প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনায় করা মামলায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাত কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে সিটিটিসি।
সিটিটিসি গত বুধবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে মামলার এজাহারভুক্ত নয় আসামির মধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন বিমানের প্রধান প্রকৌশলী (প্রোডাকশন) দেবেশ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী (কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স) এস এ সিদ্দিক, মুখ্য প্রকৌশলী (মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড সিস্টেম কন্ট্রোল) বিল্লাল হোসেন, চার প্রকৌশল কর্মকর্তা সামিউল হক, লুৎফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস ও জাকির হোসাইন।
বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনায় নয়জনকে আসামি করে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে বিমানবন্দর থানায় এ মামলা করা হয়। বুধবার বিকেলে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় সিটিটিসিকে। এজাহারভুক্ত এই নয় কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
গতকাল বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম (সিটি) বিভাগের পরিদর্শক মাহবুবুল আলম সাত কর্মকর্তাকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে পাঠান। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তী আসামিপক্ষের আবেদন নাকচ করেন এবং সাতজনকে সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
আদালতে দেওয়া রিমান্ড প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা বাংলাদেশ বিমানের প্রকৌশল বিভাগের বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। গত ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর হাঙ্গেরি সফরের বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা। ২৭ নভেম্বর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর বৈমানিক লক্ষ করেন, ইঞ্জিনের তেল কমে যাচ্ছে। বিমানে কর্মরত প্রকৌশলী দেখতে পান, ইঞ্জিনের নাট ঢিলা হয়ে গেছে। পরে বিমানটি তুর্কমিনিস্তানে জরুরি অবতরণ করে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, এটা ‘মানবসৃষ্ট’। এটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলা বা অদক্ষতা, নাকি নাশকতার চেষ্টা ছিল, তা খতিয়ে দেখার জন্য ফৌজদারি মামলা করার সুপারিশ করে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। গত সোমবার তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এ ঘটনায় ফৌজদারি মামলা করার ব্যাপারে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিমানের প্রকৌশল শাখাসহ প্রতিটি স্তরে অদক্ষতা ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসামিদের পরস্পর যোগসাজশে ষড়যন্ত্র ও যন্ত্রপাতি দ্বারা অন্তর্ঘাতমূলক অপরাধ ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষতি করার উদ্দেশ্য ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
‘অন্য কারও যোগসাজশ আছে কি না, বের করার চেষ্টা করা হবে’: গতকাল মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, কী কারণে যান্ত্রিক ত্রুটি হলো বা তাঁদের উদ্দেশ্য কী ছিল, রিমান্ডে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ওই ঘটনায় এজাহারভুক্ত নয়জন ছাড়া অন্য কারও যোগসাজশ আছে কি না, তা বের করার চেষ্টা করা হবে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, এই নয়জনের বাইরে আর কারও কোনো ভূমিকা আছে কি না, এটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ কি না, তা গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত করে বের করবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, যে দুই কর্মকর্তা আত্মসমর্পণ করেছেন, তাঁদেরও রিমান্ডে নেওয়া হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.