প্রায় চার বছর ধরেই জাতীয় অ্যাথলেটিকসে একটি দৃশ্য নিয়মিত। ১০০ মিটার স্প্রিন্ট শেষে সবার মনোযোগের কেন্দ্রে মেসবাহ আহমেদ। কাল ৪০তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসের প্রথম দিনেও সেই মেসবাহর ওপরই সব আলো। দেশের দ্রুততম মানবের আসনটা ধরে রাখতে পেরেছেন নৌবাহিনীর অ্যাথলেট। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে এটি তাঁর টানা পঞ্চম শিরোপা। তিনটি জাতীয় প্রতিযোগিতা, একটি বাংলাদেশ গেমস ও একটি সামার অ্যাথলেটিকসে। ২০১৩ এপ্রিলে বাংলাদেশ গেমস দিয়ে মেসবাহ-রাজ শুরু। গত দুটি ১০০ মিটার সহজে জিতলেও কাল অবশ্য একটু প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়েছিলেন। সেটিও এসেছিল তাঁর নৌবাহিনীর সতীর্থ এম এ রউফের কাছ থেকে। তবে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখলেও মেসবাহর টাইমিংয়ে উন্নতি হয়নি। চার মাস আগে ব্রাজিল অলিম্পিকে ১০০ মিটারে ইলেকট্রনিক বোর্ডে সময় নিয়েছিলেন ১১.৩৪ সেকেন্ড। কাল হাতঘড়িতে ১০.৬৩। হাতঘড়িতে গত জাতীয় প্রতিযোগিতায় তাঁর টাইমিং ১০.৬০। ইলেকট্রনিক বোর্ডে বাংলাদেশের রেকর্ড টাইমিং প্রয়াত মাহবুব আলমের, ১৯৯৯ সালে ১০.৫৪। ১৯৯১ সালে হাতঘড়িতে রেকর্ড গড়েন গোলাম আম্বিয়া, ১০.৪। টাইমিং ভালো না হওয়ার পেছনে মেসবাহর যুক্তি, ‘আমার পারফরম্যান্স খারাপ হয়নি। তবে আমরা দীর্ঘ মেয়াদে অনুশীলন পাই না বলে টাইমিং এক জায়গাতেই আছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘এসএ গেমসে পদকজয়ীরা অস্ট্রেলিয়া-যুক্তরাষ্ট্রে দুই বছর অনুশীলন করেছে। আমরা তো এমন সুযোগ পাই না।’ এবার দ্বিতীয় হওয়া রউফ ১০.৭০ সেকেন্ড সময় নিয়ে চাপে ফেলেন মেসবাহকে। উসাইন বোল্টের মতো শেষটা করে সেই চাপ কাটিয়েছেন মেসবাহ, ‘শেষ দিকে গতি বাড়িয়ে বোল্ট দারুণভাবে ফিনিশিং পয়েন্টে যান, তাঁর মতো আমিও আজ চেষ্টা করেছি সবার আগে দৌড় শেষ করতে।’ জাতীয় অ্যাথলেটিকসে এত দিন দ্রুততম মানব-মানবী একই দিনে পাওয়া যেত। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম, ছেলেদের ১০০ মিটার করা হয়েছে প্রথম দিনেই। মেয়েদের ১০০ মিটার আজ। এই ১০০ মিটারই যা একটু আকর্ষণ, এ ছাড়া জাতীয় অ্যাথলেটিকস আগের চেয়েও রুগ্ন। অ্যাথলেটদের পারফরম্যান্স যা-ই হোক, অন্যবার তবু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মোটামুটি গমগম করত। কিন্তু এবার প্রথম দিনে সেটা দেখা যায়নি। অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন প্রায় ছয় শ অ্যাথলেট আসবে বললেও বাস্তবে এর অর্ধেকও এসেছে কি না সন্দেহ। নোয়াখালীর কোচ রফিক উল্লাহ মিলন বেশ অবাক, ‘এবার প্রস্তুতি নিতে না পারায় অ্যাথলেট কম এসেছে মনে হচ্ছে।’ এ জন্য ফেডারেশনের ব্যর্থতাকেই দুষছেন সবাই। মেয়েদের হার্ডলসে প্রতিযোগী ছিলেন মাত্র চারজন। ছেলেদের বিভাগে আটজন হওয়ায় বাছাইয়ের দরকার পড়েনি। মেয়েদের হার্ডলসে সেরা হয়েছেন নোয়াখালীর জেসমিন আক্তার। টাইমিং ভালো হয়নি—১৪.৮০। এই ইভেন্টে রেকর্ড ১৩.৮০, রেকর্ডধারী সুমিতা দাস এবার খেলেননি। প্রথম দিনের ১২টি ইভেন্টে কোনো রেকর্ড হয়নি। তবে একটি ইভেন্টে গত ২০ বছরের মধ্যে ভালো টাইমিং হয়েছে। ১৫০০ মিটার দৌড়ে ১৪.২১ সেকেন্ড (আগের সেরা ৩.৫০ সে.) সময় নিয়ে প্রথম হওয়া বর্ডার গার্ডের খন্দকার কিবরিয়ার নাম ছিল সবার মুখে মুখে। এ ছাড়া প্রথম দিনে সোনা জিতেছেন ২০ কিলোমিটার হাঁটায় সেনাবাহিনীর মোহাম্মদ রাজু, মেয়েদের ১৫০০ মিটার দৌড়ে একই দলের সুমী আক্তার, ছেলেদের হার্ডলসে সেনাবাহিনীর মজিবর রহমান।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.