অসংখ্য গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে, চিনি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যারা চিনি ছাড়ার চিন্তা করছেন, কিন্তু কোনভাবেই কাজটি করতে পারছেন না তাদের জন্য এ পরামর্শ।
এক হিসাবে বলা হয়, গোটা বিশ্বে স্থূলতা এক বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। বড়দের এ সমস্যা তো আছেই। বিশেষ করে শিশুদের স্থূলতার হার বাড়ছে। এর পেছনে চিনির অন্যতম ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন সফট ড্রিংকস এবং চিনিপূর্ণ অন্যান্য খাবারের কারণে স্থূলতাসহ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং দাঁতের সমস্যা দেখা দেয়। তাই চিনি এড়িয়ে চলার উপায় খুঁজতে হবে। বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ১. চিনিকে বুঝুন: চিনির বিষয়টি এলেই একেকজন একেক ধারণা পোষন করেন। আসলে চিনি হলো এক ধরনের রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট। এটা ক্যালোরির উৎস। আমাদের দেহ চিনি ও অন্যান্য উৎস ব্যবহার করে শক্তি উৎপন্ন করে। আর যে চিনি এ কাজে ব্যবহৃত হয় না তা লিভারে ফ্যাট হিসাবে জমা থাকে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপন্ন খাবারে চিনি ব্যবহৃত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জনায়, একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের প্রতিদিন ২৫ গ্রামের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়। এর বেশি হলেই বিপদ।
২. সফট ড্রিঙ্কস ত্যাগ করুন: এক বোতলে ১৬ চা চামচের মতো চিনি থাকে। এটা ৬৪ গ্রামের সমান। এ তালিকায় আছে কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস, ফ্লেভারযুক্ত দুধ এবং এনার্জি ড্রিঙ্কস। এসব উৎস থেকে কোনো পুষ্টিগুণ মেলে না। কিন্তু ক্যালোরির বড় উৎস। কিন্তু এই ক্যালোরি যখন চিনিপূর্ণ পানীয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়, তখন মস্তিষ্ক একে ক্যালোরি হিসাবে শনাক্ত করতে পারে না, ঠিক যেভাবে খাদ্য গ্রহণের সময় ক্যালোরি শনাক্ত করা হয়। এই তরল ক্যালোরি আমাদের ক্ষুধা মেটাতে পারে না। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
৩. জুস নয়, ফল খান: সরাসরি ফল খেলে তার চিনি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয় না। বরং এই চিনি প্রাকৃতিকভাবেই ফল খাওয়ার আগ্রহ বৃদ্ধি করে। তা ছাড়া ফলে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফাইবার। এক গ্লাস জুস খাওয়া বেশ সহজ কাজ। এতে হয়তো ৭টি আপেল থাকতে পারে। কিন্তু ৭টি আপেল খাওয়া এত সহজ নয়। তা ছাড়া এমনি ফল খেলে তৃপ্তি আসে। এর চিনি রক্তে মিশে যায় এবং আমাদের দেহ প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। কিন্তু জুসে অধিকাংশ ফাইবার অনুপস্থিত থাকে। এ ছাড়া প্রতি গ্লাস জুসে থাকে ২১ চিনি।
৪. চিনি অন্য নামে: চিনি অন্য নামেও খাবারে থাকতে পারে। হাই-ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপ, ইভার্ট সুগার, মল্ট সুগার এবং মোলাসেস- এ সবকিছুর অর্থই কিছু চিনি। এ বিষয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা দরকার। অনেকে চিনির বিষয়ে সচেতন। তাদের ধোঁকা দিতেই অন্য নাম ব্যবহার করা হয়।
৫. কাঁচ খান: টমেটো সস না খেয়ে এমনি টমেটো খান। সালাদ ড্রেসিং না ব্যবহার করে শুধু সালাদ খেতে পারেন। সকালের নাস্তার সিরিয়ালও নিশ্চিন্তে খেতে পারেন না আপনি। এসব কিছুতে রয়েছে লুকানো চিনি। এক গবেষণায় বলা হয়, সুপারমার্কেটের ৭৪ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটকৃত খাবারে রয়েছে চিনি। সবজি বা অন্যান্য খাবারকে প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়ার দরকার নেই। এগুলো বাজার থেকে কিনে রান্না করে খাওয়াই ভালো। তাহলে বাড়তি চিনির হাত থেকে বাঁচা যাবে।
৬. স্বাস্থ্যকর নয়, অস্বাস্থ্যকর: ন্যাচারাল বা স্বাস্থ্যকর কথায় ভুগবেন না। এসব শব্দের ব্যবহারে খাবারকে স্বাস্থ্যকর বলে উপস্থাপনা করা হয়। এমনকি যেসব খাবার চিনিতে পূর্ণ থাকে, তাদেরকেও স্বাস্থ্যকর বলে উপস্থাপন করা হয়। এসব শব্দের প্রতি মানুষের আচ্ছন্নতা রয়েছে।
৭. মাঝে মাঝে ঠিক আছে: তার মানে এই নয় যে, এসব খাবার মুখে তোলা যাবে না। মাঝে মাঝে খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু খুবই কম। চিনি খাওয়া কোনো নিষিদ্ধ বিষয় নয়। এক পিস কেক বা একটি চকোলেট খাওয়া যায়। কিন্তু সব সময় এসব খাবারে আসক্ত থাকলেই বিপদ।
সূত্র: হাফিংটন পোস্ট
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.