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত শিল্পায়ন। বলা বাহুল্য, গ্যাস-বিদ্যুৎ ছাড়া কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যেতে পারে না। শিল্প খাত আমাদের অগ্রাধিকার হওয়ার পরও দুই হাজারের বেশি শিল্প-কারখানা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছে না। তাদের আবেদন পড়ে আছে তিতাস, বাখরাবাদ ও পিডিবিসহ গ্যাস-বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দফতরে। এতে একদিকে শিল্পোদ্যোক্তাদের বসে বসে ব্যাংকের সুদ দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। বড় ধরনের বিনিয়োগ করেও উৎপাদনে যেতে না পেরে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন- যা কাম্য হতে পারে না। আশার কথা হচ্ছে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সর্বশেষ সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অর্থমন্ত্রী এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি দিয়েছেন। আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ দ্রুত উচ্চ পর্যায়ের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে। অন্যসব সিদ্ধান্তের মতো লালফিতার দৌরাত্ম্যে যেন এটা আটকে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এর সঙ্গে শিল্পায়ন, বেকারত্ব দূরীকরণ, সর্বোপরি কাক্সিক্ষত উন্নয়নের ইস্যু জড়িত। এ কথা অজানা নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনেক কিছুই ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের ওপর নির্ভর করে। অর্থনীতি ভালো থাকলে দেশও ভালো থাকে। এজন্য ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির মুখে না পড়েন সেদিকে বিশেষ নজর দেয়া দরকার। প্রয়োজনে শিল্পায়নের স্বার্থে ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে একটি দফতর থেকে গ্যাস-বিদ্যুৎ, পরিবেশ ও নিরাপত্তা ছাড়পত্র দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে দেশী-বিদেশী সব বিনিয়োগকারী উৎসাহিত হবেন। কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ আসবে ও কর্মসংস্থান তৈরি হবে। জানা গেছে, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায়, বিশেষ করে গ্যাস সংকটের কারণে বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনেকটা স্থবির হয়ে আছে। বিনিয়োগ যা আছে, সব কাগজে-কলমে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ দ্রুত দেয়ার পাশাপাশি অবকাঠামো খাতে মনোযোগ দিতে হবে।
গ্যাস ও বিদ্যুৎ বর্তমান সময়ে উন্নয়নের অপরিহার্য অঙ্গ। গ্যাস আমাদের প্রধান খনিজসম্পদও বটে। কিন্তু বিদ্যুৎ নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা স্বচ্ছ হলেও পরিতাপের বিষয়, গ্যাসের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিকল্পনা দৃশ্যমান নয়। এক্ষেত্রে এক ধরনের ধোঁয়াশা ও কৃত্রিম সংকট আছে বলে অনেকের ধারণা। বিভিন্ন সময় অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্বও শোনা গেছে গ্যাস নিয়ে। আমাদের প্রত্যাশা, গ্যাস ইস্যুতে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে এবং সম্ভাব্য মজুদ ও উত্তোলনের বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারী ও শিল্পোদ্যোক্তারা প্রথমেই নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি পাওয়ার নিশ্চয়তা চাইবেন- এটাই স্বাভাবিক।
অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় আরও তিনটি বিষয়ে নির্দেশনা এসেছে। এগুলো হচ্ছে- আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের দাম কমানো, অবৈধ পথে রেমিটেন্স আসা বন্ধ এবং রিজার্ভের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা। আমরা মনে করি, বিপিসির লোকসানের অজুহাতে দেশের ভোক্তাদের কাছ থেকে ন্যায্য দামের বেশি অর্থ আদায় করা নৈতিকভাবে উচিত হচ্ছে না। তাছাড়া এরই মধ্যে বিপিসি লাভজনক অবস্থানে আসায় দ্রুত তেলের দাম কমানো উচিত। অবৈধ রেমিটেন্স আসা বন্ধ করতে হলে বৈধ চ্যানেলগুলোকে প্রবাসীদের কাছে পৌঁছানোর বিকল্প নেই। রিজার্ভের কার্যকর ব্যবহার ও চুরি হওয়া রিজার্ভ ফিরিয়ে আনা এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া তো সময়ের দাবি। শিল্পে দ্রুত গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসব সিদ্ধান্ত শিগগিরই কার্যকরের পদক্ষেপ নেয়া হবে- এটাই প্রত্যাশা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.