নতুন কাঠ ও বাঁশের গন্ধ। হাতুড়ি পেটানোর শব্দ চারদিকে। তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট নতুন ঘর। পুরোনো সংসার নতুন করে গড়ে উঠছে। রাজধানীর কড়াইল বস্তির বউবাজারে শত শত ঘর পুড়ে যাওয়ার পর এখন সেখানে ঘর, দোকান তোলা হচ্ছে। ৪ ডিসেম্বর বনানীর কড়াইল বস্তির বউবাজার অংশে আগুন লাগে। এতে প্রায় পাঁচ শর ওপরে দোকান ও ঘর পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক হাজার মানুষ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বউবাজারে দেখা যায়, কাঠ, বাঁশ ও টিনের সারি। অনেক ঘরেরই কাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে। তবে নতুন ঘরে বসবাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন। পরীবানুর ঘরে এখন টিন দেওয়া বাকি। তিনি বলেন, ব্র্যাক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মিলে তাঁদের ঘর তোলার জন্য টিন, কাঠ, বাঁশসহ আরও কিছু জিনিস দিয়েছে। এ ছাড়া ১৩ হাজার টাকাও পেয়েছেন। আরও কয়েকজন বললেন, পুড়ে যাওয়ার পরপরই ব্র্যাক তাঁদের তালিকা করে কার্ড দেয়। সে অনুযায়ী এখন তাঁরা সাহায্য পাচ্ছেন। শুরুর দিকে বাসন-কোসন, কাপড় ও খাবার পেয়েছিলেন। এখন ঘর তুলে দেওয়া হচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে কোনো রকম তাঁবু বানিয়ে এই শীতের মধ্যেই নাসিমা আকতার তিন মাসের বাচ্চা নিয়ে মাটিতে বিছানা করে শুয়ে আছেন। পাশে খাচ্ছিলেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। কাপড়, পলিথিন দিয়ে বেড়া বানিয়েছেন। এভাবেই আছেন ২০ দিন ধরে। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাডার ঠান্ডা লাইগা গেছে। সবই তো শেষ। নতুন কইরা আবার সংসার শুরু করতে অইব।’ পুড়ে যাওয়া দোকানটির চালা এখনো লাগানো হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে কোনো রকমে দোকানটি দাঁড় করানো হয়েছে। তার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে মিষ্টি। ভেতরে খাবার হোটেল। পাশেই মো. আলিমের মুদি দোকান। তিনি বলেন, ‘আমার খালি চাল পুড়ছে। কিন্তু বস্তির যেই অবস্থা আবার আগুন লাগলে আবারও সব পুড়ব।’ ব্র্যাকের আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের ঢাকা অঞ্চলের সমন্বয়ক চৌধুরী মোহাম্মদ ফাহিম রাজীব প্রথম অলোকে বলেন, ৫৩৪টি পরিবারকে তাঁরা ঘর তুলে দিচ্ছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে যৌথভাবে কাজটি করছেন। প্রিমিয়ার ব্যাংকও কিছু টিন দিয়েছে। পরিবারপ্রতি টাকা দেওয়ার ব্যাপারে বললেন, ইউএনডিপি এ টাকা দিচ্ছে ব্র্যাকের মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, ৮৪ জন বাড়িওয়ালার অধীনে ৫৩৪টি পরিবার থাকে। এখন পর্যন্ত তাঁদের হিসাব অনুযায়ী একেকটি ঘর তুলতে তাঁদের ৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আর পরিবারগুলোকে ভাড়া দিতে হয় প্রায় ২ হাজার টাকা। তাই তাঁরা বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে যাচ্ছেন, যাতে ভাড়াটেরা ভাড়া অনুযায়ী এই ৩০ হাজার টাকার হিসাব করে কিছুদিন বিনা মূল্যে থাকতে পারেন। এ ছাড়া ব্র্যাকের তত্ত্বাবধানে পুড়ে যাওয়া এলাকার একটি ম্যাপ করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা রেখে যেন স্থাপনা হয়, যাতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এই এলাকাটি ডিএনসিসির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। এই এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমান বলেন, ব্র্যাকের সঙ্গে মিলে তাঁরা সাহায্য করছেন। এক সপ্তাহের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ঘরে ফিরতে পারবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.