‘আমার মেয়ে মিতুর খুনের সঙ্গে বাবুলের যদি কোনো সম্পৃক্ততা থাকে তাহলে অবশ্যই তা তদন্ত করা হোক। শুধু বাবুল নয়, অন্য কেউ যদি জড়িত থাকে তাও তদন্ত করে দেখা হোক। কিন্তু আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’ ঠিক এভাবেই গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের লালদীঘিতে মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে কথাগুলো বলছিলেন পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। যিনি দেশজুড়ে আলোচিত চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে নিহত সেই মিতুর পিতা। অর্থাৎ বাবুল আকতারের শ্বশুর। গতকাল মামলার সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন মিতুর বাবা। তিনি আরো বলেন, ‘মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তদন্তে অগ্রগতি আছে। তবে মুছা আর কালুকে গ্রেপ্তার করা হলে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে। এই দুই আসামিকে ধরার ব্যাপারে তৎপর হওয়ার জন্য বলেছি।’ আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু খুনের সঙ্গে তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের সম্পৃক্ততার প্রশ্নে শ্বশুর মোশাররফ হোসেন গতকাল এসব কথা বলেন। সকাল ১০টায় লালদীঘির পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে আসেন পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। মেয়ের খুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। প্রায় তিন ঘণ্টার ‘জিজ্ঞাসাবাদে’ তদন্তের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর পেয়েছের বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে তদন্ত কর্মকর্তার কক্ষে ঢোকেন মোশাররফ হোসেন। কালো কোট, সাদা শার্ট, জলপাই রংয়ের প্যান্ট এবং সাদা টুপি পরিহিত অবস্থায় মোশাররফ হোসেনকে এই সময় গম্ভীর ও বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের কক্ষে ঢোকার পর কিছুক্ষণ সময় ধরে সংবাদকর্মীরা চিত্রধারণ করতে থাকে। এরপর কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বেলা পৌনে দুইটার দিকে বের হয়ে আসেন মিতুর বাবা। গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ের নিচে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মিতু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলতে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে ডেকেছিলেন। এই সময় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুলের সম্পৃক্ততার প্রশ্ন উঠে আসলে আমি বলেছি-খুনের সঙ্গে বাবুলের যদি কোনো সম্পৃক্ততা থাকে তাহলে অবশ্যই তা তদন্ত করা হোক। এ বিষয়ে আপনাদের কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা তদন্ত করে দেখুন। তবে শুধু বাবুল নয় অন্য কেউও যদি জড়িত থাকে তাও তদন্ত করে দেখা হোক।’ মিতুর বাবা বলেন, ‘বাবুলকে সন্দেহ করি না। খুনের সঙ্গে জড়িত কেউই যেন তদন্তে বাদ না পড়ে- এমন দাবি জানিয়েছি। শুধু বাবুল কেন, আমারও যদি কোনো সম্পৃক্ততা থাকে তাও তদন্তে আনা উচিত।’ মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, ‘এই খুনের মোটিভ কী তা জানার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছি। এই খুনের সঙ্গে জড়িতরা ছাড়াও খুনে সহায়তাকারীদেরও খুঁজে বের করার জন্য বলেছি।’ বাবুলের চাকরি থেকে অব্যাহতির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বাবুল কেন চাকরি ছাড়লো এটা সেই-ই ভালো বলতে পারবে।’ এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘মিতু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছু তথ্য জানার জন্য মিতুর বাবা ও বাবুল আকতারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ওনার দিক থেকে বিষয়টা আমরা জেনেছি। তথ্যগুলো আমলে নিয়ে তদন্ত করা হবে।’ এছাড়া, বাবুল আকতারের বক্তব্য এবং মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে মিতুর বাবাকে অনেক প্রশ্ন করা হয়েছে। তার উত্তর থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্যও পাওয়া গেছে।’ তবে খুনের সঙ্গে জড়িত একাধিক আসামিকে ধরতে অভিযান চলছে বলে জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। চলতি বছরের গত ৫ই জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর ও আর নিজাম রোডে দুর্বৃত্তদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন সদর দপ্তরে কর্মরত তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম ?মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আকতার নিজে বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.