নওগাঁ: বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ না থাকায় নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিল উথরাইলের ১০ হাজার হেক্টর জমিতে চলছে মান্ধাতার আমলের সেচ পদ্ধতি ‘দোন’।
এতে তিন ফসলের পরিবর্তে এক ফসল আবাদে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলে শুধু বোরো মৌসুমেই প্রায় ৪ লাখ মণ অতিরিক্ত ধান উৎপাদন করা সম্ভব হত। একইসাথে প্রচুর পরিমাণে সরিষা উৎপাদনও সম্ভব হত। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে সেচ যন্ত্র চালু করতে না পারায় বিলে এক ফসল আবাদে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।
সূত্র জানায়, জেলার মান্দা উপজেলার ভারসো ইউনিয়নের ছয়টি বিল নিয়ে বিল উথরাইল। এগুলো হলো-বিল উথরাইল, বিল মহানগর, বিল কালিসভা, বিল সিদ্ধেশ্বরী, বিল মানকি ও বিল রাজেন্দ্রবাটি। এখানে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি, যা স্থানীয় হিসাবে ৭৫ হাজার বিঘা। এ বিলের ওপর নির্ভরশীল আশপাশের ৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকা ।
সূত্র আরও জানায়, বিলে বিদ্যুৎ চালিত সেচ যন্ত্র কিংবা গভীর নলকূল না থাকায় পুরনো ‘দোন’ পদ্ধতির মাধ্যমে সেচ দিয়ে বোরো আবাদ করা হয়। এ পদ্ধতিতে চার পাঁচ ধাপে বিল থেকে পানি এনে নিজ নিজ জমিতে সেচ দিতে হয়, যা খুবই দুঃসাধ্য ও কষ্টকর। এর ফলে উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি প্রতি বছর অনেক জমি অনাবাদি থেকে যায়। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন এলাকার কৃষকরা, পাশাপাশি বঞ্চিত হয় কৃষি অর্থনীতি।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল মান্নান ও ইমরান আলী জানান, “দোন পদ্ধতিতে যতক্ষণ বিলে পানি থাকে, ততক্ষণ নালা কেটে চার পাঁচ ধাপে পানি এনে প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদন করতে কেবল সেচ খরচ করতে হয় সাড়ে ৪ হাজার টাকা।”
কৃষক আব্দুস সালাম ও ইব্রাহিম হোসেন বলেন, “বীজ, জমি তৈরি, পরিচর্যা, মাড়াই খরচ বাদ দিলে কৃষকের কোনো লাভ থাকে না। এতোকিছুর পরও প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদন হয় ১৮-২০ মণ। অথচ গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিতে পারলে প্রতি বিঘায় সেচ বাবদ খরচ হবে ৫০০-৬০০ টাকা। পাশাপাশি ধান উৎপাদন হবে ২৫-২৭ মণ।”
তারা আরও জানান, “বিলের পুরো জমি চাষের আওতায় আনা হলে বছরে বিলে ১৫ লাখ মণ অতিরিক্ত খাদ্য শস্য উৎপাদন হবে। রবি মৌসুমেও এসব জমিতে সরিষা চাষ করে কৃষকরা বাড়তি টাকা উপার্জন করতে পারেন।”
এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক জমিই বিল উথরাইলের। কাজেই ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে জেলার মান্দা উপজেলার বিশেষ অবদান রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,“বৈদ্যুতিক মোটর কিংবা গভীর নলকূপের মাধ্যমে এ বিলের জমি সেচ সুবিধায় আনা গেলে ফসল উৎপাদনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এতে উৎপাদন খরচও অনেক কমে যাবে। লাভবান হবেন কৃষক। একই সঙ্গে রবি মৌসুমে বিলে প্রচুর পরিমাণে সরিষা উৎপাদন হবে।”
বিল উথরাইলে সেচ সুবিধার জন্য গভীর নলকূপ স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২৯ মার্চ পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.