নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় নির্বাচনী ব্যবস্থার জন্য ইতিবাচক দিক। নির্বাচনী ব্যবস্থার উপরে মানুষের যে আস্থা উঠে গেছে তা কিছুটা হলেও ফিরে আসবে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। এ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পেছনে সরকারের সদিচ্ছা, নির্বাচন কমিশনের ইমেজ ফিরে পাওয়ার শেষ চেষ্টা এবং নির্বাচনে বিএনপির শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ এই তিনটি কারণকে উল্লেখ করছেন তারা। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন- নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ভালো হয়েছে। সকলের সহযোগিতায় নির্বাচন কমিশন একটি ভালো নির্বাচন করতে পেরেছে। এখানে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাও অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। বিএনপির প্রার্থী ভোট বর্জন না করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করেছে। গতবার নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে যে চ্যালেঞ্জগুলো ছিল সেগুলো এবার নির্বাচনে অনুপস্থিত ছিল। সব মিলিয়ে নির্বাচন ভালো হয়েছে। তবে একটা বড় প্রশ্ন থেকে যায় নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচন যদি ভালো করতে পারে তবে কেন বাকি নির্বাচনগুলো ভালো করতে পারলো না? নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন একটি ছোট্ট পরিসরের নির্বাচন। প্রায় পাঁচ লাখ ভোটার এখানে। তারপরও এই নির্বাচন একটি উদাহরণ হতে পারে। এই নির্বাচন ভালো হলে আগামী নির্বাচনগুলো কেন ভালো হবে না? মানুষ ভোট দিতে চায় এটার প্রমাণ হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন। গত কয়েক বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এভাবে যদি পরবর্তী নির্বাচনে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারে তাহলে এই নির্বাচন হবে পথপ্রদর্শক। অতীতে আমরা যেভাবে নির্বাচন বর্জন করতে দেখেছি বিএনপিকে এবার আমরা সেটা দেখিনি। এটা অবশ্যই রাজনীতির জন্য একটা ইতিবাচক দিক। ফলাফল মেনে নেয়ার সংস্কৃতি চালু হলে সেটা হবে রাজনীতির জন্য সবচেয়ে ইতিবাচক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন খান বলেন- এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী যারা ছিলেন তারা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করেন না। নাসিক নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়ার এটি একটি বড় কারণ। আগের নির্বাচন নিয়ে সরকারের এবং নির্বাচন কমিশনের যে দুর্নাম ছিল তা কিছুটা ঘোচাতে হলেও এ নির্বাচন নিয়ে সরকার তৎপর ছিল। এবং নির্বাচন কমিশনও সেভাবে কাজ করেছে। কাজেই নির্বাচন ভালো হয়েছে। বিএনপিও বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ যত বাড়বে ততই নির্বাচন ভালো হবে। শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের একারপক্ষে নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব নয়। সরকার, প্রশাসন ও সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় একটি নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে এটার বড় উদাহরণ এই নাসিক নির্বাচন। ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী শারমীন মোর্শীদ বলেন- নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল বিগত নির্বাচনগুলোর চেয়ে ব্যতিক্রম। আমরা আগের নির্বাচনগুলোতে যা দেখেছি তার কোনোটির উপস্থিতি ছিল না এ নির্বাচনে। আগের নির্বাচনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেনি। আমরা পুলিশকে দেখেছি জালভোট দিতে। ক্ষমতাসীনদের দেখেছি কেন্দ্র দখল করতে। তারপরও নির্বাচন কমিশন শিথিল ছিল। কিন্তু এবার নির্বাচনে এরকম ঘটনা ঘটেনি। কেন এ নির্বাচনটি ব্যতিক্রম হলো? আমি মনে করি বর্তমান সরকারের অধীনে একটি ভালো নির্বাচন হতে পারে- এই মুহূর্তে সরকারের এটি দেখানো খুব প্রয়োজন। কারণ আগের নির্বাচনগুলো খুব সমালোচিত হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনের যেহেতু এটাই শেষ বড় নির্বাচন। তাই তারাও জোরালোভাবে নিজেদের প্রমাণ করতে চেয়েছে। আর বিএনপিও এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। কারণ নির্বাচনের বাইরে থাকতে থাকতে তারা সাংগঠনিকভাবে ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছে। তারাও নির্বাচন বর্জন না করে প্রমাণ করতে চেয়েছে আমরা নির্বাচন ব্যবস্থাকে শ্রদ্ধা করি। এসব কারণেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.