ঢাকা খুবই বাস্ত্যময় শহর । এখানে গরম বা ঠাণ্ডা কোনটাই বুঝার কোনো উপায় নেই। তাই ঠাণ্ডা উপভোগ করার জন্য চলে গেলাম চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানায়। গ্রামের নাম খন্দকার কান্দি আর বাড়ির নাম সারকার বাড়ি। খুব সুন্দর একটি গ্রাম। গ্রামের বাড়ি গুলো সব টিনের তৈরি। মাঝে মাঝে একতলা বাড়ি ও দেখা যায়। গ্রামের মানুষ গুলো অনেক সহজ সরল।কেমন জানি সবাইকে অনেক তাড়াতাড়ি আপন করে নেয়।
৬ তারিখ শক্রবার দুপুর ২ টা, আমি আর সুমা আপু ঢাকা থেকে মতলবের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ঢাকার ভাইরে যতই যাচ্ছি অল্প অল্প করে ঠাণ্ডা বাড়তে থাকে। হঠাৎ কেমন যেন খোলা আকাশ আর চারপাশের পরিবেশ দেখে ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দিল।শহরের চার দেয়ালের মধ্য থেকে যেন বের হয়ে আসলাম একটা অন্য পৃথিবীতে।গাড়ি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পেছনে ফেলে যাচ্ছি বাস্ত্যময় শহর।
আমরা ঠিক ৪ টা ৪০ মিনিটে সরকার বাড়ি পৌঁছাইলাম। পৌঁছানোর সাথে সাথেই হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিল । আর টেবিল এ বসেত আমি বুঝতেই পারছিলাম না কোনটা রেখে কোনটা খাব। কি নেই? দেশি মুরগি ভুনা, দেশি মাছ, ডিম, গরুর মাংস, দেশি হাঁসের মাংস, পলাও,নতুন চালের ভাত আরও কত কি।
খাওয়ার পর্ব শেষ করে বাইরে বের হলাম।গ্রামটা দেখার জন্য। আসে পাশে বেশির ভাগ বাড়িতে কারেন্ট নাই। কুপির অল্প আলোতে বাড়ির ভিতরের পরিবেশ টা অনেক সুন্দর লাগে। আমরা মাঠের মাঝখানের ভিতরের একটা রাস্তা ধরে হাটতেছিলাম।দুই পাশে অনেক খেজুরের গাছের সারি ।সারি সারি গাছে মানুষ গুলো মাটির হাড়ি লাগাচ্ছিল। চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসতেছিল।
আমরা একজনকে ডেকে তার থেকে রস কিনে খেলাম। মাত্র ২০ টাক দিয়ে অনেক রস পেলাম। লোকটা ২০ টাকা পায়ে অনেক খুশি।
রাতে সাইকেল এ করে অনেকক্ষন ঘুরার পরে একটা ছোট চায়ের দোকানে বসে চা খাই। এক কাপ চা মাত্র ২ টাকা। সাথে ১ টাকার বিস্কিট। আকাশে চাঁদের আলোতে রাস্তা ঘাট সব পরিস্কার দেখা যাচ্ছিল। এখানে প্রতিদিন রাতে বসে গ্রামের গরিব মানুষ গুলো তাদের সুখ দুঃখের কথা বলে আর চা খায়। পাশের বাসা থেকে ছোট বাচ্চার কান্না শুনা যায়। গল্প করার মধ্যে একজন ২ টাকার একটা চকলেট নিয়ে বাসার দিকে এগোয়। তাদের বাচ্চা গুলো এই চকলেট পেয়ে ই অনেক খুশি।
রাতে বাসায় ফিরে আবারও খাওয়া দাওয়া শেষ করে গল্প করতে বসলাম। আসরের প্রদান খাবার ছিল ঝাল মুড়ি। গল্পে গল্পে অনেক রাত হয়ে যায়। আস্তে আস্তে সব গুলো বাসার আলো নিভে যায়। মনে হয় একটা গুমের রাজ্যে চলে আসছি। শহরের রাত ১২ টা বা ১ টায় ও মনে হয় না রাত হয়েছে। কিন্তু গ্রামে রাত ১০ টা মানে ই অনেক রাত।গল্প শেষে যে যার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। রাতে টিনের চালের শিশিরের টোপ টাপ শব্দে মনে হয় মায়ের কলে শুয়ে কোন রুপকথার গল্প শুনছি।
ভোর ৫ টা। মোরগের ডাক শুনে ঘুম ভাঙ্গে। বাইরে তখন ভোরের আলো ফোটে নাই। আজকেই ঢাকা ফিরতে হবে। বাইরে বের হয়ে দেখি আন্টি গরম গরম ভাপা পিঠা বানাচ্ছে। অমনি একটা মোড়া নিয়ে চুলার পাশে বসে পড়লাম। গরম গরম পিঠা খেতে অনেক বেশি মজা। তাও খেজূরের গুড় দিয়ে বানানো।
একটু পরে ই গাড়ি চলে আসছে। এখন বিদায় নেওয়ার পালা। ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। চারপাশে এত বেশি কুয়াশা যে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ছোট একটা ব্রীজ।কিন্তু কুয়শার জন্য এপার ওপার কিছুই দেখা যাচ্ছিলনা। লোকে বলে এই ব্রীজ এ প্রতি বছর অনেক লোক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। কুয়াশার জন্য কিছু দেখা যায় না তাই।
আন্টি সকালের নাস্তার জন্য কিছু পিঠা আর মিষ্টি দিয়ে দিয়েছেন। আমরা অটো করে বাস স্ট্যান্ড আসলাম। মানুষ গুলো সবাই ঠাণ্ডায় কাপতে কাপতে হাড়ি করে খেজুরের রস নিয়ে হাটের উদ্দ্যেশে রওনা হয়েছে। কেঊ কেঊ মোরগের ডিম ঝুড়ি ভরে নিয়ে যাচ্ছে।
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি কারো কারো গায়ে ঠাণ্ডার কাপড় নেই। ওরা ছুটতেছে ওদের জীবীকার জন্য। ঠাণ্ডা বা গরম তদের কাছে কিছুই না।
বাস দাড়িয়ে ছিল। টিকেট কিনলাম। দাঊদকান্দী টু গুলিস্তান। ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বাস এ উঠলাম।
বাস এ উঠেই আন্টির দেওয়া পিঠা আর মিষ্টি খেলাম।
কেন জানি এক দিনের এই ভ্রমণ টাকে আরও বেশীক্ষণ ধরে রাখতে ইচ্ছে করছিল। হয়তো সেই গ্রামের মানুষ গুলোর প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা তৈরী হয়ে গিয়েছিল। যা ছেড়ে আসতে মন চাচ্ছিল না। হতে পারে এটা গ্রাম, কিন্তু আমার লাইফে স্মরনীয় ভ্রমন হয়ে থাকরে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.