মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মার বিস্তৃত চরজুড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ নিদর্শন পদ্মা রিসোর্ট। এ রিসোর্টে দিনদিন পর্যটক বাড়ছে। পদ্মা রিসোর্ট দেখলে মনে হবে চরে যেন সেন্টমার্টিন দ্বীপ জেগে আছে। সাড়ে তিনশ’ শতাংশ জমির বিশাল বিস্তৃত চরে প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য নিয়ে পদ্মা রিসোর্টের কটেজগুলো (কুঁড়েঘর) নির্মাণ করা হয়েছে। নদীরপাড় সংলগ্ন পদ্মা নদীঘেরা চরের মধ্যে কুঁড়েঘর ও প্রাকৃতিক পরিবেশ পদ্মা রিসোর্টকে মনোমুগ্ধকর করে রেখেছে। এই রিসোর্টে থাকা-খাওয়া, সভা-সমাবেশ, বনভোজনহ সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। ঈদ, পূজা, বিশেষ দিন ও বন্ধের দিনগুলোতে দেশি-বিদেশি পর্যটককের ঢল নামে। ঢাকা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানা। গাড়ি নিয়ে আসা যায় মাত্র এক ঘণ্টায়। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক হয়ে লৌহজং থানা সংলগ্ন মসজিদ ঘাটের পাশেই গাড়ি থামাতে হয়। সেখান থেকে পদ্মা রিসোর্টের নিজস্ব ট্রলারে মাত্র ৫ মিনিটের পদ্মার একটি শাখা নদীপথ পাড়ি দিলে ওপারেই পদ্মা রিসোর্ট। এ রিসোর্টের কটেজ বা কুঁড়েঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে হলে আগেই বুকিং দিয়ে আসতে হয়। যারা বুকিং দিয়ে আসেন তাদের থেকে ট্রলার ভাড়া নেয়া হয় না। আর যারা বুকিং ছাড়া আসেন তাদের আসা-যাওয়া ভাড়া জনপ্রতি নেয়া হয় ৫০ টাকা। পদ্মা রিসোর্টে মাত্র ১৮টি কটেজ রয়েছে। ১২টি কটেজ বাংলা মাসের নামে ও ৬টি কটেজ ঋতুর নামে। এরমধ্যে পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে ১২টি কটেজ। শীত নামে একটি কটেজ রেস্টুরেন্ট ও অফিস কক্ষ বসন্ত নামে। দিনদিন পর্যটক বেড়ে যাওয়ায় যারা কটেজে রাতে ও দিনে থাকতে চান তাদের আগেই বুকিং দিয়ে কনফার্ম করে আসতে হয়। নিচ ও উপরতলা মিলে একটি কটেজ। নিচতলায় রয়েছে এক সেট সোফা ও টেবিল ও একটি বিছানা, দেড় তলায় অত্যাধুনিক ফিটিংসহ (কমোড, বেসিন) একটি ওয়াশরুম (বাথরুম), ২য় তলায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ২টি সুসজ্জিত সিঙ্গেল বেড, মধ্যখানে সেন্টার টেবিল, ওয়্যারড্রোব, লাইট, ফ্যান ইত্যাদি। রয়েছে বারান্দা। রিসোর্টটি চারদিকের পদ্মা নদী প্রবাহিত হওয়ায় সার্বক্ষণিক মৃদুমন্দ ঠাণ্ডা বাতাস বিরাজ করে। এতে করে সেখানে এসি’র কোনো প্রয়োজন হয় না। সার্বক্ষণিক জেনারেটর সুবিধা রয়েছে রিসোর্টটিতে। পদ্মা রিসোর্টের সুসজ্জিত রেস্টুরেন্ট যা ২০টি টেবিল-চেয়ার দিয়ে সাজানো সেখানে ২০০ জন লোক নিয়ে লাঞ্চ বা ডিনারসহ যে কোনো পার্টি আয়োজন করা যায়। পদ্মার ইলিশ, দেশি মুরগি, বিভিন্ন ভর্তা, ডাল, টাটকা সবজিসহ ৭ ধরনের খাবারের জন্য জনপ্রতি নেয়া হয় ৪৫০ টাকা। রেস্টুরেন্টে খাবারের জন্য ১২০টি চেয়ার রয়েছে। পদ্মা রিসোর্টের ম্যানেজার তারিকুল ইসলাম জানালেন, পদ্মা রিসোর্টের কটেজে ডে-শিফটে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হয় ২ হাজার ৩শ’ টাকা। দিনের বেলায় একটি কটেজে ১০ জনের মতো থাকা যায়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত কটেজ ভাড়া ২ হাজার ৫শ’ টাকা। একদিনের জন্য অর্থাৎ বিকাল ৫টা থেকে পরদিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত কিংবা সকাল ৯টা থেকে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত ভাড়া গুনতে হবে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা। রাতে একটি কটেজে ৪ জন পর্যন্ত থাকা যায়। ইচ্ছা করলে এই বালুচরে করতে পারেন পিকনিক, নিজেরা রান্না করতে পারেন, ছেলে-মেয়েরা মিলে খেলতে পারেন, ভলিবল, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, কাবাডি ইত্যাদি। একটু দূরে যেতে চাইলে দেখা যাবে চরাঞ্চলের গ্রাম জীবন, পুরো চরজুড়ে চোখে পড়বে সবজির গাছ। বিকালে পদ্মা রিসোর্টের বালুচরে ইজিচেয়ার বা দোলনা চেয়ারে বসে দেখতে পাবেন সূর্যাস্ত বা ভোরের সূর্যোদয়। পদ্মা নদী ভাঙনের ফলে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানা, হাসপাতাল ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ এক বিশাল এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর পদ্মার শাখা নদী সংলগ্ন নতুন থানা ভবন নিয়ে আসা হয়। থানার ওপারের বিশাল চর জেগে উঠে। ওই চর এলাকায় লৌহজং উপজেলার ৪-৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া গ্রামের চরের মধ্যে ২০০৬ সালে নির্মাণ করা হয় পদ্মা রিসোর্ট। জমির মূল্য বাদে এই রিসোর্ট নির্মাণে ব্যয় করা হয় ৫০-৬০ লাখ টাকা। মনোরম ও নিরিবিলি পরিবেশ হওয়ায় দিন দিন এই রিসোর্টে পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে। বিদেশি পর্যকটও আসতে থাকে। কিন্তু বিরোধী আন্দোলনের পর এই রিসোর্টে বিদেশি পর্যটক আসা বন্ধ রয়েছে। পদ্মা রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ বলেছেন, পদ্মার ভাঙনে সব বিলীন হয়ে যাওয়ায় লৌহজংয়ে অনুষ্ঠান করার মতো কোনো জায়গা নেই। এই রিসোর্টে সরকারি মিটিং বিনা পয়সায় করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। সামাজিক সংগঠনগুলো ২-৭ হাজার টাকায় তাদের অনুষ্ঠান করতে পারছেন। ৫০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে পিকনিক করা যায়। এখানে জন্মদিন পালন করারও সুযোগ রয়েছে। পর্যটকরা বলেছেন, পদ্মা রিসোর্টের রেট সাধ্যের মধ্যেই আছে। এখানে গ্রামের পরিবেশ উপভোগ করা যায়। আশপাশের পরিবেশও ভালো। এমন জায়গা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। পদ্মার ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খাওয়া যায়। পদ্মা রিসোর্টের পরিচালক সাদিক হোসেন মান্না বলেছেন, নিরাপত্তায় প্রাইভেট সিকিউরিটি আছে যথেষ্ট পরিমাণে। থানা থেকেও সহযোগিতা করা হয়। তিনি জানালেন বর্তমানে তিনি পদ্মার ভাঙন সংকটে রয়েছেন। রিসোর্টটি চরের মধ্যে করা হয়েছে। আবার নদীভাঙন শুরু হয়েছে। সরকার পদক্ষেপ না নিলে রিসোর্টটি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.